
মঙ্গলবার ২৪ জুন ২০২৫ , ১২:৪০ এএম

সূর্যপুরী আমের জন্য বিখ্যাত ঠাকুরগাঁও জেলা। এ জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলায় বা ইউনিয়নে আম বাগান রয়েছে। শুধু সূর্যপুরী না বেশ কয়েকবছর ধরে এ জেলায় বিভিন্ন জাতের আম বাগান করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছে।
আর এ জেলায় সূর্যপুরী আমের পরিচিতি হয়েছে এশিয়া দেশের সব চেয়ে বড় ২২২ বছরের পুরনো সূর্যপুরী আম গাছটির জন্য। আর সে গাছটির অবস্থান ঠাকুরগাঁও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার হরিনমারী মন্ডুলা গ্রামে। এইবারও গাছটি অনেক বেশি পরিমাণ সূর্যপুরী আম এসেছে। যারা এই গাছটি দেখতে যায় তারা মুলত আম কেনে। এবং বাজার থেকে এই গাছের আমের মূল্য বেশি।
ঠাকুরগাঁও জেলায় হাড়িভাঙ্গা, ফজলি, সুর্যাপুরী, লাবুয়া, খিরসা, অরুনা, আম্রপালি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, মল্লিকা, সুবর্নরেখা, মিশ্রিদানা, নিলাম্বরী, কালীভোগ, কাঁচামিঠা, আলফানসো, বারোমাসি, তোতাপূরী, কারাবাউ, কেঊই সাউই, গোপাল খাস, কেন্ট, পাহুতান, ত্রিফলা, ছাতাপরা, গুঠলি, লখনা, আদাইরা, কলাবতী ইত্যাদি জাতের আম চাষ হয়।

এগুলোর মধ্যে স্থানীয় প্রজাতি সূর্যাপুরী ও হাড়িভাঙ্গা জাতের আমের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। বর্তমানে সূর্যপুরী আম প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০/৬০ টাকা করে।
ঠাকুরগাঁও সদর বেগুনবাড়ি ইউনিয়নের আম বাগান মালিক আব্দুল জব্বার বলেন, আমার ৩ একর জমিতে সূর্যপুরী আম বাগান রয়েছে। ইতি মধ্যে বেশ কিছু আম আমি বিক্রি করছি। দাম বেশ ভাল। আর সূর্যপুরী আমের চাহিদা আছে ভাল। এবার ঝড় বৃষ্টি তেমন হয়নি তাই ফলন ভাল হয়েছে। তবে আমের সাইজ একটু ছোট। এবার বাগান থেকে ২ লাখ টাকার মত লাভ করতে পারবো বলে আশা করছি।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আম বাগান মালিক আক্তাবর রহমান বলেন, আমাদের জেলা সূর্যপূরী আমের জন্য বিখ্যাত। তবে আমি আম্রপালি আম বাগান করছি ২ টা। ২ বাগান ৫ একর জমি। এখন বাজারে এই আমের দাম ভাল। এই আম কেজিতে ৩/৪ পিচ উঠে। চাহিদা আছে। বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসে বাগান দেখে আম কেনে। এবার লাভবান হবো আশা করছি।
কালিবাড়ি বাজারে আম কিনতে আসা নওশাদ হোসেন বলেন, গতবার থেকে এবার আমের দাম বেশি। আমি ৫ কেজি আম কিনছি সূর্যপুরী ৫০ টাকা করে। গতবার কিনছিলাম ৩৫ টাকা করে। আম্রপালী আমের দাম বেশি ৮০ টাকা করে চায়। তাই আর কিনলাম না। কয়েকদিন পর হয়তো দাম একটু কমতে পারে।
আরেক ক্রেতা নাইমুর রহমান বলেন, আমাদের জেলা সুর্য্যপুরী আমের জন্য বিখ্যাত। প্রতিবছর আমি ঢাকার আত্নীয় স্বজনদের জন্য আম পাঠাই। এবারও পাঠাতে হবে। তবে বাজারে আসে দেখলাম এবার আমের দাম বেশি। তাও পাঠাতে হবে তবে এবার পরিমাণে কম পাঠাবো।
সদর ভেলাজান থেকে ঠাকুরগাঁও কালিবাড়িতে আম বিক্রি করতে আসছেন হাফিজুল রহমান তিনি বলেন, আমার বাড়ির চারপাশে আর একটা ছোট জমিতে বেশ কয়েকটা আম গাছ আছে। ঠাকুরগাঁওয়ে আমের দাম বেশি তাই সকালে অটোতে নিয়ে চলে আসছি বিক্রি করার জন্য।
পাইকার দাম বলছে ৩৫/৪০ টাকা কেজি আর আমি এইখানে বিক্রি করছি ৫০/৬০ টাকা কেজি। এতে আমার কেজি প্রতি প্রায় ২০ টাকা বেশি লাভ হচ্ছে।
পীরগঞ্জ উপজেলা থেকে ঠাকুরগাঁও রোডে আম বিক্রি করতে আসছেন ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন তিনি বলেন, আমি এবার সূর্যপূরী ২ টা ও আম্রপালী একটা বাগান কিনছি। ৩ টা বাগান ২ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কিনছি। আমের ফলন বেশ ভাল হয়েছে। দামও ভাল আশা করছি সব খরচ বাদ দিয়ে ১ লাখ টাকার উপরে লাভ করতে পারবো। বর্তমান সূর্যপুরী আম ১২শ টাকা এবং আম্রপালী ১৪শ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে।
ডব্লিউ জি নিউজ সর্বশেষ জানতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন।
কালিবাড়ির আম পাইকারি বাজারের ব্যবসায়ী রাজু ইসলাম বলেন, সকাল থেকে ১২ টা পর্যন্ত আমার আম বাগান মালিকদের কাছ থেকে আম ক্রয় করি। তার পর সে আম এখানে কিছু বিক্রি করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাই। বর্তমানে আড়তে অন্য জাতের আমের চেয়ে সুর্যপুরী বেশি আসছে। এ ছাড়াও ল্যাংড়া, হিমসাগর, হাড়িভাঙ্গা, লগদা ও গুটি আমও বিক্রি হচ্ছে। গতবছরের তুলনায় এবার আম বেশি। দামও ভাল।
ঠাকুরগাঁও রোড যুবসংসদ মাঠের আম আড়ৎদার আব্দদুল হক বলেন, সারাদেশে ঠাকুরগাঁওয়ের সূর্যপুরী আমের চাহিদা অনেক। কেবল আম শুরু হয়েছে আসা। এখনও বড় বড় বাগান থেকে আম সংগ্রহ শুরু হয়নি। ক্ষুদ্র আমচাষিরা আমের যোগান দিচ্ছেন। বড় বড় আম বাগানগুলো থেকে আম আসা শুরু করলে আমের দাম একটু কমতে পারে।
কালিবাড়ি আম ব্যবসায়ী নাজমুল হক বলেন, এবার শুরুতে আমের দাম ভাল আর ফলন হয়েছে অনেক। বর্তমান সুর্যপুরী আম প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ১১০০/১২০০, ল্যাংড়া প্রতি মণ ১৩০০/ ১৫০০, মিশ্রিভোগ ১২০০/১৪০০, লগদা ৮০০/১০০০, হাড়িভাঙ্গা ১৫০০/ ১৭০০, হিমসাগর ১৪০০/১৬০০ টাকা ও গুটি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাজেদুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলায় সূর্যপরী আম বাগান রয়েছে ১৩৯ টি। এ ছাড়াও অন্যান্য বাগান রয়েছে ৪০৫৬টা। মোট বাগান জমির পরিমাণ ৪৩৮৭০ হেক্টর। প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩.৫ টন আম। প্রতিবারের চেয়ে এবার আমের ফলন ভালো হয়েছে। এখন পর্যন্ত চাষিদের কোন অভিযোগ নেই। তবে মৌসুমের শেষের দিকে আমে মাছির আক্রমণ হতে পারে। তাই আমরা কৃষকদের বেগিং করার পরামর্শ দিচ্ছি। আশা করা যায় এবার চাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন।
ঠাকুরগাঁও প্রতিবেদকঃ ডব্লিউ জি নিউজ