

বুধবার,১৯ জুন ২০২৫ , ছবি সংগৃহীত,
আষাঢ় এসেছে তার চিরচেনা রূপে—কালো মেঘ, দমকা হাওয়া আর অবিরাম বর্ষণে। কিন্তু খুলনার আকাশে বর্ষার ঘনঘটা এবার যেন শুধুই রোমান্টিকতা নয়—বরং দুর্ভোগ, হাহাকার আর ক্ষতির এক ভয়াবহ বাস্তবতা। গেল চার দিনে খুলনায় রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছে—১৮০ মিলিমিটার, যার মধ্যে শুধুমাত্র মঙ্গলবারেই পড়েছে ৬৩ মিলিমিটার। এই ভারী ও মাঝারি বৃষ্টিতে খুলনার দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা তলিয়ে গেছে।
খুলনার নগরজীবনে এখন নিত্যদিনের চিত্র—জলাবদ্ধ রাস্তা, ভেঙে পড়া যানবাহন, পানিবন্দি মানুষ। বিশেষ করে শিববাড়ি মোড়, রূপসা ফেরিঘাট, গোয়ালখালী, ময়লাপোতা, বয়রা বাজার, বাস্তব হারা কলোনি এবং খালিশপুর এলাকার অলিগলি এমনকি প্রধান সড়কগুলো হাঁটু থেকে কোমর সমান পানিতে ডুবে গেছে।
ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকেজো হয়ে পড়ায় আবর্জনাযুক্ত নোংরা পানি রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ছে। নগরবাসী বলছেন, প্রতিবার বর্ষায় আমরা জলাবদ্ধতায় ডুবি, কেএমসি (খুলনা সিটি করপোরেশন) কেবল আশ্বাস দেয়, কাজ হয় না।
ডব্লিউ জি নিউজ সর্বশেষ জানতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন।
খুলনার খালিশপুর এলাকার রিকশাচালক মো. মজনু মিয়া বললেন, ঘরে বসে থাকলে আয় নেই, বের হলে সড়কে পানি—যাত্রী পাওয়া যায় না। ঈদ গেলো জমানো টাকা শেষ, এখন প্রতিদিন মনে হয় কষ্টটাই নিয়তি।
শুধু মজনু মিয়া নন, এমন অসংখ্য খেটে খাওয়া মানুষ এখন দিশেহারা। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দিনমজুর, হকার, অটোরিকশা চালক—সবাই একই দুর্দশার কথা বলছেন।
জলাবদ্ধতা শুধু শহরের মানুষকে নয়, বিপন্ন করে তুলেছে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও গ্রামীণ অর্থনীতিকেও। খুলনার গোয়ালখালী বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন এলাকায় বিশাল একটি ফলজ বাগান পানির নিচে তলিয়ে গেছে। শতাধিক নারকেল, সুপারি ও লেবু গাছ কয়েক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দি। গাছের গোড়া পচে গাছে ফল ধরছে না, অনেকে গাছ কেটে ফেলছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ মিন্টু বলেন, তিন বছর আগেও পানি যেত পাশের খাল দিয়ে, এখন সেটাও বন্ধ। বলেছি মেয়রকে, কাউন্সিলরকে—কেউ কিছু করে না। এখন বাড়ি ঘর, গাছপালা সব পানিতে ডুবে থাকছে। আমরা মরার আগে মরছি।
অন্যদিকে, মাছ চাষিরাও আতঙ্কে। অতিরিক্ত বৃষ্টির পানিতে মাছের ঘের উপচে মাছ বের হয়ে যাচ্ছে। জলাবদ্ধ ঘেরগুলোতে মাছের অক্সিজেন সংকট তৈরি হচ্ছে, মারা যাচ্ছে রেণু মাছ।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানিয়েছেন, আষাঢ় মাসের শুরু থেকেই সক্রিয় রয়েছে মৌসুমি বায়ু। আজও মাঝারি ও ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে আগামীকাল শুক্রবার নাগাদ মেঘ কমে যেতে পারে এবং সূর্যের দেখা পাওয়া যেতে পারে। তবে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি কিছু জায়গায় অব্যাহত থাকতে পারে।
খুলনার নাগরিকদের মতে, বৃষ্টি কোনো নতুন বিষয় নয়। কিন্তু প্রতিবছর একই দুর্ভোগ, একই জলাবদ্ধতা প্রমাণ করে, সিটি করপোরেশন বাস্তবধর্মী পরিকল্পনা করতে ব্যর্থ। কোটি কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের নামে শুধুই প্রাচার হয়, বাস্তবে জলাবদ্ধ রাস্তায় হেঁটে বাঁচতে হয় খেটে খাওয়া মানুষদের।
নগরবাসীর আকুতি—ড্রেনেজ ব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে, খাল খনন ও সংরক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে, নতুন ভবন ও রাস্তার অনুমোদনের আগে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা পর্যালোচনা করতে হবে।
এখন দেখার বিষয়—এই বর্ষা পার হলে আবার কি ভেসে যাবে নগরবাসীর অভিযোগ, নাকি দৃষ্টান্তমূলক উদ্যোগ নেবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ?
মেহেদী হাসান, খুলনা প্রতিনিধিঃ ডব্লিউ জি নিউজ