জরাজীর্ন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র যেন মৃত্যু কূপ!

কক্সবাজারের বাঁকখালী নদীর পশ্চিম তীরে স্থাপিত জরাজীর্ন, মেয়াদ উত্তীর্ন এবং কোমর ভাঙা এক ঘা‌টের নাম কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ( ফিসা‌রিঘাট)। ঝুঁকিপূর্ণ ভবন, পন্টুনের বেহাল দশা, জেটি না থাকা এবং জায়গা সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত নানান ভোগান্তি পোহাচ্ছেন জেলে, ট্রলার মালিক, মৎস্য শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। অথচ বছ‌রে ৫০০ থে‌কে কোটি ৬০০ টাকার মাছ বি‌ক্রি হয় এই ঘা‌ট থেকে।

স্বাধীনতার আগে ১৯৬৫-৬৬ সা‌লে যাত্রা শুরু কক্সবাজার মৎস অবতরন কে‌ন্দ্রের। এখানকার কর্মকর্তারা জানান, প্রতি বছর ১০ হাজার মে‌ট্রিক ট‌নের বে‌শি সামু‌দ্রিক মাছ কেনা বেচা হয় এই ঘা‌টে। ২০২৩ সা‌লেও দেড় কো‌টি টাকার বে‌শি টোল আদায় হ‌য়ে‌ছে এই ঘাট থে‌কে। স্বাধীনতার পর ক‌য়েক দফায় সংস্কার করা হ‌লেও বর্তমা‌নে নাজুক অবস্থা এই মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের যাকে স্থানীয়রা বলে ফিশারী ঘাট।

মাছ ব‌্যবসায়ী ও বি‌ক্রেতারা জানা‌লেন, মাছের পল্টনের ঝুকিপূর্ণ ভবন, হেলে পড়েছে একপাশে, কোথাও ভবনের নীচের মাটিও সরে গেছে, ফাটল ধরেছে  মেঝেতে, একপাশে আর ঘাটো বোট এবং শে‌ডে মাছ রাখার জন‌্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই।

মাছ ব‌্যবসায়ীদের অ‌ভি‌যোগ, নদী‌তে ঘা‌টের এক‌টি অংশ বিলীন হ‌য়ে গে‌লেও নেয়া হয়‌নি কোন ব‌্যবস্থা। তারা আরো জানান, ফিসা‌রিঘা‌টে নেই কোন ভাল হো‌টেল, নেই স্বাস্থ‌্য সম্মত সে‌নি‌টেশ‌নের ব‌্যবস্থাও। ক্রেতারাও জানা‌ন, মাছ ক্রয় করতে এসে তাদেরকেও সমস‌্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

দীর্ঘ‌দি‌নের এই সমস‌্যার সমাধান করে দ্রুত কেন্দ্রটির আধুনিকায়ন করে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে কক্সবাজার অবতরণ কেন্দ্র মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

হাঙর স‌মি‌তি যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো. ইব্রা‌হিম জানান, এখানে যদি সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো যায়, তবে আমরা রাজস্বে আরও অবদান রাখতে পারব।

মৎস্য ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা জানান, মাছ উঠানামার পর্যাপ্ত যাতায়াতের ব্যবস্থা না থাকায় চরম বিপাকে পড়ছেন তারা। এখানে মাছ রাখার দুটি পন্টুন থাকলেও তার মধ্যে একটি চরম ঝুঁকিতে। আর মাছ রাখার স্থান না পেয়ে রাখা হচ্ছে খোলা মাঠে। এতে নষ্ট হচ্ছে মাছ। এছাড়া মাছ প্যাকেটিংয়ের জন্য রয়েছে জায়গা সংকটও।

ত‌বে সমস‌্যা সমাধা‌নে আশার কথা শু‌নি‌য়ে‌ছেন কক্সবাজার মৎস্য অবতরন কে‌ন্দ্রের ম‌্যা‌নেজার মো. বদরু‌দ্দোজা জানান, জাপা‌নি সাহায‌্য সংস্থা জাইকার অর্থায়‌নে ২০০‌ কোটি টাকার বে‌শি বি‌নি‌য়ো‌গে নতুন ক‌রে নি‌র্মিত হ‌তে যা‌চ্ছে কক্সবাজার ফিসা‌রিঘা‌টের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র।  চল‌তি মা‌র্চে মাসে এক‌নে‌কে এই প্রক‌ল্পের প্রস্তাব পাশ হওয়ার কথা। পাশ হলেই নতুন করে স্থাপনা তৈরি কাজ শুরু হবে বলেও জানান তিনি।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি ধসে যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা। রাতের অন্ধকারে প্রতিনিয়ত মৎস্য শ্রমিকরা প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন বলে জানা গেছে। তাই কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রটি পুনর্নির্মাণের দাবী জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শেয়ার করুন:

Recommended For You