বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতন ও গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতারা।
বুধবার (২৪ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিইউজে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং জাতিসংঘের তত্বাবধানে সাংবাদিক ও গণহত্যার আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করা হয়।
ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন
বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী, বিএফইউজের সাবেক মহাসচিব এম এ আজিজ, কবি আবদুল হাই শিকদার, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমদ,সিনিয়র সাংবাদিক আমিরুল ইসলাম কাগজী, আবু সালেহ আকন, সদরুল হাসান, কাজিম রেজা প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ পরিচালনা করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান। বিক্ষোভ সমাবেশে ১৭ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়।
বিক্ষোভ সমাবেশে রুহুল আমিন গাজী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত দু:সময় অতিক্রম করছে। আজ মানুষের জান-মাল- ইজ্জতের কোনো নিরাপত্তা নেই। পাখির মতো গুলি করে মানুষ হত্যা করছে। গত এক সপ্তাহে ৪ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। ছাত্র ও সাধারণ মানুষ হত্যা করা হয়েছে শত শত। ঢাকার চার দিকে লাশ আর লাশ। লাশের গন্ধে বাতাস ভারি হয়ে উঠছে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে দেশের মানুষ এমন অসহায়বোধ করে নি।
তিনি বলেন, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা সমস্যা সমাধানে মনোযোগ না দিয়ে দলীয় নেতার মতো বক্তব্য রাখছেন। সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রী এক বক্তব্য দিয়ে আন্দোলনকে উত্তপ্ত করে দিলেন। উনাদের দলের সাধারন সম্পাদক বললেন আন্দোলনকারীদের মোকাবিলায় ছাত্রলীগ যথেষ্ট। এরপর পুরো দেশ দেখেছে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা কিভাবে সাধারন ছাত্রদের উপর হামলা চালায়। তাদেরকে হত্যা করে। হত্যার প্রতিবাদে আন্দোলন যখন সারাদেশে ছড়িয়ে পরে তখন ওবায়দুল কাদের আন্দোলনকারীদের দেখলেই গুলির নির্দেশ দিলেন। তারপর পুলিশ পাখির মতো গুলি করে গণহত্যা শুরু করেছে। শতশত মানুষের সাথে ৪জন সাংবাদিক হত্যার শিকার হয়েছে। বহু সাংবাদিক আহত। এসব হামলার দায় সরকার এড়াতে পারে না। এই দায় নিয়ে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।
ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন
কাদের গনি চৌধুরী বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে যেভাবে গণহত্যা শুরু হয়েছে তা ১৯৭১ সালকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ১৯৭১ সালে ভিনদেশীরা আমাদের হত্যা করেছিল। আর আজ এ দেশের জাতীয় দুশমনরা মানুষ হত্যার উৎসবে মেতে উঠেছে। তিনি বলেন আজ অনেক সাংবাদিক ও ছাত্ররা গুলিবিদ্ধ। তারা হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তাদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। নিহতদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। গত ক’দিন ধরে যে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে এ হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন ও খুনিদের চিহ্নিত করতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করে সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন এ নিবির্চারে মানুষ হত্যা মেনে নেয়া যায় না।
এম এ আজিজ বলেন, সরকার আজ আমাদের সমাবেশে মাইক লাগাতে দেয়নি। সারাদেশে ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে। সংবাদ মাধ্যমগুলোতে সাংবাদ প্রকাশ করতে দেয়া হচ্ছে না। তার মানে সরকার গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এই সরকার জনগণের কন্ঠ রোধ করে, হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। তিনি বলেন, সরকার গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার জন্য ক্ষমতার শুরু থেকে হামলা-মামলা-নির্যাতন চালিয়ে আসছে। এই পর্যন্ত ৬৪জন সাংবাদিক হত্যা হয়েছে। কোনো হত্যার বিচার হয়নি। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে এই সরকারের পদত্যাগ দাবি করছি।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্যেশ্যে কবি আব্দুল হাই শিকদার বলেন, আপনি ভাংচুরের অভিযোগে আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করছেন। কিন্তু যারা সাধারন শিক্ষার্থীদের হত্যা করলো, ৪জন সাংবাদিকদের হত্যা করলো তাদের গ্রেফতার করছেন না কেনো? তাদের গ্রেফতারে কি পদক্ষেপ নিলেন? তাদের কি বিচার পাওয়ার অধিকার নাই? তারা কি মানুষ না? ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে নিজের অংশগ্রহণের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে আমি অংশ নিয়েছি। এরকম বর্বরতা দেখিনি। একমাত্র মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া কখনো এরকম বর্বরতা দেখিনি। এসময় অনতিবিলম্বে গণহত্যার দায় নিয়ে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেন তিনি।
শহিদুল ইসলাম বলেন, সরকার তার পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে একটি যৌক্তিক আন্দোলনকে সহিংসতায় রূপ দেয়। বল প্রয়োগ করে শিক্ষার্থী, সাংবাদিক ও দেশের সাধারন জনগণকে হত্যা করে। এখন হত্যার ঘটনা আড়াল করতে উল্টো আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার করছে। আমরা সরকারের এই ন্যক্যারজনক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে সাংবাদিক হত্যার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। খুরশীদ আলম বলেন, ইসরাইলি ইহুদীরা গাঁজায় যেভাবে গণহত্যা চালাচ্ছে ঠিক একইভাবে বাংলাদেশে গত ৮দিন সরকার তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে গণহত্যা চালিয়েছে। আমরা সরকারের এই গণহত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ দাবি করি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিএফইউজের সহ সভাপতি একেএম মহসিন, কোষাধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম, ডিইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খান, বিএফইউজের দফতর সম্পাদক আবু বকর, ডিইউজের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবুল কালাম, ক্রিড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক রফিক লিটন, দফতর সম্পাদক ইকবাল মজুমদার তৌহিদ, বিএফইউজের নির্বাহী সদস্য অর্পনা রায়, আবু হানিফ, ডিইউজের নির্বাহী সদস্য নিজাম উদ্দিন দরবেশ, এম মোশাররফ হোসেন, তালুকদার রুমি, গাজী আনোয়ারুল হক, আব্দুল্লাহ মজুমদার, ফখরুল ইসলাম প্রমুখ।
বিক্ষোভ সমাবেশে সাংবাদিকদের ১৭ দফা উপস্থাপন করে বিএফইউজে মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী। ১৭ দফার মধ্যে রয়েছে : ১. সাংবাদিক হত্যা নির্যাতন বন্ধ করতে হবে ২. সম্প্রতি ৪ জনসহ গত ১৬ বছরে ৬৬ জন সাংবাদিক খুন হয়েছে, এসব খুনের বিচার করতে হবে। ৩. কোটা বিরোধী আন্দোলনে নিহতদের ক্ষতিপূরণ ও আহতদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে ৪. সাংবাদিক সুরক্ষা আইন করতে হবে ৫. বন্ধ মিডিয়া খুলে দিতে হবে ৬.সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিরোধী সকল কালাকানুন বাতিল ৭. অবিলম্বে ইন্টারনেট চালু করতে হবে ৮. গণমাধ্যমের উপর থেকে সকল প্রকার চাপ তুলে নিতে হবে। গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে ৯. সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা তুলে নিতে হবে ১০. গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন বৈষমস্য দূর করতে হবে। ভুয়া সাকুলেশন দেখিয়ে বিজ্ঞাপনের টাকা লুট বন্ধ করতে হবে ১১. অবিলম্বে শিক্ষাঙ্গণ খুলে দিতে হবে ১২. আন্দোলনরত ছাত্রদের উপর বল প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। প্রতিবাদকারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ১৩. গণহত্যা ও গণগ্রেফতার বন্ধ করতে হবে এবং কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যারা গণহত্যা চিালিয়ে তাদের বিচার করতে ১৪. মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে ১৫. নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. ইউনুসের উপর বিচারিক হয়রানি বন্ধ করতে হবে ১৬. গুরুতর অসুস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মানবিক কারণে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে প্রেরণ করতে হবে ১৭. একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশে গণতন্ত্র, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায় বিচার, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা, ভোটাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে হবে। গুম, খুন, বিনা বিচারে হত্যা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে হত্যা, ছাত্র হত্যা, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বল প্রয়োগ বন্ধ, ভিন্ন মতের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা-মামলা, জেল-জুলুম, নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে। দুর্নীতিবাজ,ভূমিদস্যু ও লুটেরাবাজদের বিচার করতে হবে।