কুতুবদিয়ায় ঘাট পারাপার ব্যবস্থাপনার যৌক্তিক সংস্কার দাবি

কুতুবদিয়ায় ঘাট পারাপার ব্যবস্থাপনার যৌক্তিক সংস্কার দাবি
কক্সবাজার জেলার দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় ঘাট পারাপার সংক্রান্ত অব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলমান বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দাবি করে বিবৃতি প্রদান করেছেন কুতুবদিয়াররী ২৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক। শনিবার (৩১ আফস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ সমাধান দাবি করেন ‘বিশিষ্ট নাগরিকরা’।
বিবৃতিতে তাঁরা ঘাট পারাপার সংক্রান্ত নৈরাজ্য ও অচলায়তনের বিরুদ্ধে কুতুবদিয়ার ছাত্র-জনতার চলমান আন্দোলনের সাথে সংহতি প্রকাশ করেন এবং এর যৌক্তিক সংস্কার দাবি করেন।
বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় প্রায় দুই লাখ মানুষের বসবাস। দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ায় এ দ্বীপে যাতায়াতে ঘাট পারাপারের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়– মগনামা, বড়ঘোপ,দরবার ঘাট, ধূরুং ঘাট পারাপারে দীর্ঘদিন ধরে নৈরাজ্য পরিলক্ষিত হচ্ছে।
বিবৃতিদাতারা আরো বলেন– অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করা, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ফিটনেসবিহীন জলযান ব্যবহার না করা, সী-ট্রাকের ব্যবস্থা করা, ঘাট ব্যবস্থাপনাকে সিন্ডিকেটমুক্ত করা ইত্যাদি দাবি কুতুবদিয়ার সর্বস্তরের জনগণ, নিয়মিত যাত্রী, পর্যটক, ব্যবসায়ী সবার। তাই তাঁরা কুতুবদিয়ার সচেতন নাগরিক হিসেবে গণমানুষের কল্যাণে ঘাট ব্যবস্থাপনায় জরুরি কিছু সংস্কার দাবি করেছেন। যা সকলের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করবে এবং ঘাট ব্যবস্থাপনাকে আরও সুসংগঠিত এবং সুশৃঙ্খল করবে বলে তাঁরা বিশ্বাস করেন।

সবার আগে সর্বশেষ সংবাদ পেতে ভিজিট করুন https://worldglobal24.com/latest/

বিশিষ্ট নাগরিকদের ৬টি দাবি—
০১. বোট ভাড়া ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা:
দীর্ঘদিন ধরে কুতুবদিয়া চ্যানেলের স্বল্প দূরত্ব পাড়ি দিতে দূরত্বের তুলনায় অযৌক্তিকভাবে অধিক ভাড়া নেওয়া হচ্ছে, যা যাত্রীদের জন্য অসহনীয়। কাজেই বোট ভাড়ার হারের যৌক্তিক সংস্কার করে কমিয়ে সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আসা এ মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি জরুরি। অনেক সময় ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল বহন করার কারণে যাত্রীদের জীবন ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে। সেইজন্য ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী তোলা বন্ধ করতে হবে এবং প্রতিটি বোটে লাইফ জ্যাকেটসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সামগ্রীর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া অনেক সময় নির্ধারিত সময়ের চেয়ে অনেক দেরিতে ঘাট ছাড়ার ফলে যাত্রীদের বিভিন্ন কাজে মূল্যবান সময় নষ্ট হচ্ছে, যা অনতিবিলম্বে সমাধান করতে হবে।।
০২. টিকেট সিস্টেমের প্রবর্তন ও নজরদারি:
জনগণের ভোগান্তি লাঘবে ঘাটে টিকেট সিস্টেম চালু করা অত্যন্ত জরুরি। কুতুবদিয়া চ্যানেল পারাপারের জন্য একক টিকেটের মাধ্যমে যাত্রীদের ভ্রমণ নিশ্চিত করতে হবে, যেখানে জেটি ভাড়ার নামে প্রতি ঘাটে অতিরিক্ত যে টাকা নেওয়া হয় তা বন্ধ করে জেটি ভাড়া বোট বাড়ার সাথে সমন্বয় করতে হবে। ঘাটের সকল কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরার আওতায় রাখতে হবে। প্রতিটি বোট চালককে ছবি সংবলিত পরিচয়পত্র পরিধান করতে হবে এবং বোটের নাম্বার স্পষ্টভাবে প্রদর্শন করতে হবে। পাশাপাশি, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর মাধ্যমে এসব কার্যক্রমের নিয়মিত তদারকি করা দরকার।
০৩.পণ্যসামগ্রীর ভাড়ার হারের তালিকা প্রদর্শন ও রশিদ প্রদান:
ঘাটে ইজারাদারদের ছবিসহ কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত পণ্যসামগ্রীর ভাড়ার হারের তালিকা প্রকাশ করা উচিত। এ তালিকা ঘাটের প্রতিটি জেটিতে দৃশ্যমান স্থানে টাঙিয়ে রাখা আবশ্যক। মালামাল বহনকারী যাত্রী/ব্যবসায়ীদের অবশ্যই বাধ্যতামূলকভাবে রশিদ প্রদান করতে হবে, যাতে কোনো আর্থিক অনিয়ম না ঘটে।
০৪. ফিটনেসবিহীন বোট অপসারণ ও ঘাটের পরিচ্ছন্নতা: 
নৌপথ থেকে ফিটনেসবিহীন বোট তুলে ফেলা অত্যন্ত জরুরি। ঘাটের যাত্রী চাউনি ও গণশৌচাগার নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। মালামাল রাখার নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম ছাড়া অন্য কোথাও মালামাল রাখা যাবে না। রাতে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ঘাটে পর্যাপ্ত লাইটিং এর ব্যবস্থা করতে হবে।
০৫. সী-ট্রাকের ব্যবস্থা করা:
পর্যটক আকর্ষণ ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় যাত্রী পারাপারের কথা বিবেচনা করে সী-ট্রাকের ব্যবস্থা করা।পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ স্পিড বোটের ব্যবস্থা করা।
০৬. বিশেষ সহায়তা ও শিষ্টাচার:
রোগী ও লাশ পরিবহন এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে হবে। ব্যবসায়ী, পর্যটক, প্রবাসী এবং বরযাত্রীদের অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে হয়রানি বন্ধ করতে হবে। ঘাটের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের আচরণকে মার্জিত ও শালীন রাখতে হবে।
সবশেষে বিশিষ্ট নাগরিকেরা জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে জেলা প্রশাসনকে ছাত্র-জনতা, বোট মালিক, ইজারাদার, স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে আলোচনাপূর্বক কুতুবদিয়ার ঘাট পারাপার ব্যবস্থাপনার যৌক্তিক সংস্কারে উপর্যুক্ত দাবির প্রেক্ষিতে দ্রুত ও কার্যকর সমাধানের উদ্যোগ গ্রহণ করার আহবান জানান।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা বিশিষ্ট নাগরিকেরা হলেন—
০১. আ, ম, ম নাসির উদ্দিন,সাবেক সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।
০২. মোঃ আবুল কাশেম, সহকারি কমিশনার (অবঃ), বাংলাদেশ কাস্টমস।
০৩. মোঃ মনজুরুল আনোয়ার, প্রধান (অবসরপ্রাপ্ত ),পরিকল্পনা কমিশন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
০৪. অধ্যাপক ড. গোলাম এম মাতবর,ডিন,সোশ্যাল ওয়ার্ক,মনমাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকা।
০৫. মো. জহিরুল আলম এফসিএ, সাবেক সিনিয়র ফাইন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট স্পেশালিস্ট বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স সেক্টর ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়।
০৬.রেজাউল করিম চৌধুরী,নির্বাহী পরিচালক, কোস্ট ফাউন্ডেশন।
০৭. এড. মোঃ আলমগীর কবির,এডভোকেট ,বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট (আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ) ও সাবেক সহকারী এটর্নি জেনারেল ।
০৮. মুফতি মুহাম্মদ মুহিববুল্লাহিল বাকী,সাবেক সিনিয়র ইমাম, ও ভারপ্রাপ্ত  খতিব, বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ, ঢাকা।
০৯. মোয়াজ্জেমুল হক,যুগ্ম সম্পাদক, দৈনিক জনকণ্ঠ ,নির্বাহী সদস্য, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব।
১০. ইঞ্জিঃ মোহাম্মদ আলমগীর, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পেরিস্টাইল প্রোপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিঃ।
১১. মো. সাব্বিরুল আলম চৌধুরী, পরিচালক ,বাংলাদেশ ব্যাংক।
১২. ফরিদ উদ্দিন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, হিউম্যান কেয়ার ফাউন্ডেশন এবং প্রাক্তন মহাব্যবস্থাপক, গ্রামীণ ব্যাংক।
১৩. অধ্যাপক ড. জয়নাল আবেদিন, সাবেক ডিন ও চেয়ারম্যান , মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ, ডুয়েট।
১৪. কাজী আজিজ সোবহান, সিইও, প্রেস্টিজ ফিড এন্ড ইনগ্রেডিয়েন্ট, ঢাকা ।
১৫. ড. এস এম মিজানুর রহমান,অধ্যাপক, এনটোমলজি বিভাগ, শেরে-বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
১৬. মোমেন আকসা, সিইও, পিনকন ফ্যাশন সোর্সিং।
১৭. মোহাম্মদ কাইছার, নির্বাহী প্রকৌশলী, রাজউক ও প্রকল্প পরিচালক,  মাদানি এভিনিউ প্রকল্প, রাজউক,  ঢাকা।
১৮. প্রফেসর গিয়াসউদ্দিন, সাবেক অধ্যক্ষ, কক্সবাজার সরকারি কলেজ ।
১৯. অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ আবদুল হান্নান, সুপ্রিম কোর্ট অব্ বাংলাদেশ ও চেয়ারম্যান, আইন বিভাগ,
বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ।
২০. ড. নূর্শেদুল মামুন,সহকারী অধ্যাপক, ইলেকট্রনিক এন্ড টেলিকমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, চুয়েট।
২১. প্রকৌশলী  সঞ্জয় দাশ, সহকারী অধ্যাপক , পুর কৌশল বিভাগ, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম।
২২. মো: ছলিম উল্লাহ, ভাইস প্রেসিডেন্ট, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড।
২৩. ডা. মোহাম্মদ রিয়াসাদ আজিম সিদ্দিকী, মেডিকেল অফিসার, চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
২৪. মো: আখলাকুর রহমান গালিব,এসিস্ট্যান্ট ম্যানাজার,দ্যা ডেইলি স্টার ও কো-ফাউন্ডার এন্ড সিইও, গ্রোথ একাডেমি গ্লোবাল।
শেয়ার করুন:

Recommended For You