রাজ-পরীর সংসার এবার ভেঙেই যাচ্ছে

চিত্রনায়ক শরীফুল রাজের ফেসবুক থেকে অভিনেত্রী তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি ও সুনেরাহ বিনতে কামালের কিছু ছবি ও ভিডিও ক্লিপস ফাঁস হয় গত ২৯ মে দিবাগত রাতে। তখন থেকেই আবার নতুন করে আলোচনায় রাজ-পরীর সংসার।

রাজের অ্যাকাউন্ট থেকে হওয়া ঐ পোস্টগুলোর পর থেকেই বহুমুখী পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলতে থাকে। তখন রাজের স্ত্রী অভিনেত্রী পরীমনি গণমাধ্যমকে জানান, রাজ আর তার সাথে থাকেন না। এমনকি তার ফোনটাও ধরে না।

এদিকে বাসা থেকে জিনিসপত্র নিয়ে বের হয়ে যাওয়া, ফোন না ধরার যে কথা পরীমনি বলছেন, সেটা ঠিক নয় বলে দাবি করেন রাজ। শনিবার গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘আমি বাসা থেকে কেন বেরিয়ে এসেছি, পরী ভালো করে জানে। কীভাবে বেরিয়ে এসেছি, কেন বেরিয়ে এসেছি, তা-ও সে ভালো করে জানে। ওই দিন বাসায় তার ও আমার পরিচালক গুরু গিয়াস উদ্দিন সেলিম ছিলেন। সঙ্গে তাঁর স্ত্রীও ছিলেন।’

পরীমনির বক্তব্যকে ‘মিথ্যাচার’ অভিহিত করে রাজ বললেন, ‘আমি ঢাকাতেই আছি, কাজ করছি। এরই মধ্যে ‘দেয়ালের দেশ’, ‘ইনফিনিটি’, ‘কাজলরেখা’ ছবিগুলোর ডাবিং শেষ করছি। সুতরাং আমাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, এটা ডাহা মিথ্যা কথা। এসব মিথ্যাচার করে কী লাভ হচ্ছে, তা আমার জানা নাই। আমি সব সময়ই পরীকে সম্মান দিয়ে কথা বলি। কিন্তু সে কেন এমন করে, বুঝি না।’

রাজের বক্তব্য ধরে একই দিন কথা হয় পরীমনির সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘রাজ বাইরে ছিল, সেলিম ভাই ও তাঁর বউ তাকে সঙ্গে নিয়ে বাসায় এসেছিল। সম্ভবত, এটি গত ২০ মের ঘটনা। আসার আগে সেলিম ভাই আমাকে ফোন দিয়ে বললেন, আমি রাজকে সঙ্গে করে নিয়ে তোমার বাসায় আসছি। এসে বলেন, ‘রাজ তো তোমার সঙ্গে থাকতে চায় না। বিচ্ছেদের ব্যাপারে চিন্তা করতে পারো।’ আমি বললাম, ‘ও আমার সঙ্গে থাকতে চায় না, তাহলে ও-ই আমাকে ডিভোর্স দিক। আমি কেন দিতে যাব।’ পরে সেলিম ভাই বললেন, যদি তোমাদের বিচ্ছেদ হয়ে যায়, তাহলে বাচ্চাকে দেখভাল করতে কীভাবে কী করবে, চিন্তাভাবনা করে দেখো। এরপর আমি বললাম, বাচ্চা আমার কাছেই থাকবে। তবে বিচ্ছেদ হওয়ার পর অবশ্যই সে বাচ্চা দেখতে আসতে পারবে। তবে শর্ত, সে অস্বাভাবিক সময় বাসায় আসলে বাচ্চাকে দেখতে দেব না। যদি রাত চারটায় আসে, ভোরবেলায় আসে, তাহলে তো বাচ্চা দেখতে দেওয়ার সুযোগই নাই। স্বাভাবিক, সঠিক সময়ে এসে সে বাচ্চা দেখতেই পারে। কোনো সমস্যা নাই।’

পরী আরও বলেন, ‘এসব বিষয় নিয়ে ওই রাতে সেলিম ভাইয়ের সঙ্গে আমার অনেক কথা-কাটাকাটি হয়। রাজের সঙ্গেও হয়েছে। কারণ, ওই দিন বিভিন্নজনের সঙ্গে মিলিয়ে রাজ আমার চরিত্র নিয়েও অনেক কথা তুলেছিল। একটা পর্যায়ে সেলিম ভাই, তাঁর বউসহ রাজ তার সব জিনিসপত্র নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে। এরপর আর আসেনি।’

পরীর এমন সিদ্ধান্তের ব্যাপারে রাজের মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি খুব হতাশ। ঢাকায় আসার পর থেকে এই দীর্ঘ সময়ে আমি কখনোই এত আপসেট হইনি। আমি এভাবে কখনোই মানসিকভাবে ভেঙে পড়িনি। আমার কাছে আর এসব কথা জানতে চাইবেন না। আমি এসব নিয়ে আর কথা বলতে চাই না, কথা বাড়াতে চাই না। আমি একটু নিরিবিলি, শান্তিতে থাকতে চাই। ’

রাজ-পরীর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে ‘দামাল’ ছবি মুক্তির সময় মিমের সঙ্গে রাজের সম্পর্ক জড়িয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন পরীমনি। মূলত তখন থেকেই রাজ-পরীর সম্পর্কটা স্বাভাবিক যাচ্ছিল না।

বিষয়টি স্বীকার করে পরীমনি বলেন, ‘দামাল ছবির মুক্তির সময় থেকেই আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক যাচ্ছিল না। রাজ আগের মতো নিয়মিত বাসায় থাকত না। সন্তানের প্রতিও তার সে ধরনের দায়িত্ব চোখে পড়েনি।’

কিন্তু এরপরও সিনেমার বা বিভিন্ন ইভেন্টের অনুষ্ঠানে ঘনিষ্ঠভাবে একসঙ্গে দেখা গেছে দুজনকে। এ ব্যাপারে পরীমনির বক্তব্য, ‘এগুলো ছিল রাজের লোকদেখানো। আমার কোনো অনুষ্ঠান থাকলে সঙ্গে সে যেত। বিশ্বাস করেন, কিছুদিন আগে আমি হাসপাতালে ছিলাম, আমাকে দেখতেও যায়নি সে। আমার সঙ্গে তাঁর এখন শারীরিক, মানসিক কোনো অ্যাটাচমেন্টই নাই। আমি যখন হাসপাতালে, তখনই বাসায় রাজ তার জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখেছিল। আগেই প্রস্তুত ছিল বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে। সম্পর্ক রাখবে না। এভাবে তো আর সংসার, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়।’

তাহলে কি বিচ্ছেদের দিকে যাচ্ছে আপনাদের সংসার?—এমন প্রশ্নে ঢাকাই সিনেমার এই অভিনেত্রী বলেন, ‘ও তো আমাকে ছেড়েই চলে গেছে, বিচ্ছেদ তো হয়েই গেছে। আমি আর কল্পনাতেও ভাবতে চাই না শরীফুল রাজ আমার জামাই। একটা মানুষ চলে গেলে তো আর ধরে রাখা যায় না।’ হাসতে হাসতে পরী আরও বলেন, ‘রাজ এখন বলে কী, আমাদের বিয়ের কাবিননামা নাকি ভুল। আমাদের নাকি ঠিকঠিক বিয়েই হয়নি। যে এভাবে বলতে পারে, সে ভয়ংকর মানুষ। তার সঙ্গে থাকা যাবে না। আমি চাই সে আমাকে তালাক দিয়ে দিক। আমি ওর প্রাক্তন, এটাই শুনতে আমার আরাম লাগবে। আমি রাজের বউ, এটি আর শুনতে চাই না।’

দুঃখ করে পরী বলেন, ‘রাজ আমার বাচ্চার বাপ, সেটা অস্বীকার করা যাবে না। আমরা একে অপরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু আমাদের সন্তানের জন্য আফসোস হয়ে থাকবে, বাবা-মাকে নিয়ে সুখী জীবন পাচ্ছে না আমাদের সন্তান। আর এর জন্য দায়ী রাজ। আমাকে দোষ দেওয়ার কোনো সুযোগ নাই। এই সংসার টেকানোর জন্য আমি কী পরিমাণ চেষ্টা করে গেছি, রাজও জানে সেটি।’

কিন্তু সন্তানের দিকে তাকিয়ে কিংবা নিজের উপলব্ধি থেকে যদি রাজ আবার ফিরে আসেন, তাহলে? এ ব্যাপারে পরী বলেন, ‘বিয়ে-সংসার কি মুদিদোকানের মতো কারবার? ফিরে আসার আর সুযোগ নাই। যে মানুষ স্ত্রী, বাচ্চার মার চরিত্র নিয়ে কথা তুলতে পারে, তার সঙ্গে ঘর করার সুযোগ নাই আর।’

সূত্র : প্রধম আলো

ডব্লিউজি/এমএইচএস

শেয়ার করুন:

Recommended For You