কোটা সংস্কারপন্থী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে দেশের সবগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বাদ যায়নি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আসতে থাকে একের পর এক বন্ধের বিজ্ঞপ্তি। যে আন্দোলন নিয়ে এতো উত্তেজনা, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি—আপিল বিভাগের রায়ে সে আন্দোলন দেরিতে হলেও এখন অনেকটাই সফল। তবে আন্দোলনে সফলতা আসলেও আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় বন্ধ হওয়া দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো বন্ধই রয়েছে।
গতকাল শুক্রবার (২৬ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল এবং স্যার এ এফ রহমান হল পরিদর্শন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল। পরিদর্শন শেষে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে প্রায় ৩০০টি কক্ষ ভাঙচুর করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হলগুলোর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিকট হতে আর্থিক বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্নের মাধ্যমে হলগুলো সংস্কার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হবে।
ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, দেশের বর্তমান যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, আগে সেটা স্বাভাবিক হতে হবে। তবে শুধু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় খুলতে পারবো না, আমাদের শিক্ষার্থীদের শতভাগ নিরাপত্তাও নিশ্চিত হতে হবে। এগুলো হওয়ার পর আমরা সিন্ডিকেট মিটিং ডাকবো। সেখানেই বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। এটা নিয়ে আপাতত নিশ্চিতভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, সহিংসতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমাদের হলগুলোতেও ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়েছে। বিভিন্ন হলের ১৫৮টি কক্ষ চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন ক্যাম্পাস খুলতে হলে একটা সিস্টেম ডেভেলপ করতে হবে। শিক্ষার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা ও হলগুলোকে বসবাসের উপযোগী করে ক্যাম্পাস খুলতে হবে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার বিষয়ে এখনো কোনো ধরনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম, গত কয়েকদিনের অরাজক পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে আবাসিক হলগুলো শিক্ষার্থীদের বসবাসের উপযুক্ত করে ক্যাম্পাস খুলে দেওয়া হবে। সরকারও চায় শিক্ষার্থীরা দ্রুত পড়ার টেবিলে ফিরে যাক। আমরা সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্রুতই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক শিক্ষাকার্যক্রম চালু করবো।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা বলছেন, কোটা আন্দোলনে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ক্ষতিসাধন হয়েছে। এগুলো আগে সংস্কার করতে হবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হলে উপাচার্যরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। তবে এতে কি পরিমাণ সময় লাগতে পারে তা কেউই নিশ্চিত নন। আপাতত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাপের চেষ্টা চলছে। ক্ষয়ক্ষতির চিহ্নিত করা গেলে তারা ইউজিসির কাছে আর্থিক বরাদ্দের আবেদন করবেন।
এদিকে, কোটা আন্দোলনকে ঘিরে আদালতের রায়ে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটার পরিবর্তে মাত্র ৭ শতাংশ নির্ধারণ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ; মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ; ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ কোটা নির্ধারণ করে এ রায় দেওয়া হয়। তবে সরকার প্রয়োজন ও সার্বিক বিবেচনায় আদালত নির্ধারিত কোটা বাতিল, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে বলেও রায়ে উল্লেখ করেন আপিল বিভাগ।
ইউজিসি বলছে, কোটা আন্দোলন এখন শেষ হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীরা একটা উপযুক্ত রায় পেয়েছেন। পরিস্থিতি বিবেচনায় তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের নির্দেশনায় বন্ধ করা হয়েছে। এখন আবার পরিস্থিতি সাবেক হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও খুলে দিতে হবে। আন্দোলনে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ব্যাপক ক্ষতির তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। এগুলো আগে সংস্কার করতে হবে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।