সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে গতকাল মধ্যরাতে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন কোটা সংস্কারপন্থি আন্দোলনকারীরা। প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের অবমাননা করা হয়েছে দাবি করে এ বিক্ষোভ হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাবি অধিভুক্ত সাত কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মশাল মিছিল করেন তারা। এ সময় অনেক স্থানে সড়ক অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় আন্দোলনকারীদের ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ বলে স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এদিকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের পাঁচ হলের তালা ভেঙে ছাত্রীরা এবং ছেলেদের সব হল থেকে ছাত্ররা মিছিল নিয়ে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন। রাত ১২টার দিকে সেখানে তারা সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদী সমাবেশ করেন। এর আগে সন্ধ্যা থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর পর প্রতিটি হলে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার রাজাকার’ ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’ স্লোগান ওঠে। দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে এই স্লোগান।
ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন
রাত ১১টার দিকে শামসুন্নাহার হলের ছাত্রীরা হল গেটের তালা ভেঙে মিছিল নিয়ে বের হন। এর পর বের হন রোকেয়া হলের ছাত্রীরা। স্লোগানের তালে তালে তারা থালা-বাসন, চামচ নিয়ে শব্দের দ্যোতনা সৃষ্টি করেন এবং মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। এর পর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা হল, কুয়েত-মৈত্রী হল, সুফিয়া কামাল হলের মেয়েরাও বেরিয়ে আসেন। ছেলেদের হলগুলো থেকেও বের হয়ে আসেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় খবর পেয়ে হল গেটে তালা দিয়ে শিক্ষার্থীদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন হল ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। তবে স্রোতের মতো নেমে আসা শিক্ষার্থীদের ধরে রাখতে পারেননি তারা। জানা যায়, বিজয় একাত্তর হল, মাস্টার দা সূর্যসেন হল, এফ রহমান হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলসহ বিভিন্ন হলে বাধা দেওয়া হয়।
শিক্ষার্থীরা ‘এক দুই তিন চার, তুমি আমি রাজাকার’, ‘তুমি নও আমি নই, রাজাকার রাজাকার’, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’, ‘লাখো শহীদের রক্তে কেনা দেশটা কারও বাপের না’– ইত্যাদি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা। পরে রাত দেড়টার দিকে মিছিল নিয়ে মেয়েরা নিজ নিজ হলে চলে যান। অন্য শিক্ষার্থীরাও হলে চলে যান। এর পর পরিস্থিতি শান্ত হয়।
এদিকে অবমাননার দায় এনে ছাত্রলীগের ৫ নেতা পদত্যাগ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। পদত্যাগ করা ছাত্রলীগ নেতারা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ শাখার গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক মাছুম শাহরিয়ার, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট শাখার মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণাবিষয়ক উপসম্পাদক রাতুল আহামেদ ওরফে শ্রাবণ, কলাভবন ছাত্রলীগের এক নম্বর সহসম্পাদক মো. মুহাইমিনুল ইসলাম, আইন অনুষদ শাখার গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আশিকুর রহমান ওরফে জিম এবং রাসেল হোসেন।
মাছুম শাহরিয়ার ফেসবুকে লেখেন, ‘জীবনে অনেক পাপ করেছি। পাপের বোঝা বয়ে নিয়েও চলেছি। কিন্তু রাজাকার হয়ে ছাত্রলীগ করার পাপ বয়ে নিয়ে যেতে চাই না। আমি মাছুম শাহরিয়ার, সামাজিক অনুষদ ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন সম্পাদক থেকে পদত্যাগ করছি। ধন্যবাদ।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এলাকায় রোববার মধ্যরাতে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ক্যাম্পাস এলাকায় মোবাইলে ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলেও জানান একাধিক শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মধ্যরাত থেকে তারা মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারছেন না। এদিকে রাতে ছাত্রলীগের মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতাকর্মীকে লাঠিসোটা, বাইক নিয়ে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম সমকালকে বলেন, ‘আমরা কোনো সংঘাতময় পরিস্থিতি চাই না। শান্তিপূর্ণ অবস্থা চাই। আমরা সুশৃঙ্খলভাবে নিজেদের হলে যাব।’ সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলা হয়েছে। এটা আমাদের আহত করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশে যারা রাজাকার তাদের সবাই ঘৃণা করে। আরেক সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, আন্দোলনকারীদের প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য এসেছে। প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।
গতকাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতি-নাতনিরা কোটা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিরা কোটা পাবে? তা তো আমরা দিতে পারি না। মূলত এই বক্তব্যের প্রতিবাদে এ দিন রাতে বিক্ষোভে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বক্তব্যের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হল থেকে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বের হন। পরে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাস বিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হন।