রক্ষণাবেক্ষণ আর সংস্কারের অভাবে বরগুনার তালতলী উপজেলার সংরক্ষিত বনে প্রতিষ্ঠিত ‘সোনাকাটা ইকোপার্কটি’ বেহাল হয়ে পড়েছে। একই সাথে দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে ভাঙা রাস্তা ও নির্মাণাধীন সেতু ফেলছে চরম ভোগান্তিতে। এতে আগ্রহ হারাচ্ছেন দর্শনার্থীরা। কমছে পর্যটক রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
বন বিভাগ সূত্র জানা যায়, ইকো-ট্যুরিজম সুযোগ বৃদ্ধি শীর্ষক কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে টেংরাগিরি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সখিনা বিটে ২০১০-১১ ও ২০১১-১২ অর্থবছরে ২ কোটি ৬৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ৬৩৪ একর জমির উপর ৯৬ হাজার ৬শ’টাকা ব্যয়ে একটি ইকোপার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়। এসময় বনের ভেতরে পর্যটকদের জন্য বনভোজনের স্থান, চলাচলের জন্য বনের ভেতরে ছোট ছোট খালের ওপর ১৬টি কাঠের সেতু, ৪টি গভীর নলকূপ, ৪টি শৌচাগার, ৪টি বিশ্রামাগারসহ ইটের সাড়ে ৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়ক নির্মাণ করা হয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ১২ বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত কোন ধরনের দৃশ্যমান সংস্কার করা হয়নি।
সরেজমিনে দেখা যায়, টেংরাগিরি ইকোপার্কের প্রবেশদ্বারে দীর্ঘদিন ধরে সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় ঘুরতে আসা পর্যটকরা পড়ছে ভোগান্তিতে। কিছু পর্যটক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ডিঙি নৌকায় পারাপার হলেও কেউ কেউ ফিরে যাচ্ছেন। পার্কে চলাচলের সুবিধার্থে ছোট ছোট খালের ওপর নির্মিত সেতুগুলো পারাপারের অনুপযোগী। সড়কের ইট উঠে যাওয়ায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গভীর নলকূপের হাতল ভাঙা ও অকেজো, শৌচাগারের দরজা-জানালা ও বেসিন ভেঙে পরিত্যক্ত পড়ে আছে। বন্যপ্রাণীদের থাকার স্থানের চারপাশে নির্মিত লোহার গ্রিলে মরিচা ধরে ভেঙে পড়ে রয়েছে। দেয়ালের পলেস্তারাও খসে পড়েছে। ইকোপার্কের ভেতরে কুমির প্রজনন কেন্দ্রের অবস্থাও ঝুকিপূর্ণ। এছাড়াও বনের ভেতরে চিতা বাঘ, হরিণ, শূকর, অজগর, কুমির, কাঠবিড়ালী, বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী হুমকিতে রয়েছে।
সর্বশেষ আপডেট পেতে ভিজিট করুন https://worldglobal24.com/
ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক শামীম হোসেন বলেন, এই ইকোপার্কে আসতে হলে একটি বড় খাল ডিঙি নৌকায় পারাপার হতে হয়। এতে জীবনের ঝুঁকি রয়েছে। এছাড়াও বন্য প্রাণীদের জন্য নির্মিত বেষ্টনী নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি বেষ্টনী দেয়াল হেলে পড়েছে। এছাড়াও নানাবিধ সমস্যা রয়েছে। পর্যটনবান্ধব এলাকা হিসেবে গড়ে তুলতে হলে কতৃপক্ষের বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়া উচিৎ।
ইকোপার্কে ঘুরতে আসা একটি বেসরকারি সংস্থার প্রকৌশলী নাজমুল আলম বলেন, আমি ব্যক্তিগভাবে খুবই হতাশ অনেক দূর থেকে দ্বিতীয় সুন্দরবন খ্যাত টেংরাগিরি ইকোপার্ক দেখতে এসেছিলাম পার্কের ভেতরে পরিবেশ খুবই ঝুকিপূর্ণ। পার্কের ভেতরে পায়ে হাঁটা সড়ক চলাচলের অনুপযোগী। খাবার পানির ব্যবস্থা নেই, শৌচাগার ব্যবহার অনুপযোগি। কাঠের পুলগুলো ভাঙাচোরা। হরিণগুলো খাদ্যাভাবে কংকালসার। অনেক সম্ভাবনাময় এই ম্যানগ্রোভ বনটি সংস্কার ও আধুনিক করা হলে সরকার যেমন রাজস্ব পেতেন এবং আমারা আত্মার খোরাক পেতাম।
পরিবেশকর্মী আরিফ রহমান বলেন, ইকোপার্কটিতে একসময় বিপুল সংখ্যক পর্যটক ঘুরতে আসত। কিন্তু অব্যবস্থাপনা ও অবহেলার কারণে অপার সম্ভানাময় পর্যটনকেন্দ্রটি পর্যটকদের আগ্রহ হারাচ্ছে। এতে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। তাই বর্তমান সরকারের এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
এ বিষয়ে বন বিভাগের তালতলী রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মতিয়ার রহমান বলেন, ইকোপার্ক সংস্কারের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশাকরি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।
উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা বলেন, আমি এই উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছি, ইকোপার্কটি পরিদর্শন করে পর্যটন বান্ধব করার জন্য যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।