রোহিঙ্গা সংকট: জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক

রোহিঙ্গা সংকট: জাতিসংঘের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ড. ইউনূসের বৈঠক

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে উচ্চ-পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়েছে। এতে মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত জুলি বিশপ, জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্ডি ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় দুপুর ৩টায় অনুষ্ঠিত সভাটির সহ-আয়োজক ছিল ইন্দোনেশিয়া, গাম্বিয়া, তুরস্ক, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে অংশ নিয়ে প্রথম দিনেই রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা করেন তিনি।

কি-নোট স্পিকার হিসেবে  ড. ইউনূস তার বক্তৃতায় বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিবকে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় দ্রুত কনফারেন্স আয়োজন করতে হবে, যা সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সৃজনশীল ও কার্যকরী পন্থা নির্ধারণ করবে।

তিনি বলেন, জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের ‘জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান’কে আরও বেগবান করতে হবে এবং রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গণহত্যার মতো অপরাধের বিচার ও জবাবদিহিতায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন চাইতে হবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব নেতাদের স্মরণ করিয়ে দেন যে, বাংলাদেশ প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে এবং প্রতিবছর ৩২ হাজার নতুন শিশু জন্ম নিচ্ছে। সম্প্রতি ২০ হাজার নতুন শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট বাংলাদেশে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত চাপ তৈরি করছে, যা নিরাপত্তা ঝুঁকিরও জন্ম দিচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, জাতিসংঘের বিভিন্ন মহল মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু সংকটের মূল সমস্যার সমাধান না হওয়ায় তা কার্যকর হয়নি।

তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষায় অংশীজনদের সঙ্গে কাজ করার বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং রাজনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে সংকটের উত্তরণের বার্তা দেন।

সবার আগে সর্বশেষ সংবাদ পেতে ভিজিট করুন https://worldglobal24.com/latest/

রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে ড. ইউনূসের তিন প্রস্তাব

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার অত্যাচারের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগণের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন নিয়ে তিনটি প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ড. ইউনূসের তুলে ধরা তিনটি প্রস্তাবনা

১.  জাতিসংঘের মহাসচিবকে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় দ্রুত কনফারেন্স আয়োজন করতে হবে, যা সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে সৃজনশীল ও কার্যকরী পন্থা নির্ধারণ করবে।
২.  জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের ‘জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান’কে আরও বেগবান করতে হবে এবং
৩. রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গণহত্যার মতো অপরাধের বিচার ও জবাবদিহিতায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন চাইতে হবে।

রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন অনুদানের ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের

মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা হিসেবে নতুন করে ১৯৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুদান ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে, এই অনুদানের ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিবে স্টেট ডিপার্টমেন্টের পপুলেশন, রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেশন (পিআরএম) বিভাগ। বাকি ১২৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবে ইউএসএআইডি। সংস্থাটির দেওয়া অনুদানের ৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আসবে দেশটির কৃষি বিভাগ থেকে। এই বিভাগ দেশটির কৃষকদের কাছ থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য কেনা, পরিবহন এবং বিতরণে সাহায্য করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই সহায়তা রোহিঙ্গাদের সহিংসতা এবং নিপীড়ন থেকে বাঁচতে সহায়তা করবে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, এই অনুদান শরণার্থীদেরকে দ্রুত দেশে ফেরার জন্য প্রস্তুত করবে।

২০১৭ সালের আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি আর্থিক অনুদান পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

এর মধ্যে দুই দশমিক এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অনুদান এসেছে বাংলাদেশে। অনুদানের এক দশমিক তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলারই এসেছে দেশটির পপুলেশন, রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেশন (পিআরএম) বিভাগ থেকে। বাংলাদেশে সংকট-পীড়িত জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদানে যুক্তরাষ্ট্র অঙ্গীকারবদ্ধ বলে জানিয়েছে দেশটির দূতাবাস।

 

 

ডব্লিউজি/এমএসআই

 

শেয়ার করুন:

Recommended For You