কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। রাজধানীর কোনো কোনো এলাকা পরিণত হয়েছিল রণক্ষেত্রে। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রামপুরা বিটিভি ভবন। বড় বড় স্থাপনায় নাশকতা চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
বিটিভি রাষ্ট্রীয় সম্পদ। বিটিভি সহিংসতায় আক্রান্ত হলে সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা সরে যায়। ভেতরে বিটিভির নিয়োগপ্রাপ্ত নিরাপত্তাকর্মী ছিল সাত জন। দীর্ঘ প্রায় তিন ঘণ্টা অরক্ষিত ছিল বিটিভি ভবনটি। যখন দুর্বৃত্তরা বিটিভি ভবনে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। তখন খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহানগর পুলিশের শীর্ষ এক জন কর্মকর্তা এক জন উপপুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ১১৭ সদস্যের ফোর্সকে সেখানে যাওয়ার নির্দেশ দেন। ফোর্সটি রওনা দিয়েছিল। খিলগাঁও পার হয়ে বিটিভি ভবনের কাছাকাছি গিয়ে ১১৭ সদস্যের ফোর্সটি ফেরত আসে। এ ফোর্সের নেতৃত্বে থাকা উপপুলিশ কমিশনার ফেরত আসার যুক্তি হিসেবে বলেন, তাদের পক্ষে এটা মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।
ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন
এ প্রসঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষপদে দায়িত্ব পালনকারী অবসরপ্রাপ্ত একাধিক কর্মকর্তা এবং বর্তমান দুই জন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ১১৭ জন ফোর্সের সামনে লাখো মানুষ টিকতে পারার কথা নয়। তারা কেন অপরাগতা জানালেন, তা রহস্যজনক। এভাবে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। স্বাধীনতাযুদ্ধের অনেক দলিল ও ডকুমেন্ট সেখানে ছিল। সেগুলো গান পাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা আরও বলেন, এত বড় প্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
গত ১৮, ১৯ ও ২০ জুলাই কোটা আন্দোলন চলাকালে দুর্বৃত্তদের নারকীয় তাণ্ডবের শিকার হয়েছিল বিটিভি ভবন, ওয়াসার পাম্প হাউজ, রামপুরা ব্রিজ-সংলগ্ন পুলিশ বক্সসহ বেশ কয়েকটি ভবন। এছাড়া রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ধরিয়ে দেওয়া হয় আগুন। ভাঙচুর ও আগুনে পুড়েছে সরকারি- বেসরকারি অসংখ্য গাড়ি। কোটা আন্দোলনটি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক ছিল। শিক্ষকদের সঙ্গে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের আলাপ-আলোচনা চলছিল। শিক্ষার্থীরা বলেছিল, সরকারের সঙ্গে আলোচনা করুন, আমাদের দাবি মেনে নিন। তবে এ আন্দোলনের পেছনে যে ‘বি’ টিম ছিল, তারা নাশকতাকারী। তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোক। বিটিভি ধ্বংস করার পরিকল্পনা ছিল দীর্ঘদিনের। একাধিক নেতার সঙ্গে কয়েকটি রাজনৈতিক কার্যালয়সহ বিভিন্ন অফিসে বৈঠক হয়েছে। এটা কি গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পারেনি—এমন প্রশ্ন নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের।
কোটা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছিল ২০১৮ সালে। আন্দোলনের সে বীজ এত বড় আকার ধারণ করল, এর পেছনে কি? শুরুতে পুলিশের পক্ষ থেকে সহিংসতা দমন করা যেত। এখানে গোয়েন্দা ব্যর্থতা আছে আর যদি গোয়েন্দারা তথ্য দিয়েও থাকে, তাহলে সেটা সেভাবে আমলে নেওয়া হয়নি কেন? সহিংসতা চলাকালে হাতেনাতে যারা গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের মধ্যে সরকারের একাধিক শীর্ষ আমলার পরিবারের সদস্য রয়েছেন। তারা জামায়াতের পদধারী নেতা। এদিকে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে সরকারবিরোধী গ্রুপ রয়েছে। তাদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মহানগর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দুই জন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা আছেন, যারা অপারেশন কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেন। সহিংসতা চলাকালে তাদের এক জন অসুস্থতার কথা বলে ঘরে ছিলেন। আরেক জন চুপচাপ অফিসে বসে ছিলেন। পবিত্র দায়িত্ব-কর্তব্য বাদ দিয়ে চুপচাপ বসেছিলেন। এরা কারা?
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা বলেন, যারা সত্যিকারের অফিসার, তারা অপরাধ দমনে কখনো পিছপা হননি। পুলিশের মধ্যে সৎ ও নিষ্ঠাবান অফিসারের সংখ্যা অনেক রয়েছে। কিন্তু সরকারবিরোধী কিছুসংখ্যক নেপথ্যে থেকে তথ্য পাচার করে, ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকে। এতে অনেক সময় নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়। তার উদাহরণ হলো কোটা আন্দোলন। এ কাজটি শিক্ষকরাই নিরসন করতে পারতেন। তবে নেপথ্যে যে গভীর ষড়যন্ত্র ছিল তা এখন সবাই বুঝতে পারছেন। কারা কারা এ ষড়যন্ত্রে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের অনেকের বাড়িগাড়ি বিদেশে আছে। ভোটের আগে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ২৫২ জনের তালিকা আসছিল, যারা বিদেশে টাকা পাচার ও বাড়িগাড়ি করেছেন। এরা ষড়যন্ত্রে জড়িত কি না খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। শিক্ষার্থীরা একাধিকবার বলছেন, এ সহিংতায় তারা জড়িত নন। তাহলে নেপথ্যে কাদের ইন্ধনে সহিংসতা হলো, তাদের চিহ্নিত করা জরুরি। অবশ্য একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এ ব্যাপারে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালাচ্ছেন, কাউকে কাউকে শনাক্তও করেছেন।