সারাদেশে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জ-গুলিবর্ষণ, আটক অর্ধশতাধিক 

সারাদেশে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে পুলিশের লাঠিচার্জ-গুলিবর্ষণ, আটক অর্ধশতাধিক 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচি বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামলে পুলিশ তাদের ওপর ব্যাপক হামলা করে। রাজপথ থেকে তাদের হটানোর চেষ্টা করলে উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। কোথাও কোথাও লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। এতে আহত হয়েছে প্রায় শতাধিক। এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫০ জনকে আটকও করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

বুধবার সারাদেশে ছাত্র-জনতার ওপর চালানো গণহত্যা, গণগ্রেফতার, হামলা, মামলা, গুম ও খুনের প্রতিবাদে দেশের সব আদালত, ক্যাম্পাস ও রাজপথে মার্চ ফর জাস্টিস কর্মসূচি পালনের ডাক দেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরই অংশ হিসেবে সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে ওঠে স্লোগানের ঝড়।

ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন

এ সময় শিক্ষার্থীরা নয় দফা দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দেন। এদিকে, শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে সংহতি জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের একাংশ। যৌক্তিক আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকার কথা জানান তারা। অন্যদিকে, বেলা দেড়টার দিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমর্থনে আইনজীবীরা মহানগর দায়রা জজ আদালত প্রাঙ্গণে মিছিল করেন।

ঢাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, আটক ৪

কোটা আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিকে সমর্থন দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেছে।

বুধবার দুপুরে হাইকোর্টের মাজার রোডের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন তারা। এসময় কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ৪ জনকে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে আটক করে পুলিশ। জানা গেছে, ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে এদিন হাইকোর্টের মাজার রোডের সামনে প্রথমে ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থী অবস্থান নেন। পরে আরও ৭০ থেকে ৮০ জন শিক্ষার্থী তাদের সঙ্গে যোগ দেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের একটি মিছিল যোগ দিতে এলে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। এগুতে না পেরে সেখানেই বসে পড়েন শিক্ষকরা। পাশাপাশি আইনজীবীদের একটি দলও ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ লেখা ব্যানার নিয়ে সেখানে স্লোগান দিচ্ছেন। এর এক পর্যায়ে কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ৪ জনকে আটক করে পুলিশ। তাদের সেখান থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় এক নারী শিক্ষার্থী পুলিশ ভ্যানের সামনে ব্যারিকেড দেওয়ার চেষ্টা করেন।

ঢাবির সাদা দলের আহ্বায়ক লুৎফর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, রোড ফর জাস্টিস কর্মসূচিতে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এসেছেন। আমরা সংহতি জানাতে এসেছি। পুলিশ আমাদের আটকে দিয়েছেন আমরা বসে পড়েছি।

বরিশালে শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ, সাংবাদিকসহ আহত ২৫

বরিশালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে দুই দফায় বেধড়ক লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। পুলিশের হামলায় চার সাংবাদিকসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।

বুধবার (৩১ জুলাই) বেলা ১১টার দিকে প্রথমে নগরীর অশ্বিনীকুমার হলের সামনে এবং পরে সাড়ে ১২টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সামনে ফজলুল হক এভিনিউতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এ সময় বাম সংগঠনের নেতাসহ অন্তত ২০ জনকে আটক করে পুলিশ। আহত সাংবাদিকরা শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। লাঠিচার্জে দৈনিক যুগান্তরের ফটো সংবাদিক শামীম আহমেদ, যমুনা টেলিভিশনের ক্যামেরাপার্সন হৃদয় চন্দ্র শীল, এনটিভির ক্যামেরাপার্সন গোবিন্দ সাহা ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তা টোয়েন্টিফোরের তুহিন খান আহত হন।

আহত শিক্ষার্থী সেতু জানান, আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ হত্যার প্রতিবাদে আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কয়েকশ পুলিশ ও বিজিবি সদস্য একসঙ্গে লাঠিপেটা শুরু করে। আমরা বলেছি, আমরা সড়কের পাশে কর্মসূচি পালন করব। আমাদের কর্মসূচিতে কোনো সহিংসতা নেই। কিন্তু পুলিশ আমাদের ওপর সহিংসভাবে লাঠিপেটা শুরু করে। কমপক্ষে ২৫ জনকে মারধর করেছে পুলিশ। অন্যদিকে  আহত সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার তানভীর আরাফাত নিজে লাঠিচার্জে ছিলেন। শুধু সাংবাদিক না যাকে যেখানে পেয়েছে পুলিশ পিটিয়েছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে অবস্থান নিয়ে ছাত্র হত্যার বিচার এবং ৬ সমন্বয়কারী ও আটক অন্য শিক্ষার্থীদের মুক্তির দাবিতে নানা স্লোগান দেন তারা।

বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুর পৌনে ২টার দিকে মাজার গেটে পুলিশের ব্যারিকেড পেরিয়ে আন্দোলনকারীরা সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে প্রবেশ করেন। এ সময় তারা সমবেত কণ্ঠে গান পরিবেশন করেন। প্রায় আধা ঘণ্টার মতো সুপ্রিম কোর্ট চত্বরের সামনে অবস্থান করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতিতে দুপুরে শতাধিক শিক্ষার্থী মাজার গেটের সামনে অবস্থান নেন। এর মধ্যে, ঢাবি, বুয়েট, সাত কলেজ,নর্থ সাউথ, ব্র্যাক, গ্রিন ইউনিভার্সিটিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ছিলেন।

খুলনায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ, আটক ৩৫

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে খুলনায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে মহানগরীর রয়েল মোড় ও সাতরাস্তা মোড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, বুধবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সড়কে জড়ো হতে শুরু করেন। তারা নগরীর শিববাড়ী, রয়েল মোড়, সাত রাস্তা মোড়, ময়লাপোতা মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। এ সময় খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন সড়ক অবরোধে গেলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ শুরুর পর পুলিশ ব্যাপক কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে ছাত্রদেরকে ছাত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় পুলিশ রয়েল মোড় ও আশপাশের এলাকা থেকে কমপক্ষে ৩৫ জনকে আটক করে।

সিলেটে পুলিশ-শিক্ষার্থী ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ

সিলেটে কোটা ইস‍্যুতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও পুলিশের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও গুলি-ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দুপুরে মহানগরের সুবিদবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এসময় পুলিশ ফাঁকা গুলি ও টিয়ারসেল ছুঁড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

জানা গেছে, কোটা ইস‍্যুতে শিক্ষার্থীদের বুধবারের কর্মসূচি ছিল- ‘মার্চ ফর জাস্টিস’। কর্মসূচি অনুযায়ী দুপুর ১২টায় সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গেট থেকে শিক্ষার্থীরা পায়ে হেঁটে মিছিল নিয়ে মহানগরের বন্দরবাজারের দিকে রওনা হয়। আন্দোলনকারী ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগোলে পুলিশ তাদের লক্ষ্য করে টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ শুরু করে।

এসময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয় এবং শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল ও পুলিশ টিয়ার সেল-ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে। এক পর্যায়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় এবং বন্দরবাজার আসতে পারেনি।

শেয়ার করুন:

Recommended For You