

রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫ ইং, ছবি সংগৃহীত,
খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রাঙ্গণ যেন হঠাৎই উত্তপ্ত জনতার আদালতে পরিণত হয়।
রবিবার (১৫ জুন) আদালতে আত্মসমর্পণ করা মাত্রই বিএনপি নেতাকর্মীরা ছুটে যান খুলনা সদর থানার সাবেক ওসি হাসান আল মামুনের দিকে। কেউ ছুঁড়ে মারেন পচা ডিম, কেউ পাথর— কেউ কেউ ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্লোগানে:
হত্যার বিচার চাই, চোখ ফোড়া ওসির দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই!
ডব্লিউ জি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন।
বিক্ষুব্ধ জনতার মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয় আদালত প্রাঙ্গণে।
২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি, খুলনার কে ডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির একটি সমাবেশে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। অভিযোগ অনুযায়ী, তখনকার ওসি হাসান আল মামুন নিজ হাতে বিএনপি নেতা ফখরুল আলমকে বেধড়ক মারধর করেন। সেই লাঠির আঘাতেই ফখরুলের একটি চোখ চিরতরে নষ্ট হয়ে যায়।
দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে ২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট ফখরুল আলম নির্যাতন ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন ওসি হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে।
মামলায় উচ্চ আদালতের জামিনে থাকা হাসান আল মামুন রবিবার খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। তার পক্ষে জামিন আবেদন করা হলে রাষ্ট্রপক্ষ তাতে বিরোধিতা করে।
পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এ কে এম শহিদুল আলম বলেন, তিনি আইনের একজন রক্ষক ছিলেন। কিন্তু সেই আস্থা ও দায়িত্বের অপব্যবহার করে একজন রাজনৈতিক নেতার চোখ নষ্ট করেছেন। আদালত আমাদের যুক্তি মেনে নিয়ে জামিন নামঞ্জুর করেন।
অবশেষে আদালত তার জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
কারাগারে যাওয়ার আগে হাসান আল মামুন জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জ মডেল থানার ওসি হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে অতীতে আরও কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ থাকলেও এই ঘটনাই সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর এবং প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জবাবদিহির দাবি আরও জোরালো করল। পুলিশের নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিচার পাওয়া সম্ভব— এই বার্তা সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন,
এই রায় এক ধরনের ন্যায়বিচার। আমরা চাই, অতীতের সব ধরনের পুলিশি নির্যাতনের বিচার হোক।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে আইনের সীমা লঙ্ঘনকারী একজন ওসি আজ খোদ আদালতের রায়ে কারাগারে। আর সেই রায়ের সাক্ষী হলো সেই আদালত প্রাঙ্গণ, যেখানে প্রতিধ্বনিত হয়েছে জনতার ঘৃণা ও প্রতিশোধের আওয়াজ।
মেহেদী হাসান, খুলনা প্রতিনিধিঃ ডব্লিউ জি ডিজিটাল