
চট্টগ্রাম নগরে ফেসবুকে একটি ধর্মীয় সংগঠন নিয়ে দেওয়া পোস্ট শেয়ার করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে যৌথ বাহিনীর ওপর একদল উচ্ছৃঙ্খল লোকের হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৮২ জনকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বুধবার (৬ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) কমিশনারের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান উপ-কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) মো. রইছ উদ্দিন। তিনি মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) সন্ধ্যা ও রাতের ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন সেখানে।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি, যারা এ ঘটনায় জড়িত ছিল, তারা ‘জয় শ্রীরাম’ বলে শ্লোগান দিয়েছে। এছাড়া ফেসবুকে যে ধরনের প্রচার-প্রচারণা, গোয়েন্দা তথ্য বিচার বিশ্লেষণ করে আমরা এখন পর্যন্ত জানতে পেরেছি, ইসকন সমর্থকরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। পোস্ট শেয়ার করা ওসমান আলী পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন।
হাজারী লেনের দোকানপাট বন্ধ রাখা সম্পর্কে পুলিশের কর্মকর্তা মো. রইছ উদ্দিন বলেন, চট্টগ্রামকে শান্তি-শৃঙ্খলার নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এই শান্তি শৃঙ্খলার পথে যারা বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে, যারা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে তারা কখনোই শুভবুদ্ধির পরিচয় দেয় না, এটা আমরা ধরে নিতে পারি। শান্তির পক্ষে, শৃঙ্খলার পক্ষে অবশ্যই আমাদের অগ্রযাত্রা থাকবে। নিরাপত্তার স্বার্থেই এখন দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে। সেখানকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য যৌথ বাহিনীর টিম মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাৎক্ষণিকভাবে ৮২ জনকে আটক করা হয়েছে। কোতোয়ালী থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর হামলা হয়েছে, তাই পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। কার কতটুকু সংশ্লিষ্টতা আছে, তা যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
ঘটনার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক ও গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে কি-না তা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়ে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, চট্টগ্রাম নগরীকে শান্তি-শৃঙ্খলার নগর হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। শান্ত নগরীকে যারা বিশৃঙ্খল করতে চায় তাদের ব্যাপারে আমাদের সব সময় কার্যক্রম চলমান। একটি ইস্যু তৈরি করে কেউ যেন এখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে লুটতরাজ বা অশুভ তৎপরতা চালাতে না পারে, সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক আছি। এই ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত নাকি তাৎক্ষণিকভাবে করা হয়েছে, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এদিকে দুপুরে নগরের দামপাড়ায় সেনাবাহিনীর ৩৪ কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের সদর দপ্তরে যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে পৃথক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। যৌথবাহিনীর পক্ষে টাস্কফোর্স-৪ এর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাচাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত দুষ্কৃতকারীদের শনাক্তকরণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। আটক ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট থানায় প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদসহ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতে হস্তান্তরের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে এবং হাজারি গলিসহ নগরীর অন্যান্য এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এই সেনাকর্তা বলেন, ‘আইন তার নিজস্ব ধারায় চলবে। মাঠপর্যায়ে আমরা গোয়েন্দা তথ্য যাচাই বাছাই করছি। সে অনুযায়ী আমরা আইনি প্রক্রিয়াগুলো সম্পন্ন করবো। সরকার পতনের পর যেসব শান্তিপূর্ণ সমাবেশ হয়েছে, সেসব সমাবেশে যেন শান্তি বিঘ্নিত না হয় আমরা সেজন্য সরকারের গাডলাইন অনুযায়ী কাজ করেছি।’
হাজারি গলির দোকান সিলগালার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু ওই এলাকায় সেনা ও পুলিশ সদস্যের ওপর এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে-সেই প্রেক্ষিতে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে দোকানগুলো সিলগালা করা হয়৷ আমরা সংশ্লিষ্টতা খুঁজে বেড়াচ্ছি। অতিসত্তর তদন্তকার্যক্রম শেষ করে দোকানগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করা হবে।’
আটক ব্যক্তিদের রাজনৈতিক পরিচয় রয়েছে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীদের কোনো পলিটিক্যাল পরিচয় আসলে আসে না। তাদের জাতি, ধর্ম, বর্ণ নেই।’
সংবাদ সম্মেলনে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (জনসংযোগ) কাজী মো. তারেক আজিজ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র্যাব) প্রতিনিধি।