চট্টগ্রাম পটিয়া উপজেলার ১০নং ধলঘাট ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ঐতিহ্যবাহী মুকুটনাইট ধাতুচৈত্য বিহারে গতরাতে বিহারের তালা কেটে চুরির ঘটনা ঘটেছে। চোরের দল বিহারের কয়েকটি তালা সুকৌশলে কেটে বিহারের ভিতরে কাচের গ্লাস বাধাঁ অবস্হায় রক্ষিত কয়েকশো বছরের পুরোন মূল্যবান বড় একটি বৌদ্ধমূর্তি চুুরি করে নিয়ে যায়।
এলাকাবাসীর প্রবীণ কয়েকজনের সাথে কথাবলে জানাগেছে মূর্তিটি আসলে সোনালি কালারের হওয়ায় এটি অনেকেই পিতলের মূর্তি মনে করলেও আসলে মূর্তি একটি অষ্টধাতুর মহামূল্যবান বৌদ্ধমূর্তি। এটা কয়েক প্রজন্ম আগে মুকুটনাইট ধাতুচৈত্য বিহার প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমরা এখানে দেখে আসতেছি।
গতরাতের চুরি হওয়া বিহার থেকে মূল্যবান অষ্টধাতুর বৌদ্ধমূর্তি ছাড়াও বিহারের দানবাক্সের তালা কেটে মানুষের দান করা আনুমানিক ৩০/৪০ হাজার ক্যাশ টাকাও অন্যান্য জিনিষপত্র নিয়ে গেছে।আজ ০২ জুন,মঙ্গলবার ভোর সকালে বিহার চুরির ঘটনা একালায় জানাজানি হলে এলাকার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী নারীপুরুষ তাদের শতোবছরের এই বৌদ্ধমূর্তির জন্য বিহারে জড়ো হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং যেকোনো ভাবে তারা তাদের পূর্বপুরুষের স্মৃতি এলাকার কৃষ্টি কালচারের অংশ বৌদ্ধমূর্তিটি উদ্ধার করতে প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।
এ ব্যাপারে মুকুটনাইট ধাতুচৈত্য বিহার কমিটির সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা মিলন কান্তি বড়ুয়া’র সাথে কথা হলে উনি জানান-আমরা সকালে বিষয়টি পটিয়া থানা অফিসার ইনচার্সকে ফোনে জানিয়েছি,পটিয়া থানার অফিসার ইনচার্স জনাব জসিম উদ্দীন সাথে সাথেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছেন এবং আমাদের এই ঘটনার রহস্য উদঘাটনে এবং চুরির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের যতোদ্রুত সম্ভব গ্রেপ্তার পূর্বক মূর্তিটি উদ্ধারের আশ্বাস দিয়েছেন।আমরা আজকে বিহার কমিটির সকলে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েই রাতে বা সন্ধ্যায় পটিয়া থানায় মামলা করবো। বীরমুক্তিযোদ্ধা মিলন বড়ুয়া বলেন আমরা আপনাদের মাধ্যমেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্হানীয় সংসদ সদস্য সহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি যাতে ধর্মীয় উপসালয় চুরির মতো এই জঘন্য ঘৃণিত ঘটনায় দোষীদের তদন্ত পূর্বক চিহ্নত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হয়।
এদিকে এই ঘটনা ব্যাপারে সাবেক পুলিশের ডিআইজি বিহার কমিটির উপদেষ্টা মুকুটনাইট গ্রামের কৃতি সন্তান বাবু প্রিয় রঞ্জন বড়ুয়া (পিআর বড়ুয়া) বলেছেন উনি এই জঘন্য ঘটনার খবর শুনামাত্র পটিয়ার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ফোন করেছেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের ব্যাপারে কথা বলতেছেন।স্হানীয় সমাজ সেবক হিরু বড়ুয়া এই প্রতিবেদনকে বলতেছেন- আমরা পটিয়ার মাননীয় সংসদ সদস্য উপজেলা চেয়ারম্যান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সহ সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি যাতে আমাদের এই ঘটনার যথাযথ বিচার ও মহামূল্যবান অষ্টধাতুর বৌদ্ধমূর্তিটি উদ্ধার করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। আওয়ামীলীগ নেতা আশোক বড়ুয়া বাবু বলতেছেন আমরা এই ঘটনায় খুবই মর্মাহত, আমরা সর্ব্বোচ প্রশাসনের কাছে দোষীদের তদন্ত পূর্বক শাস্তি দাবি করছি এবং আমাদের বৌদ্ধমূর্তিটি উদ্ধার করার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সহায়তা কামনা করছি।
এদিকে ঘটনার খবর শুনে দুপুরে মুকুটনাইট বিহারে উপস্থিত হয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন পটিয়া উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান জনাব মোঃ দিদারুল আলম।উনার সাথে এই ব্যাপারে কথা বলার জন্য ফোনে চেষ্টা করা হলেও উনি ফোন রিসিভ না করায় উনার সরাসরি বক্তব্য নেওয়া সম্ভব নাহলেও, পরিদর্শনের একটি ভিভিও ফুটেজে উনি বলতে শুনা যাচ্ছে -এই ঘটনা কোন ভাবে মেনে নেওয়ার নয়,ধর্মীয় উপসালয়ে চুরি ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত তদন্ত পূর্বক বিচারের আওতায় আনার ব্যাপারে আমরা সর্ব্বোচ সহযোগীতা করবো।এসময় উপজেলা চেয়ারম্যানের সাথে ধলঘাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রণবীর ঘোষ টুটুল,স্হানীয় বিহার কমিটির উপদেষ্টা বিবেকানন্দ বড়ুয়া দীপু, স্বপন কান্তি বড়ুয়া, অনুজ চৌধুরী, বিষু বড়ুয়া,সুমন বড়ুয়া, রূপন কান্তি বড়ুয়া সহ স্হানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।