অবৈধ করাতকলের রমরমা ব্যবসা, রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

বরগুনার সদর উপজেলার ৭৬ টি করাতকলের মধ্যে ৬২টির নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। ৪১টির কাগজ থাকলেও তার মধ্যে নবায়ন নাই ৭টির। সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমোদন ছাড়াই চলছে এসব করাত কল। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারে মধ্যে গড়ে ওঠা দুই ডজন করাতকলে উজাড় হচ্ছে বনজ সম্পদ। এদিকে অনোনুমোদিত কলের কারণে প্রতি বছর সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয়।

বরগুনা বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলায় যথাযথ প্রক্রিয়ায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত করাতকলের সংখ্যা মাত্র ৪১টি। অপরদিকে লাইসেন্সবিহীন পরিচালিত ৬২টি। এর মধ্যে সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারে মধ্যে রয়েছে ২৫টি।

বন বিভাগের আইন অনুযায়ি, বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে করাতকল স্থাপন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তারপরও এই এলাকার মধ্যে রয়েছে ২৫টি করাতকল। সংরক্ষিত সামাজিক বনায়নের ভেতর, বন ঘেঁষে, এমনকি বন কর্মকর্তাদের কার্যালয়ের কাছেই স্থাপন করা হয়েছে অবৈধ করাতকল।

জানা যায়, সংরিক্ষত বন থেকে চোরাই পথে আনা বিভিন্ন গাছ অবাধে চেরাই ও বিক্রি হচ্ছে এসব করাতকলে। বন উজাড়ের ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বন্যপ্রাণী। এতে হুমকির মুখে পড়েছে প্রাকৃতিক পরিবেশ।

করাতকল বিধিমালা ২০১২ বলা আছে, কোনো সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদন পার্ক, উদ্যান এবং জনস্বাস্থ্য বা পরিবেশের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করে এমন স্থান থেকে কমপক্ষে ২০০ মিটার মধ্যে করাতকল স্থাপন করা যাবে না। সরকারি বনভূমির সীমানা থেকে কমপক্ষে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে এটা নিষিদ্ধ। অথচ এই নিদের্শনা মানছে না কেউ। বিধি-বহির্ভূতভাবে যত্রতত্র বসানো হয়েছে করাতকল। আর এসব কলগুলো দেদার চলার কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বৈধ করাতকলগুলো।

একাধিক করাতকল মালিক জানান, ট্রলারের কাঠ কাটার সূত্র ধরেই করাতকলের ব্যবসা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা থেকে ট্রেড লাইসেন্স করা হয়। কোনো সময় ওপর থেকে কেউ এলে তাদেরকে ম্যানেজ করা হয়।

অপর দিকে অনুমতিপ্রাপ্ত করাতকল মালিকদের অভিযোগ, অবৈধ করাতকলগুলো দেদার চলার কারণে তাদের কলগুলো ভালোভাবে চলছে না। তারা আরো বলেন, বনাঞ্চলের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে করাতকল স্থাপনের সরকারি বিধান না থাকলেও স্থানীয় বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে স্থানীয় লোকজন বনাঞ্চলে গড়ে তুলেছেন ওইসব অবৈধ করাতকল।

স্থানীয়দের অভিযোগ, রেঞ্জ অফিস ও বিট অফিসের নাকের ডগায় মালিকরা করাতকল স্থাপন করে দিন-রাত চোরাই কাঠ চিরাই করছে। সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তা, বিট কর্মকর্তা ও ফরেস্ট গার্ডদের প্রতাক্ষ সহযোগিতায় দিনের পর দিন এসব করাতকল চালু রয়েছে। এসব করাতকল ও অতিরিক্ত গাছ চুরির কারণে প্রতি বছর সরকারের কোটি কোটি টাকার বাগান ধংস হয়ে যাচ্ছে। করাতকলের বিরুদ্ধে অভিযান না থাকায় সংরক্ষিতগুলো বাগান বিরাণভূমিতে পরিণত হচ্ছে। অনুমোদনহীন এসব অবৈধ করাতকলের মাধ্যমে বেপরোয়াভাবে চলছে বৃক্ষ নিধন।

বরগুনা জেলা সচেতন নাগরিক অধিকার কমিটি সনাক এর সভাপতি মনির হোসেন কামাল বলেন, অবৈধ করাতকল বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া দরকার। বন রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। অবৈধ করাত কলে প্রকাশ্যে বনের গাছ চিরাই ও পাচার হচ্ছে। এতে পরিরেশের ভারসাম্য নষ্ট ও মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

বরগুনা বনবিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মতি মিয়া অবৈধ করাতকলের দাপটের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, এসব অবৈধ করাতকলের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছ। অনেকের বিরুদ্ধে মামলাও চলছে। যারা অবৈধভাবে চালাচ্ছে তাদেরকে ইতোমধ্য নোটিশ দেয়া হয়ছে। অনেকে লাইসেন্স পেতে অবেদন করছে। বাকিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে করাতকল স্থাপনের সঙ্গে আমি কিংবা আমার বিট অফিসারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

বন বিভাগের পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, অবৈধ ও অনুমোদনবিহীন করাতকলের তালিকা জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়েছে। করাতকল মালিকদের বনবিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সর্তক করে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এদের উচ্ছেদ করতে হলে প্রশাসনের সহযোগিতা প্রয়োজন।

ডব্লিউজি/এমএইচএস

শেয়ার করুন:

Recommended For You