ঘড়ির কাঁটা তখন দুপুর ২টা ছুঁইছুঁই। উত্তপ্ত সূর্য মাথার ওপর থেকে তাপ ছড়াচ্ছে। কড়া রোদ, তীব্র গরম, যানজট, উচ্চ শব্দের হর্ন সব মিলিয়ে বিভীষিকাময় এক পরিস্থিতি আর এর মধ্যেই খুলনা নগরীর ডাকবাংলা মোড়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন ট্রাফিক সার্জেন্ট আলমগীর। প্রচণ্ড গরমে তার পোশাক ভিজে একাকার। বারবার মুখের ঘাম মুছে সড়কের এক পাশের গাড়ি ছেড়ে অন্য পাশ ধরে রাখছেন। ছায়া বলতে হাতের ছাতাই একমাত্র ভরসা। শুধু আলমগীরই নন, তার মতো একই অবস্থা খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) ট্রাফিক বিভাগের মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের। তীব্র গরমের কারণে সাধারণ মানুষ যখন বাইরে বের হতে ভয় পায় তখন কড়া রোদে দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করতে হয় তাদের।
ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ অনুসরণ করুন
বৈশাখের খরতাপে খুলনাসহ সারাদেশের বিভিন্ন জেলায় বইছে তীব্র দাবদাহ। জনজীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। বিশেষ করে যারা অধিকাংশ সময় সড়কে থাকেন। কাটফাটা রোদের মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানজট নিরসন ও মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে দায়িত্ব পালন করছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা। তপ্ত রোদেও সড়ক ছাড়ার উপায় নেই তাদের। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে কড়া রোদে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন তারা। শনিবার ও রবিবার মহানগরীর সোনাডাঙা বাস স্টান্ড মোড়, শিববাড়ি মোড় ও ময়লাপোতা মোড়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও রাস্তায় দায়িত্বরত ট্রাফিক সার্জেন্টদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
আরও পড়ুন তাপমাত্রা কমাতে পরিকল্পনার কথা জানালেন চিফ হিট অফিসার
সরেজমিনে দেখা যায়, গত কয়েকদিনের মতো রবিবারও খুলনাতে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড এ তাপপ্রবাহে বাতাসেও অনুভূত হচ্ছে গরম। একদিকে রাস্তায় গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা, অন্যদিকে গাড়ির হর্ন ও সাইরেনের শব্দে কঠিন পরিস্থিতি। প্রতিকূল পরিবেশে অনড় অবস্থায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের। ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা বলছে, এবারের মতো তাপদাহ এর আগে কখনও দেখেননি তারা। এমনিতেই মহানগরী খুলনাতে প্রচণ্ড গাড়ির চাপ সামলাতে তাদের নানা রকম সমস্যা হয়।
আরও পড়ুন চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ব্যাটারী কমপ্লেক্স উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
এছাড়া রাস্তায় দাঁড়িয়ে অতিরিক্ত শব্দ দূষণ থেকে শুরু করে বায়ু দূষণের শিকার হতে হয় তাদের। এর মধ্যে চলমান তাপদাহ তাদের কষ্টের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তবুও তারা নগরীর সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এতে রাস্তায় দীর্ঘক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাফিক সদস্যগণ হিট স্ট্রোকসহ পানি শূন্যতা, মাথাব্যথা ও শারীরিক দুর্বলতায় ভুগছে। অনেক ট্রাফিক সদস্যরা ডিহাইড্রেশনজনিত সমস্যায় ভুগছেন। যেসব ট্রাফিক সদস্যের হাই-প্রেসার আছে তাদের এই গরমে দায়িত্ব পালন করতে আরও বেশি সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া ইউনিফর্ম পরে এ গরমে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আরও বেশি সমস্যা হচ্ছে।
এদিকে, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মোজাম্মেল হকের নিদের্শনায় শিববাড়ি মোড়ে ট্রাফিক পুলিশে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের মাঝে ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মনিরা সুলতানা বিশুদ্ধ খাবার পানি, জুস ও স্যালাইন বিতরণ করেন। এসময় তিনি বলেন, কেএমপি’র কমিশনারের নির্দেশনায় মহানগরীর ৫৯ টি ট্রাফিক পয়েন্টের সব ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের মাঝে বিশুদ্ধ খাবার পানি, জুস ও খাবার স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে। আজ থেকে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তীব্র দাবদাহ যতদিন থাকবে ততদিন এই কার্যক্রম চলবে। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন ছাতা নিয়ে ও সুপেয় পানি খেয়ে দায়িত্ব পালনের কথা বলা হয়েছে। দায়িত্বে থাকা সদস্যদের এই গরমে খুব কষ্ট করতে হচ্ছে। মাঠ পর্যায়ের ট্রাফিক সদস্যদের পানি ও স্যালাইন সরবরাহ করা হচ্ছে।
এ সময় কেএমপি’র অতিঃ ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (সদর) পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি প্রাপ্ত মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন্ হাছানসহ ট্রাফিক পুলিশে দায়িত্বরত অফিসারবৃন্দ ও ফোর্স উপস্থিত ছিলেন।