বিএনপির গোপন চিঠি সংসদে ফাঁস করলেন মন্ত্রী!

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারি জাপানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সিনজো আবেকে একটা চিঠি লিখেছিলেন। এসব চিঠি লিখে তারা নিজেদের অবস্থান আরো খাটো করছেন। আমি নিশ্চিত বিএনপি কালকে প্রেস কনফারেন্স করে বলবে এ চিঠি সত্য নয়, তারা লেখেনি। ঠিক যেমন ওয়াশিংটন টাইমসে খালেদা জিয়া একটা লেখা লিখেছিলেন। সেখানে তিনি বাংলাদেশের ওপর স্যাংশন দেবার জন্য, জিএসপি বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। খবর ভোরের কাগজ।

গতকাল মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনায় তিনি এসব তথ্য জানান। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, জাপানের প্রধানমন্ত্রীর চিঠিতে বিএনপি বলেছে ‘বিএনপি ইজ দ্যা লার্জেস্ট পলিটিক্যাল পার্টি অব বাংলাদেশ’। বিএনপির মহাসচিব দাবি করেছেন তারাই নাকি দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল। কিন্তু জাপানের তো চোখ , কান, মাথা আছে নাকি! তাদের একজন রাষ্ট্রদূত এখানে আছে, তিনি তো জানেন দেশের বৃহত্তম ও পুরাতন রাজনৈতিক দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ।

তারা লিখেছে ১৯৮১ সালে একটি মিলিটারী চেকওভারের মাধ্যমে দেশের পপুলার লিডার রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। কিন্তু তারা বলেনি যে, আরেকটা মিলিটারী ক্যুর মধ্য দিয়ে তিনি যে ক্ষমতায় এসেছিলেন। আবার ২০০৮ এর নির্বাচন নিয়ে তারা বলেছে, এ নির্বাচন কনসপাইরেসি করে বিএনপিকে হারানো হয়। অথচ ১৯৭০ এর পরে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে যে গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়েছিল তারা সেটাকে অস্বীকার করে, অথচ এই নির্বাচনে বিপুলভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাধীনতার সপক্ষের…শক্তি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।  অন্য দলগুলো ৩০টির মতো আসন পায়। তারা এ চিঠিতে বলেছে খালেদা জিয়া নাকি দেশে নারীর শিক্ষায় গণজোয়ার সৃষ্টি করেছে। এসব শুনে হাসি পায়। তাদের কেন্দ্রীয় কমিটির লোকজন বলেন ১০ ডিসেম্বর থেকে নাকি দেশ খালেদা জিয়ার কথায় পরিচালিত হবে। সব ভুল তো তারা সেখানে করে ফেলেছিল।

শাহরিয়ার আলম বলেন, আমি যদি পায়ের চেয়ে বড় জুতা পরি তাহলে হোঁচট খাবো। ঠিক তাই হয়েছে। ১০ ডিসেম্বর তারিখটা বিএনপি বেছে নিয়েছিল কারণ ২০২১ এর ১০ ডিসেম্বরে ভুল ও ভ্রান্ত তথ্যের প্ররোচণায় পড়ে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বাংলাদেশের অন্যতম সফল একটি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। গত এক বছরে ১৫-২০টি বৈঠক করেছি। এর আগে কিছুটা গ্যাপ হয়েছিল, করোনা ছিল। ১০ ডিসেম্বর জনসভা দিয়ে তারা ভেবেছিল তারা আরো কিছু স্যংশন আদায় করে নিতে পারবে। তাদের সে ষড়যন্ত্র মাঠে মারা গেছে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, মাদকের বিরুদ্ধে, হলি আটিজেন ঘটনার পরে এত সফলতা দেখিয়েছে বিশ্বে অনেক দেশে তা দেখা যায় না। গত সপ্তাহে পাকিস্তান, আফগানিস্তানে, ফ্রান্সে, আমেরিকায়, জার্মানিতে কি কি ঘটছে। এমনকি যুক্তরাজ্যে সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ অনেক ভালো অবস্থানে। তাই বিএনপির ১০ ডিসেম্বরের পরিকল্পনা মাঠে মারা গেছে, পরে কে কোথায় লুকাবেন সে পরিকল্পনাতেই তারা ছিলেন। এ সময় প্রতিমন্ত্রী ২০১৪ সালে বিএনপি কর্তৃক বাস ট্রেন পোড়ানোর বিষয়টি উল্লেখ করেন।

শাহরিয়ার আলম বলেন, জাতি গঠনে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত করতে যে পরিকল্পনাটি করা হয়েছিল ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের আগে- তাকে বলা হয়- ডিজিটাল বাংলাদেশ। যে নির্বাচনের ইস্তেহারে ছিল ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত হবে…। ঠিক তাই হয়েছে। বলে কয়ে এভাবে কোন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন খুব কম দেশই করতে পেরেছে। তিনি আন্তর্জাতিক মানচিত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়েছেন। এর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আজ বিশ্বে নন্দিত নেত্রী, তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়। তিনি বিভিন্ন অর্থনৈতিক জোটের বৈঠকে আমন্ত্রণ পান। আইএমএফ আমাদের ঋণ দিয়েছে। আমরা এটা নিয়েছি ভবিষ্যতে যাতে সমস্যা না হয়। ২০৪১ সালে আমরা শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বো ইনশাল্লাহ। সাবেক মন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, আন্তর্জাতিক বিশ্বে প্রধানমন্ত্রী সুনামের যে আসন গেড়েছেন তা বিস্ময়। মর্যাদার আসনে বাংলাদেশকে তিনি নিয়ে গেছেন। সে জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, জাতীর পিতা যখন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন ১৯৭৫ এ জিয়া মোস্তাক ষড়যন্ত্র করে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। জিয়া ক্ষমতায় এসে খুনিদের ইনডেমনিটি দিয়ে খালাস করে দেয়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে দেশে বিভীষিকাময় অবস্থা দেখেছি। সে সময় হিন্দুদের ওপর নির্যাতন, গণধর্ষণ , লুটপাট, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিবরিয়া, আহসানউল্লাহ মাস্টারসহ আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের খুন হতে দেখেছি।

কামরুল ইসলাম ১/১১ এর কুশিলবদের কথা প্রসঙ্গে বলেন, তার পরে ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নামে আমরা দেখলাম তিন মাসের তত্বাবধায়ক সরকার দুই বছর প্রলম্বিত হলো। ড. কামাল হোসেনসহ ১/১১ কুশিলবরা অনেকেই তত্বাবধায়ক সরকার দু বছর প্রলম্বিত হতে পারে বলে ফতুয়া জারি করেন। তারা এ সময় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারসহ নির্যাতন করতে থাকে। তত্বাবধায়ক সরকার নামে কঠিন অবস্থা আমরা দেখেছি। অনির্বাচিত সরকার কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা আমরা সে সময় দেখেছি।

সেই তত্বাবধায়ক সরকার খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানকে এমন নির্যাতন করে তাকে দেশ ছাড়া করে বিদেশে যেতে বাধ্য করে। সে বিমানবন্দরে হেঁটে যেতে পারেনি। হুইল চেয়ারে যেতে হয়েছিল। সেই তত্বাবধায়ক সরকার আজ কোর্ট বাতিল করেছে, বিএনপি আবার তাকে আনতে চায়। এটা আর সম্ভব নয়, ‘ন্যাড়া আর বেলতলায় যাবে না’। আমরা দেখেছি তত্বাবধায়ক সরকারের রূপ, তা আর এদেশে হবে না। এ সময় তিনি বলেন, যে বাংলাদেশকে হেনরি কিসিঞ্জার তলাহীন ঝুড়ি বলেছিল, সেই কিসিঞ্জার শেখ হাসিনার হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে বলেও অভিযোগ করে তিনি বলেন, দেশকে পিছিয়ে নেবার জন্য তারা চেষ্টা করছে। তিনি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের ব্যাপক উন্নয়নের কথা তুলে ধরেন। সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের ভূয়সী উন্নয়ন ঘটেছে এবং হচ্ছে। তিনি নিজ অর্থে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলি ট্যানেল, মেট্রো রেল ইত্যাদি নির্মাণের কথা উল্লেখ করেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আরো বক্তব্য রাখেন বন ও পরিবেশ উপমন্ত্রী হাবিবুন নাহার, এমপি আব্দুল আজিজ, সামছুল আলম দুদু, ছলিম উদ্দিন তরফদার, আনোয়ার হোসেন হেলাল, মনিরা সুলতানা এবং ওয়াকার্স পার্টির মোস্তফা লুৎফুল্লাহ।

ডব্লিউজি/এআর

শেয়ার করুন:

Recommended For You