সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামী বাবুর জামিন মঞ্জুর

হত্যাকান্ডের এক বছর ১৫ দিন পর জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত বাংলা নিউজ টুয়েন্টিফোর ও ৭১ টিভির সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামী সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বহিস্কৃত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর জামিন মঞ্জুর হয়েছে। ৩০ জুন বিজ্ঞ হাইকোটের একটি বেঞ্চ তার জামিনের আদেশ যথাযথ বলে রায় দেন। ফলে কারাগার থেকে মুক্তির পথে প্রধান আসামী মাহমুদুল আলম বাবুর আর কোন বাধা নেই। কিন্তু হত্যা কান্ডের এক বছরের বেশি সময় অতিক্রম হলেও চার্জ গঠন না হওয়ায় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যাকান্ডের বিচার কার্যক্রম শুরু হয়নি।

জানা যায়, জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম ২০২৩ সালের ১৪ জুন রাত অনুমান পৌনে ১০টার দিকে  মোটর সাইকেল যুগে নিজ বাসায় ফিরছিলেন। পৃথক মোটর সাইকেলে ছিলেন তার আপন মামাতু ভাই সাংবাদিক এমদাদুল হক লালন এবং অপর একটি মোটর সাইকেলে ছিলেন সাংবাদিক আল মুজাহিদ বাবু। আলাদা মোটর সাইকেলে সাংবাদিক এমদাদুল হক লালন সাংবাদিক গোলাম রব্বানী নাদিম ও আল মুজাহিদ বাবুকে পেছনে রেখে বকশীগঞ্জ দত্তের দোকান নামক স্থানে চলে যায়। ওই সময় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম ও সাংবাদিক আল মুজাহিদ বাবু পৃথক মোটর সাইকেলে কথা বলতে বলতে আসছিলেন। ওই অবস্থায় বকশীগঞ্জ পাট হাটি এলাকায় আসার পরেই কতিপয় সন্ত্রাসী সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের উপর হামলা করে।

সাংবাদিক আল মুজাহিদ বাবু হামলার পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের মামাতু ভাই এমদাদুল হক লালনকে ফোন দেয়। ফোন পাওয়ার পরেই  ঘটনাস্থলে আসে সাংবাদিক এমদাদুল হক লালন। দুই সাংবাদিক একত্রিত হয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম কলেজ মোড় থেকে সামান্য দুরে টিএন্ডটি রোডে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছে। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমকে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে জামালপুর হাসপাতালে রেফার্ড করেন। একই কারণে ময়মনসিংহ হাসপাতালে রেফার্ড করেন জামালপুর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ময়মনসিংহ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০২৩ সালের ১৫ জুন মারা যায় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম।

এ ঘটনায় সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের স্ত্রী মনিরা বেগম বাদী হয়ে ২০২৩ সালের  ১৭ জুন বকশীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় মোট নামীয় আসামী ২২ জন। আসামীরা হলেন-বকশীগঞ্জ উপজেলার কামালেরবার্তি গ্রামের সাহেদুল হকের ছেলে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু(৫০), বাবুর ছেলে ফাহিম ফয়সাল রিফাত(২২), জমি শেখের ছেলে রেজাউল করিম(২৬), নামাপাড়া গ্রামের ননির ছেলে এমডি রাকিবিল্লাহ রাকিব(২৮), আরচাকান্দির গাজী আমর আলী মেম্বার(৫৫), কাগমারীপাড়া গ্রামের সাফিজল হকের ছেলে শরীফ মিয়া(২২), উত্তর বাজারের আনার আলীর ছেলে গোলাম কিবরিয়া সুমন(৪৩), পশ্চিমনামাপাড়ার খোরশেদ মন্ডলের ছেলে ইসমাইল হোসেন স্বপন মন্ডল (৩৫), উত্তর বাজারের  ফরহাদ হোসেন ফক্কার ছেলে খন্দকার শামীম(৪০), মালিরচর নয়াপাড়ার মিলন মিয়া(২১), মালিরচর তকিরপাড়ার আব্দুল করিমের ছেলে লিপন মিয়া (৩০), পূর্ব কামালেরবার্তী গ্রামের মফিজল হকের ছেলে মনিরুজ্জামান মনির(৩৫), নামাপাড়ার শেখ ফরিদ(৩০), টাঙ্গারীপাড়ার কামালের ছেলে ওমর ফারুক(৩২), বটতলী সাধুরপাড়ার আবুল কালামের ছেলে রুবেল মিয়া(৩৫), খেতারচর দক্ষিনপাড়ার জহুরুল হকের ছেলে সুরুজ মিয়া আইড়মারি শান্তি নগরের জলিলের ছেলে বাদশা মিয়া(৩৬), মদনেরচরের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে আবু সাঈদ(২৮), আরচাকান্দির মজিবুর রহমানের ছেলে ইমান আলী(৩৩), কুতুবের চরের সাবেক মেম্বার রফিকুল ইসলাম(৫০) ও সুর্য্যনগর গ্রামের কারিমুল মাস্টারের ছেলে আমান উল্লাহ(৩০)।

মামলার পর সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামী চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু, মনিরুল ও জাকিরুলকে পঞ্চগড় থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। অপর আসামী রেজাউল করিম র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয় বগুড়ায়। এছাড়াও মামলা দায়েরের পূর্বেই বকশীগঞ্জ থানা পুলিশ সন্দেহভাজন কফিল, ফজলু মিয়া, শহী, মকবুল, ওহিদুজ্জামান, তোফাজ্জল, আইনাল ও এজাহারে নামীয় গোলাম কিবরিয়া সুমনসহ ১০ জনকে গ্রেফতার করেছিলেন। বর্তমানে মামলার ৭জন নামীয় আসামী জেলা হাজতে আছে। বাকী ১৫ জন আসামী জামিনে ও পলাতক রয়েছেন। সাংবাদিক নাদিম হত্যা মামলার আসামী রেজাউল করিম ও মনিরুজ্জামান ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

২০২৩ সালের আলোচিত সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যা মামলা দায়েরের পরই স্বারাষ্ট্রমন্ত্রনালয় ও আইন মন্ত্রনালয় থেকে ঘোষনা দেওয়া হয় নাদিম হত্যা মামলার বিচার কার্যক্রম দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে অনুষ্ঠিত হবে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের শাস্তি হবে। বার বার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও তদন্তকারী সংস্থার পরিবর্তণ হয়েছে। কিন্তু এক বছর ১৫ দিন পরেও মামলার চার্জশীট আদালতে যায়নি। ফলে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার কার্যক্রম শুরুর বিঘœ ঘটছে। একই কারণে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিমের পরিবারেও হতাশা বিরাজ করছে।

অন্য দিকে সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী নাদিম হত্যা মামলার প্রধান আসামী বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়নের বহিস্কৃত চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবুর জামিনের বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ মনে করে প্রধান আসামী মাহমুদুল আলম বাবুর জামিন মঞ্জুর করেছেন বিজ্ঞ বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিজ্ঞ বিচারপতি কাজী ইবাদত হোসেনের বেঞ্চ। চলতি বছরের ৩০ জুন তাঁরা জামিনের বিষয়ে জারি করা রুল যতাযথ ঘোষনা করে জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। বিজ্ঞ হাইকোর্টে আসামী পক্ষের আইনজীবি ছিলেন জগলুল কবির ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডিপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন।

শেয়ার করুন:

Recommended For You