ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধের দুর্নীতির অভিযোগ

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পূর্ব দহাকুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শওকাত আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।
তারমধ্যে প্রধান অভিযোগ স্কুল ফাঁকি দেওয়া, স্লিপ বরাদ্দের টাকায় কাজ না করা, অফিসারদের সাথে ঘুরে বেড়ানো, রুটিন মেরামতের কাজ না করা, স্কুলের মেরামতের কাজ না করে টাকা আত্মসাৎ, প্রাক প্রাথমিক শ্রেণির বরাদ্দের টাকা আত্মসাত করা, কণ্টিজেন্সির টাকা খরচ না করে আত্মসাৎ, সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের সাথে যৌথ মাছের ঘের করা, গাছ বিক্রি, এসএমসি গঠনের জন্য বিভিন্ন স্কুল থেকে চাঁদা আদায়, বিভিন্ন বরাদ্দ পাশ করার নাম করে টাকা আদায়, শিক্ষক বদলি, ডেপুটেশন ইত্যাদিতে দালালি ফি উত্তোলন, বিভিন্ন কর্মকর্তাদের হুমকি প্রদর্শন,নামে বেনামে দরখাস্ত, বিবাহিত মহিলা শিক্ষকদের সাথে বিশেষ সখ্যতা গড়ে তোলা উল্লেখযোগ্য।
স্কুল ফাঁকি দেওয়া সদরের পূর্ব দহাকুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শওকাত আলীর নিত্যনৈমিত্ত ব্যাপার।তিনি কখনও নিয়মিত স্কুলে যায় না।তিনি সকাল ৯টার পরিবর্তে স্কুল খোলার এক ঘন্টা পরে অর্থাৎ ১০টার পর স্কুলে যেয়ে স্বাক্ষর করে সদর উপজেলা অফিসে চলে আসে।তারপর তার মেয়েকে সরকারি গার্লস স্কুল থেকে নিয়ে বাড়িতে দিয়ে আসে। দুপুরে যেদিন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মুহা. আবদুল গনির অন্য স্কুলে দাওয়াত থাকে না সেদিন তার বাসা থেকে খাবার নিয়ে আসে।
অফিসারদের সাথে ঘুরে বেড়ানো তার আরও একটি বড় অভিযোগ।প্রতিদিন দুপুরে মুহা. আবদুল গনিকে খাবার দেওয়া হলে সহকারী শিক্ষা অফিসার এটিও মো. নজরুল ইসলাম ও দুলাল চন্দ্র দুজনের যেকোন একজনের সাথে বিভিন্ন স্কুলে বা বিভিন্ন কাজে চলে যায় কারণে অকারণে।
স্লিপের বরাদ্দের টাকা কাজ না করা তার আরও একটি বড় অভিযোগ বলে তার অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেছেন।বিগত ১০ বছরে পূর্ব দহাকুলা স্কুলে স্লিপের বরাদ্দের টাকা কোন অবস্থায় কাজ করা হয়নি। সমূদয় টাকা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শওকাত আলী কর্তৃক আত্মসাত করা হয়েছে। এভাবে প্রায় ৪ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা আত্মসাত করা হয়েছে বলে জানা যায়।
রুটিন মেরামতের কাজ না করা তার আরও একটি অভিযোগ। গত ১০ বছরে পূর্ব দহাকুলা স্কুলে রুটিন মেরামতের বরাদ্দের টাকায় কোন কাজ করা হয়নি। সমূদয় টাকা প্রধান শিক্ষক শওকাত আলী কর্তৃক আত্মসাত করা হয়েছে। এভাবে প্রায় ১ লক্ষ ৪০হাজার টাকা আত্মসাত করা হয়েছে বলে জানা যায়।
স্কুলের ক্ষুদ্র মেরামতের টাকা কাজ না করে আত্মসাত করা তার কোন ব্যাপারই না।  বিগত ১০ বছরে পূর্ব দহাকুলা স্কুলে ক্ষুদ্র মেরামতে যে কয়বার বরাদ্দ পাওয়া গেছে তার কোন কাজ করা হয়নি।সমূদয় টাকা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শওকাত আলী কর্তৃক আত্মসাত করেছে। এভাবে প্রায় ৬ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাত করা হয়েছে বলে জানা যায়।
প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির বরাদ্দও আত্মসাত করেছে প্রধান শিক্ষক শওকাত আলী। বিগত ১০ বছরে পূর্ব দহাকুলা স্কুলে প্রাক- প্রাথমিকে যে কয়বার বরাদ্দ পাওয়া গেছে তার কোন কাজ করা হয়নি। এভাবে প্রায় ৭০হাজার টাকা আত্মসাত করা হয়েছে বলে জানা যায়।
কণ্টিজেন্সির টাকা খরচ না করে আত্মসাত করা তার আরও একটি অভিযোগ।বিগত কোন বছর আনুষঙ্গিক খাতে কোন বরাদ্দের কোন টাকার কাজ করা হয় নি।স্কুলে কর্মরত বাকী শিক্ষকগণ লেখার জন্য একটি চকও পান না। বছরে এক আধবার চক কিনলেও অন্যান্য জিনিসপত্র আনুষঙ্গিক খাত হতে ক্রয় করা হয় না।
কোন টেন্ডার ছাড়া গাঁয়ের জোরে স্কুল আঙ্গিনায় থাকা গাছ বিক্রি করা।স্কুলের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের সময় সমূদয় গাছ নিলাম ছাড়াই কেটে বিক্রি করা হয়। তারপর ওয়াশব্লক নির্মাণের সময়ও গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে। এভাবে লক্ষ লক্ষ টাকা সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মুহা. আবদুল গনির সাথে মিলে আত্মসাত করেছে।
যৌথ মাছের ঘের করছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শওকাত আলীসহ অন্য দুজন সহকারি শিক্ষক এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসার মুহা. আবদুল গনি মিলে ১১০ বিঘা পরিমাণ একটি চিংড়ি ঘের করে আসছে।যারফলে স্কুলের সময়ে শওকাত আলী স্কুলে না থাকলেও উপজেলা শিক্ষা অফিসার মুহা. আবদুল গনি কিছুই বলে না বা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসারদের বলার ক্ষমতা্ হরণ করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে কিছু বলতে বা করতে।অন্য কোন অফিসার তার রিরুদ্ধে কথা বললেই আবদুল গনি ও শওকাত মিলে সেসব অফিসারদের বদলি করানোর ব্যবস্থা করে।গ্রীষ্মের দাবাদহে মানুষ যখন অতিষ্ঠ হয়ে যায় উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবদুল গনি তখন তাদের চিংড়ি ঘেরে যেয়ে অবকাশ যাপন করে।
এসএমসি গঠনের জন্য বিভিন্ন স্কুল থেকে চাঁদা আদায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শওকাত আলী।সদর উপজেলার যেকোন স্কুলে ম্যানেজিং কমিটি বা এসএমসি গঠন করা হলে সেসব স্কুল থেকে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কমিটির অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। আর এ অনুমোদনের জন্য প্রথমে শওকাত আলীর অনুমোদন অর্থাৎ তাকে ৫-১৫হাজার টাকা দিতে হয়। আর এ টাকা আবদুল গনি ও শওকাত আলীর মধ্যে ভাগাভাগি করা হয়।
স্কুলের বিভিন্ন বরাদ্দ পাশ করার নাম করে টাকা আদায় করেন এই শওকাত আলী। উপজেলা শিক্ষা অফিসার  আবদুল গনি ও শওকাত আলী প্রতিদিন বাদ এশা আবদুল গনির বাসায় মিলিত হয়। কারণ রাতের খাবার আসে শওকাত আলীর বাসা থেকে। এখানে প্রায় রাত দশটা-বারটা পর্যন্ত তাদের কূটকৌশল চলে এবং কিভাবে বিভিন্ন খাত হতে টাকা উত্তোলন করা হবে তার সলাপরামর্শ করা হয়। শওকাত আলী অত্যন্ত ধূর্ত স্বভাবের হওয়ায় রতনে রতন চিনে গেছে। যার ফলে আবদুল গনির সাথে অতি সখ্যতা গড়ে ওঠেছে। উপজেলার স্লিপের বরাদ্দ হতে ৮শ’টাকা, রুটিনের জন্য ২হাজার টাকা, ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য ৫হাজার টাকা, প্রাক-প্রাথমিকের জন্য ৪শ’টাকা, শ্রান্তি বিনোদত ভাতার জন্য ৩শ’টাকা, বহিঃবাংলাদেশ ছুটির জন্য ১হাজার টাকা, পরীক্ষার অনুমতির জন্য ১হাজার টাকা, সার্ভিস বুক হালফিল করার জন্য ৩শ’টাকা এভাবে শওকাত আলী আবদুল গনির সাথে বসে চাদার হার ধার্যকরে দেয়। আর এ ধারা বর্তমানে অব্যাহত রয়েছে।
শিক্ষক বদলি, ডেপুটেশন ইত্যাদিতে দালালি ফি উত্তোলন করেন প্রধান শিক্ষক শওকাত আলী।শিক্ষক বদলির জন্য যে সকল শিক্ষক টাকা দিতে আগ্রহী শওকাত তাদের নিকট গিয়ে প্রস্তাব রাখে।তারপর দেনদরবার ঠিক হলে তাদেরকে বদলি করা হয়। এভাবে প্রতিটি বদলি হতে লক্ষ লক্ষ টাকা গ্রহণ করা হয়। অবৈধভাবে শিক্ষক ডেপুটেশন দিয়েও টাকা গ্রহণ করে ভাগাভাগি করা হয়।
বিভিন্ন কর্মকর্তাদের হুমকি প্রদর্শন করে প্রধান শিক্ষক মো.শওকাত আলী।উপজেলা শিক্ষা অফিসের যেসকল কর্মকর্তা শওকাত আলীর কুপ্রস্তাবে রাজি হয় না তাদের জন্য নেমে আসে চরম শাস্তি। প্রথম শাস্তি দূর্গম আঞ্চলে বদলি যা গল্প শওকাত অন্যান্য অফিসারদের সাথে সদর্পে বলে বেড়ান। এতে করে যদি ঐ কর্মকর্তা ভয় না পায় বা প্রস্তাবে রাজি না হয় তাহলে তার নামে মিথ্যা, বানোয়াট, আজগুবি বিভিন্ন গাজাখুরি তথ্য দিয়ে দরখাস্ত করা হয়। এভাবে সে অফিসারদের ব্লাকমেইল ও হয়রানি করে থাকে।
নামে বেনামে দরখাস্ত করেন প্রধান শিক্ষক মো. শওকাত আলী। এটিইও, টিইও, ডিপিইও যারা তার কথা না শোনে বা কুপ্রস্তাবে রাজি না হয় তাদের বিরুদ্ধে নামে বেনামে দরখাস্ত করা হয়। দরখাস্তে সত্য বা মিথ্যা যাহোক না কেন মানসম্মানের ভয়ে ঐ সমস্ত অফিসার তার শরণাপন্ন হলে শওকাত খুব গর্ব বোধ করে এবং কিছুই হবে না মর্মে আশ্বস্ত করে।
বিবাহিত মহিলা শিক্ষকদের সাথে বিশেষ সখ্যতা গড়ে তুলেছ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. শওকাত আলী। সাতক্ষীরা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিতি একটি বিদ্যালয়ের সুন্দরী মহিলা শিক্ষককে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. শওকাত আলীকে। এর আড়ালে ভয়ঙ্কর চরিত্র লুকিয়ে আছে বলে ধারনা করেছেন অভিযোগকারী।তিনি সুন্দরী মহিলা শিক্ষকদের তার স্কুলে ডেপুটেশন নিয়ে রাখার প্রবণতাও লক্ষ করা যায়। বাকিটা অনির্বচনীয়।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পূর্ব দহাকুলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শওকাত আলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি কোন জবাব না দিয়ে যা ইচ্ছা করেন বলে প্রতিবেদককে এড়িয়ে যায়।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহা. আবদুল গনি বলেন, এবিষয়ে আমার কিছু জানা নাই। অভিযোগ পেলে দেখবো।
শেয়ার করুন:

Recommended For You