কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় আলফি শাহরিয়ার মাহিম নামের এক ১৬ বছরের কিশোরকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকেলে আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে বলে জানিয়েছে তার পরিবার। সে ১২ দিন ধরে রংপুর কারাগারে রয়েছে বলে জানা গেছে।এ ঘটনায় বুধবার (৩১ জুলাই) ভুক্তভোগীর বোন সানজানা আখতার স্নেহা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি আলোচনায় আসে। এরপরই কিশোর শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
সানজানা লেখেন, ‘আমার ছোট ভাই মো. আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ। তার বয়স ১৬ বছর ১০ মাস। সে রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ (এইচএসসি ২৫)-এর ছাত্র।’ গত ১৮ জুলাই তার ভাই কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলে জানতে পারে পরীক্ষা স্থগিত। তখন বন্ধুদের সঙ্গে মিছিলের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে এবং পুলিশের টিয়ারশেলে বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা ১৮ তারিখ আনুমানিক বিকেল ৪টায় ওর বন্ধুদের থেকে জানতে পারি, তার পায়ে রাবার বুলেট লেগেছে। সেখানকার স্থানীয় লোকজন কোনো হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। ‘রাত ১০টা পর্যন্ত সব হাসপাতাল-ক্লিনিক খুঁজেও যখন পাচ্ছিলাম না– তখন বাবার কাছে একটা কল আসে। তারা জানায়, আপনার ছেলে আমাদের হেফাজতে আছে। জানাজানি করবেন না। তাতে ছেলের ক্ষতি হবে। তাকে আগামীকাল (১৯ জুলাই) সকালে ছেড়ে দেওয়া হবে। চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু, পরদিন ১৯ জুলাই সকালে আমরা খোঁজ নিলে তারা অস্বীকার করে বলে, তাদের কাছে এই নামে কেউ নেই। এরপর আনুমানিক বিকেল সাড়ে চারটায় কোর্ট থেকে কল আসে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন
তিনি আরো লেখেন, ‘আমরা কোর্ট থেকে নথিপত্র নিয়ে জানলাম, তাকে (আলফি) আবু সাইদ ভাইয়ের হত্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। সেদিন থেকে বার বার কারাগারের দরজা থেকে ফিরে এসেছি। একটাবার দেখা তো দূর; তার কণ্ঠও শুনতে দেয়নি কেউ। মেট্রোপলিটন কোর্ট তার মামলা কিছুতেই শিশু আদালতে (জুভেনাইল কোর্ট) দিতে চায়নি। অনেক চেষ্টা করে গত ৩০ জুলাই শিশু কোর্টে নেওয়া হলে– ডেট দেয় আগামী ৪ আগস্ট। ৪ তারিখ কী রায় দেবে আমার জানা নেই। তবে আমি আমার ভাইকে ফিরে চাই। বেকসুর খালাস দেওয়া হোক এটা চাই।’
সানজানা আখতার বলেছেন, ‘যে ছেলেটা লিগ্যাল ডকুমেন্টস অনুযায়ী শিশু; তাকে তারা কোন হিসাবে এভাবে হ্যারাস (হয়রানি) করাচ্ছে? সব থেকে বড় কথা তার গায়ে কলেজ ড্রেস ছিল। আইডি ছিল। সে পুলিশদের ইনস্টিটিউটেরই ছাত্র। এক্ষেত্রে কি তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক, সহপাঠী, আইনজীবী কারও কিছুই করার নাই? আমার ভাইকে কোন লজিকে তারা আটকে রেখেছে, দেখাও করতে দিচ্ছে না!’
এ বিষয়ে রংপুর মহানগর পুলিশের উপকমিশনার আবু মারুফ হোসেন (অপরাধ) সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘১৮ জুলাই যখন থানায় হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট হয় তখন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জিন্সের প্যান্ট ও স্যান্ডো গেঞ্জি পরা অবস্থায় আটক হয় মাহিম। পরে তাকে পুলিশের হেফাজতে নেওয়া হয়।’
উপ-পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, ‘যেহেতু ১৮ ও ১৯ তারিখে সংঘাত-সংঘর্ষ নিয়ে পুরো ফোর্স ব্যস্ত ছিল, সে কারণে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়নি। মূলত ২০ জুলাই থেকে আমরা যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে গ্রেফতার করেছি। বিষয়টি জানামাত্র পুলিশ কমিশনার মহোদয় সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, যেহেতু মাহিম ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না, আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল মাত্র, জামিনের মাধ্যমে তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।’