ভারত থেকে চাল আমদানী করে বিপাকে নওগাঁর ব্যবসায়ীরা

ডলারের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারত থেকে চাল আমদানী করে বিপাকে পড়েছে নওগাঁর ধান-চাল ব্যবসায়ীরা। লেটার অব ক্রেডিট বা এলসির মাধ্যমে চাল আমদানী করতে গিয়ে বিপুল পরিমানের লোকসানের আশংকায় ভারত থেকে আপাতত চাল আনা বন্ধ রেখেছে ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের দাম স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত তারা ভারত থেকে চাল আনবেন না। ডলারের দাম উর্ধ্বমুখি থাকায় ইতিমধ্যে ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে চাল আমদানীতে নিরুৎসাহীত হয়ে পড়েছেন। জানা গেছে, ইরি বোরো মওসুমে দেশে ধানের উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় চালের বাজার স্থিতিশীল রাখার লক্ষে সরকার ভারত থেকে চাল আমদানীর সিদ্ধান্ত নেয়। ইতিমধ্যে লক্ষ লক্ষ টন চাল আমদানীর জন্য এলসি করেছে সারাদেশের প্রায় শতাধিক চাল ব্যবসায়ীরা।

কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম বেশী এবং প্রতিদিন ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে চালের আমদানী বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে। নওগাঁর ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্তমানে নওগাঁর বাজারে  যে দামে চাল বিক্রি হচ্ছে, তা আমদানীকৃত চালের চেয়ে কম। আমদানীকৃত চাল নওগাঁর বাজারে এসে পৌছালে চালের দাম স্থানীয় উৎপাদনের চালের চেয়ে কেজি প্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা বেশী পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এ কারণে যে সকল ব্যবসায়ীরা প্রথম বার চাল নিয়ে এসেছে তারা আর পরবর্তীতে চাল আমদানী না করার আশংকা দেখা দিয়েছে।

নওগাঁ জেলা চাউল কল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, সরকার চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতিমধ্যে লক্ষ লক্ষ টন চাল ভারত থেকে আমাদানীর অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এ পর্যন্ত বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে মাত্র ৫ থেকে ৬ হাজার মেট্রিক টন চাল দেশে এসে পৌছেছে। ভারত থেকে চাল আসার ধীর গতির কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এখন ভারতের বাজারেই চালের দাম বেশী, আমাদের দেশে ডলার ক্রাইসিসের কারনণে ডলারের দাম প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ কারণে যে চাল ১০ দিন আগে ৯৪/৯৫ ডলারে এলসি করা হয়েছে তা এখন বাংলাদেশে ১০২ থেকে ১০৪ টাকায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। এতে আমদানীকৃত চালের মুল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নওগাঁর মফিজ উদ্দিন অটোমেটিক রাইস মিলের সত্বাধিকারী মো. তৌফিকুল ইসলাম বাবু জানান, নওগাঁসহ দেশের বিভিন্ন জেলার চাল ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে চাল আনার জন্য ইতিমধ্যে এলসি করেছে। কিন্তু গত ৭ থেকে ১০ দিনের ব্যবধানে ডলারের মুল্যের যে উধ্বগতি তাতে এলসির চাল দেশে আসার পর ব্যাংকে পেমেন্টে করার সময় অতিরিক্ত পেমেন্ট গুনতে হবে। আর এর প্রভাবটা চালের উপর পড়বে। এতে চালের দাম বৃদ্ধি পাবে। যদি ডলারের বাজার স্থিতিশীল না হয় তাহলে যে সকল ব্যবসায়ীরা প্রথম বার চাল নিয়ে এসেছে তারা আর পরবর্তীতে চাল আমদানী না করার আশংকা দেখা দিয়েছে।

নওগাঁর চাল আমদানীকারক এসএস অটোমেটিক রাইস মিলের সত্বাধিকারী মো. মোতাহার হোসেন পলাশ বলেন, মুলত আমরা পাশ্ববর্তি ভারত থেকে  যে চাল আমদানী করি। কিন্তু বর্তমানে ভারতে চালের দাম বেশী হওয়ায় এলসির অনুমতি পাওয়ার পরেও আমাদের হিসাব করতে হচ্ছে যে, বর্তমান বাজারে ভারতে যে চালের দাম সে দামে চাল নিয়ে আসা যাবে কিনা। আকেটি বিষয় হচ্ছে, বর্তমানে আমাদের দেশে ডলারের যে উধ্বগতি তাতে ভারত থেকে চাল এসে কত ডলারে পেমেন্ট করতে হবে তা নিয়ে চিন্তায় আছি। এলসির চাল আনার পর বেচাকেনা করার পরে যদি দেখা যায় ডলারের দাম অনেকখানি বেড়ে গেছে তাহলে আমাদের পক্ষে ওই লোকসানটা পুরণ করা সম্ভব নয়। এটাকে আমরা বিশাল একটা রিস্ক মনে করছি।

তিনি বলেন, ভারতসহ আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যপণ্যেও দাম বেশী। ফলে ভারতের বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম ধীরে ধীরে বাড়ছে। ফলে এলসির চাল আমদানী করে নিয়ে এসে আমাদের বাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে না। যার কারনণে এলসি ওপেন করা থাকলেও আমরা ভারতের ব্যবসায়ীদের সীমান্ত দিয়ে চাল পাঠাতে নিষেধ করে দিচ্ছি। জানা গেছে, নওগাঁ থেকে ৭/৮ জন চাল ব্যবসায়ী ভারত থেকে লেটার অব ক্রেডিট বা এলসির মাধ্যমে চাল আনার অনুমতি সরকারের কাছে থেকে পেলেও অধিকাংশ ব্যবসায়ীরাই এখনো পর্যন্ত চাল আমদানীর জন্য এলসি না করে ভারতের বাজার এবং ডলারের দাম পর্যবেক্ষন করছেন।

২/১ জন ব্যবসায়ী ভারত থেকে চাল আনার জন্য এলসি করলেও এখনো পর্যন্ত নওগাঁ চাল এসে না পৌছানোর কারণে আমদানীকৃত চালের দাম প্রকৃতপক্ষে কত হবে, আমদানী করে লাভ হবে না কি লোকসান হবে তা বলা যাচ্ছে না। নওগাঁর ব্যবসায়ীরা বলছে, এলসির মাধ্যমে আনা চালের চেয়ে স্থানীয় উৎপাদিত চালের দাম কম হওয়ায় এবারে ভারত থেকে চাল আমদানী না হওয়ার আশংকা থেকেই যাচ্ছে।

শেয়ার করুন:

Recommended For You

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *