ফাইভ জি-র পর এবার আসছে সিক্স জি!

গত ১ অক্টোবর পঞ্চম প্রজন্মে পা রেখেছে দেশের মোবাইল প্রযুক্তি। দিল্লিতে ফাইভ জি প্রযুক্তির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইভ জি প্রযুক্তির হাত ধরে দেশের টেলিকম ব্যবস্থা আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে। প্রথম ধাপে দিল্লি, মুম্বই, কলকাতা, চেন্নাইয়ের মতো মোট ১৩টি শহরে ফাইভ জি পরিষেবা চালু হবে। পরবর্তী ধাপে দেশের অন্যান্য শহরেও ছড়িয়ে দেওয়া হবে এই পরিষেবা। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।

দেশটির টেলিকম সংস্থার বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের শহরাঞ্চলগুলিতে ফাইভ জি পরিষেবা চালু করে দেওয়া হবে। ২০২৪-এর মার্চের মধ্যে ফাইভ জি পরিষেবা পৌঁছে যাবে প্রত্যন্ত এলাকাতেও। দাবি করা হচ্ছে, ফোর জি পরিষেবার তুলনায় ফাইভ জির গতি হবে ১০০ গুণেরও বেশি। ফাইভ জি-র গতি হবে প্রতি সেকেন্ডে সর্বোচ্চ ২০ গিগাবাইট। ফোর জি-তে ইন্টারনেটের গতি সর্বোচ্চ ১০০ প্রতি সেকেন্ডে মেগাবাইট। যদি তা-ই হয় তবে ফাইভ জি পরিষেবায় ভারতে ইন্টারনেটের গতি অনেকটাই বেড়ে যাবে।

ফাইভ জি পরিষেবা বিশ্ব জুড়ে ঠিকঠাক চালু হতে না হতেই আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে ওয়্যারলেস প্রযুক্তির পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ সিক্স জি এবং সেভেন জি পরিষেবা নিয়ে। করে চালু হবে এই পরিষেবা? দিও নিকট ভবিষ্যতে সিক্স জি চালু হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। তবুও বিজ্ঞানীরা এবং বিশেষজ্ঞরা এখন থেকেই সিক্স জি নিয়ে কোমর বেঁধে নেমে পড়তে চান। গত বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর থেকে দুবাইয়ে শুরু হয়েছে সিক্স জি সামিট। সেখানে আবু ধাবির টেকনোলজি ইনোভেশন ইনস্টিটিউটের গবেষক মেরৌনে ডেব্বা বলেন, সিক্স জি পরিষেবার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সিক্স জি চালু হলে তা যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দিক খুলে দেবে।

ডেব্বা আরও বলেন, এখনও অনেকটা পথ আমাদের চলতে হবে। দুবাইয়ের গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা আপাতত সিক্স জি প্রযুক্তির মূল বিষয়গুলির ওপর গবেষণা করছেন। ইতিহাস বলে, প্রতিটি দশকের শুরুতে বিশ্বজুড়ে ওয়্যারলেস প্রযুক্তির নতুন প্রজন্ম চালু হয়েছে। সেই ভাবে চলতে থাকলে আনুমানিক ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বে চালু হবে সিক্স জি পরিষেবা।

আমেরিকা বরাবর নতুন ওয়্যারলেস প্রযুক্তি চালু করার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে থাকে। সে দেশে ওয়্যারলেস প্রযুক্তির প্রথম ও দ্বিতীয় প্রজন্ম চালু হয়েছিল ১৯৮০ এবং ১৯৯০ এর গোড়ার দিকে। তৃতীয় প্রজন্ম চালু হয় ২০০২ সালের শুরুতে। ফোর জি পরিষেবা চালু হয় ২০১০ সালে এবং ২০১৮ সালে চালু হয় ফাইভ জি পরিষেবা।

মেরৌনে ডেব্বা আরও বলেন, ২০২০ সাল থেকে সিক্স জি প্রযুক্তি নিয়ে ইতিমধ্যেই গবেষণা শুরু হয়ে গিয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে ট্রায়ালও শুরু করে দেওয়া যাবে বলে আশাবাদী ডেব্বা। ২০২৭ সাল থেকে এই প্রযুক্তির জন্য উপযুক্ত কম্পাঙ্ক চিহ্নিত করা শুরু হবে। সব ঠিকঠাক চললে ২০৩০ থেকেই এই প্রযুক্তি চালু করে দেওয়া যাবে বলে মনে করেন ডেব্বা।

শু‌ধু প্রযুক্তিগত বাধাই নয়, এই প্রজন্মের প্রযুক্তিকে সময়মতো চালু করতে হলে টেলিকম সংস্থা এবং মোবাইল প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকেও এগিয়ে আসতে হবে। তাদের প্রযুক্তিকেও সময় মতো উন্নততর করে তুলতে হবে। সিক্স জি প্রযুক্তি ব্যবহারে কতটা শক্তির অপচয় হবে সেই নিয়ে সন্দিহান রয়েছেন গবেষকরা। তাঁরা চেষ্টা করছেন এই প্রযুক্তিকে যথাযথ সম্ভব পরিবেশবান্ধব করে তুলতে।

গবেষকরা এই প্রযুক্তি বিশ্বের দুরূহ স্থানে পৌঁছে দিতে ইচ্ছুক। বিশ্বের যে সব জায়গায় এখনও কোনও প্রজন্মের পরিষেবা ভাল করে পাওয়া যায় না, বিশেষত মরুভূমির মতো এলাকাতেও এই প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে চান। কতটা দ্রুত হবে এই প্রযুক্তি? গবেষকদের অনুমান বর্তমানের ফাইভ জি প্রযুক্তির চেয়ে সিক্স জি মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিষেবা প্রায় একশো গুণ বেশি গতিসম্পন্ন হবে। একটি ৮কে ভিডিয়ো ডাউনলোড করতে ফাইভ জি-তে যা সময় লাগবে, সিক্স জি-তে তার পাঁচশো গুণ কম সময় প্রয়োজন হবে বলেই দাবি গবেষকদের।

সিক্স জি-র চালু হয়ে গেলে মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে আরও ভাল ভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে। এর ফলে এক সম্পূর্ণ নতুন দিক খুলে যেতে পারে মেটাভার্সে, মনে করছেন গবেষকরা। সিক্স জি যদি ২০৩০-এ চালু হয়ে তবে সেভেন জি কবে? সেই ইঙ্গিতও দিয়েছেন ওই গবেষকরা। তাঁরা মনে করছেন ২০৪০ সাল নাগাদ বিশ্বে চালু হতে পারে সেভেন জি প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির পুরোটাই গড়ে উঠবে কোয়ান্টাম পদার্থবিদ্যা এবং ক্রিপ্টোগ্রাফির ওপর নির্ভর করে।

ডব্লিউজি/এআর

শেয়ার করুন:

Recommended For You