কক্সবাজার সদর হাসপাতাল ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, রোগীরা ছুটছেন বেসরকারি হাসপাতালে

কক্সবাজারে চিকিৎসককে মারধর: সরকারিতে সেবা বন্ধ হলেও চালু আছে বেসরকারি হাসপাতালে 
কক্সবাজার সদর হাসপাতালে এক চিকিৎসককে মারধরের ঘটনায় কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচী দেয় চিকিৎসকসহ নার্স কর্মকর্তা কর্মচারীরা। তবে বেলা ১২ টার পর প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর সাথে এক বৈঠকের প্রেক্ষিতে সীমিত পরিসরে জরুরি বিভাগের সেবা চালুর কথা জানান হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো। কিন্তু দুপুর ২টা পর্যন্ত কোথাও চিকিৎসকদের অবস্থান দেখা যায়নি। চিকিৎসক-নার্সদের চেয়ার গুলো শূন্য পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টায় হাসপাতালের সিসিইউতে চিকিৎসাধীন এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে মারধরের শিকার হন ডা. সজীব কাজী নামের এক চিকিৎসক। হামলার শিকার সজীব হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ও সিসিইউতে কর্মরত ছিলেন।
হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রোগীর মৃত্যুর পর স্বজনরা সিসিইউতে প্রবেশ করে প্রথমে চিকিৎসকের কক্ষ ভাঙচুর চালায়। পরে চিকিৎসক সজীবকে মারধর করতে থাকে। এক পর্যায়ে তাকে টেন-হেঁচড়ে মারতে মারতে চারতলা থেকে নিচে নামিয়েও মারধর করতে থাকে। এ সময় হাসপাতালে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে অন্য চিকিৎসকরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে। এরপরই হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্তদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবিতে জরুরি বিভাগসহ কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করে চিকিৎসকরা।
এদিকে চিকিৎসকরা কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা দিয়ে কর্মবিরতি পালন করায় বিপাকে পড়েছেন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা জনসাধারণ। ২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে ডেঙ্গুসহ নানা রোগের প্রায় আট শতাধিক রোগী ভর্তি রয়েছেন।
ডেঙ্গু পজিটিভ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীর স্বজন খালেদ হোসেন আবরার জানান, চিকিৎসা বন্ধ থাকায় তারা চরম আতঙ্কিত সময় পার করছেন। নার্সরা কিছুটা সেবা দিলেও চিকিৎসক না আসায় তারা চিন্তিত।
আন্দোলনরত মেডিকেল অফিসাররা জানান, হাসপাতালে তাদের কোন নিরাপত্তা নেই। যেভাবে তাদের সহকর্মীর উপর হামলা হয়েছে, তাতে তার মৃত্যু হতে পারতো। তাই যতক্ষণ তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হবে ততক্ষণ তারা কর্মবিরতি করবেন।

সবার আগে সর্বশেষ সংবাদ পেতে ভিজিট করুন https://worldglobal24.com/latest/

একই সাথে কর্মবিরতিতে আছে নার্স ও কর্মকর্তা কর্মচারীরাও। শুভজিৎ রুদ্র নামের একজন জানান, তারা কাজ করতে গিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এদিকে দুপুর ১২ টা থেকে হাসপাতালে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।
হামলার বিষয়ে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মং টিং ঞো সাংবাদিকদের বলেন, রোগীর অবস্থা ক্রিটিকাল ছিলো। রোগীর এমন পরিস্থিতিতে তাকে কার্যকর সেবা দেয়ার জন্য স্বজনদের দরকার হয়। কিন্তু ওই সময় স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন না। তারপরও আমাদের চিকিৎসক সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন, যার কোনো ঘাটতি ছিলোনা। তারপরও চিকিৎসকের উপর হামলা করা হয়।
তত্ত্বাবধায়ক বলেন, হামলাকারীরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলমান রাখার ঘোষণা দিয়েছে চিকিৎসকরা। কিন্তু তারা সেবা না দিলে সমস্যা তো হবেই। আমরা চেষ্টা করছি বিষয়টি সমাধানের। প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে একটি বৈঠক হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে জরুরি সেবা তারা শুরু করেছেন।
চিকিৎসকদেরটা একটি মানবিক পেশা, মানুষের জীবন মরনের সাথে এর সম্পর্ক রয়েছে, তাই তারা দ্রুত অপরাধীদের গ্রেফতার দাবী করেন। যার প্রেক্ষিতে কাজে যোগ দিবেন চিকিৎসকরা। সেইসাথে চিকিৎসকদের জীবনের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে।
এদিকে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসাধীন প্রায় ৮শ রোগী বিপাকে পড়েছে। অনেকে পার্শ্ববর্তী বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন। তবে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা বন্ধ থাকলেও সেবা চালু আছে বেসরকারি হাসপাতাল গুলোতে।
দুপুর ২ টার পর জেলা সিভিল সার্জন ডা. আসিফ আহমেদ হাওলাদারের কাছে জানতে চাওয়া হয় চিকিৎসা সেবা বন্ধ নিয়ে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে দুইজন অপরাধীকে গ্রেফতারের হয়েছে। জরুরি সেবা চালু করা হয়েছে। দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।
জরুরি সেবা চালুর কথা বলা হলেও চেম্বার গুলোতে চিকিৎসকদের অবস্থান নেই, এমন বিষয়টি তার নজরে আনা হলে তিনি বলেন, সেবা শুরু হয়েছে, হয়তো চেয়ারে দেখা যাচ্ছেনা।সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হলেও, চিকিৎসকরা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন কেনো এমন প্রশ্নে সিভিল সার্জন বলেন, এই বিষয়টি তার জানা নেই।
শেয়ার করুন:

Recommended For You