ইডেন শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ নেত্রীদের অতর্কিত হামলা, আহত ১০

ইডেন কলেজে শিক্ষার্থীদের মিছিলে ছাত্রলীগ নেত্রীদের অতর্কিত হামলা

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে গতকাল মধ্যরাতে ঢাবিসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন কোটা সংস্কারপন্থি আন্দোলনকারীরা।

সোমবার (১৫ জুলাই) এরই ধারাবাহিকতায় বেলা ১২টার দিকে ইডেন মহিলা কলেজে প্রতিবাদী মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এতে অতর্কিত হামলার অভিযোগ উঠেছে কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে। হামলার স্বীকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি অনেকে। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কোটা নিয়ে করা বক্তব্যের প্রতিবাদস্বরূপ ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে জড়ো হলে ছাত্রলীগ নেত্রীদের সাথে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা যেন বের হতে না পারে সেজন্য কলেজের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু শিক্ষার্থীদের একটি অংশ তালা ভেঙে মিছিল নিয়ে বের হয় এবং রাজু ভাস্কর্যের দিকে অগ্রসর হয়। তবে শিক্ষার্থীদের আরেকটি অংশ কলেজের ভেতরেই আটকে থাকায় তাদের বের করার জন্য ইডেন কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ঢাকা কলেজের ছাত্ররাও ভিড় জমান কলেজের গেটে।

ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন

এসময় ছাত্রলীগ নেত্রীদের অতর্কিত হামলায় এক ছাত্রী আহত হয়েছেন। তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।  আহত ছাত্রীর নাম শাহিনুর সুমি। তিনি সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রটের রাজনীতির সাথে জড়িত। এছাড়াও ছাত্রলীগের নেত্রীদের বিরুদ্ধে, শিক্ষার্থীদের রুমে বন্ধ করে বেধড়ক মারধরসহ গাঁয়ে গরম পানি ঢালার অভিযোগ উঠেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ছাত্রলীগের হামলায় আহত হয়েছেন ইডেন কলেজের শিক্ষার্থী সায়মা আফরোজ, শাহিনুর সুমি, সুমাইয়া সাইনা, সানজিদা হক ও স্কাইয়া ইসলামসহ ১০ জন। আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইডেন মহিলা কলেজের একাধিক ছাত্রী জানান, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের দিকে যাওয়ার জন্য ক্যাম্পাসে জড়ো হচ্ছিলাম, কিন্তু হঠাৎ ছাত্রলীগের নেতৃরা এসে ঝামেলা করে এবং আমাদের চলে যেতে বলে। কিন্তু আমরা যেতে না চাইলে আমাদের সাথে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে এবং একপর্যায়ে কয়েকজন আপুকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারধর করে এবং চুল ধরেও মারতে থাকে।

তারা আরও বলেন, এতে আমাদের কয়েকজন আপু আহত হয়েছে। কলেজের দুটি গেটে তালা মেরে দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা তালা ভেঙে ফেলি এবং রাজু ভাস্কর্যের দিকে যাত্রা করি। আরেকটি যে অংশ আছে তারা বের হতে পারলে আমাদের সাথে যোগ দেবে।

ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানা বলেন, আমরা রুটিন মিছিলে অংশ নিয়েছিলাম। কিন্তু দেখেছি শিক্ষার্থীদের একটা অংশ আমাদের মিছিলের মধ্যে ঢুকে যায়। পরে আমি এবং আমাদের সভাপতিসহ কয়েকজন তাদের সরে যেতে বলি। এ সময় ধাক্কাধাক্কি লাগে কিন্তু কোনও মারামারির ঘটনা ঘটেনি। ওখানে মিডিয়াতে যারা বক্তব্য দিয়ে মারামারির কথা বলছে তারা মূলত সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের কর্মী। আমরা কখনও তাদের কাজে বাধা দেইনি। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে তারা মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে। কলেজ প্রশাসন গেট আটকে দিয়েছে। কারণ ছাত্র ফ্রন্টের মেয়েরা বহিরাগত ছেলেদের ক্যাম্পাসে ঢোকানোর চেষ্টা করছিল। শিক্ষার্থীদের আমরা কোনও মিছিলে অংশ নিতে বাধা দেইনি এখন পর্যন্ত।

তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে যারা মিছিল দিচ্ছে তারা ভুল করছে। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে রাজাকার বলেনি। ওনার কথাটা ভালোভাবে খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন। যারা রাজাকার নয় তাদের বিষয়টা গায়ে লাগার কথা নয়। এ ধরনের প্রতিবাদী মিছিল সম্পূর্ণ অযৌক্তিক এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে মনে করি।

 

এদিকে দুপর সাড়ে ১২টার পর থেকে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হয়েছেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। মিছিলে নেতৃত্ব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার। মিছিলে অংশগ্রহণ করেছে ঢাবি,জবি, ইডেন কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও বদরুন্নেসা সরকারি কলেজের একদল শিক্ষার্থী অন্যদিকে  ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অপমান’ করার প্রতিবাদে বিকাল ৩টায় একই স্থানে অবস্থান কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ছাত্রলীগ।

এসময় শিক্ষার্থীদের ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘এসো ভাই এসো বোন, গড়ে তুলি আন্দোলন’, ‘ঢাবি ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘শিক্ষার্থীরা ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’, ‘তুমি নও আমিও নই, রাজাকার রাজাকার’, ‘কে রাজাকার কে রাজাকার, তুই রাজাকার, তুই রাজাকার’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে শোনা যায়।

উল্লেখ্য, গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে? তা তো আমরা দিতে পারি না। মূলত এই বক্তব্যের প্রতিবাদেবিক্ষোভে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

 

শেয়ার করুন:

Recommended For You