চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা কেরু চিনিকল কারখানা বিভাগের মৌসুমি শ্রমিক ইউসুপ রানা (৫০) চাকরি স্থায়ীকরণের জন্য ঋণকরে মোটা অংকের ঘুষ দিয়েছিল। কিন্তু তাতেও চাকরি স্থায়ী করণ হয়নি আবার ঘুষ দেওয়া টাকা ফেরৎ না পেয়ে মানষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়ে অবশেষে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে ইউসুপ রানা।
ধারদেনা করে নেওয়া টাকা পাওনাদারদের ফেরত দিতে না পারায় পারিবারিক অশান্তিসহ বিভিন্ন ঝামেলা হওয়ায় ঘাসমারা ঔষধ খেয়ে তিনি আত্নহত্যার করেন বলে এলাকাবাসিরা জানান।
রবিবার (৩০ জুন) দুপুরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহত ইউসুপ রানা চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা ও দর্শনা থানার হিজলগাড়ি গ্রামের তোরাব আলীর ছেলে।
এলাকাবাসী ও পারিবারিক সুত্রে জানা যায়, দর্শনা হিজলগাড়ি বাজারের সংগ্রাম হোটেল এর মালিক কেরু চিনিকলের কারখানা বিভাগের (ম্যাংগাপ্যান হেলফার) শ্রমিক ইউসুপ রানা। সে দীর্ঘদিন কেরুর মৌসুমি কর্মচারি হিসেবে কারখানায় নিয়োগ প্রাপ্ত ছিলেন। এ বছর মিল কতৃপক্ষ মৌসুমি থেকে স্থায়ী করনের সার্কুলার দিলে অন্যান্যদের সাথে তিনিও স্থায়ী করনের আবেদন করেন ও পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পরিক্ষা দেন। ওই পরীক্ষায় ১০৪ জন কৃতকার্য হওয়ার মধ্যে ইউসুপ রানার নাম থাকার কথা ছিল। কিন্তু পরে জানতে পারে লিস্টে তার নাম নেই।
এলাকাবাসি ও পরিবারের লোকজনের অভিযোগে জানা যায়, এনজিও থেকে ঋন, নিজস্ব হোটেল ও পরিবার থেকে বেশ কিছু টাকা চাকরি স্থায়ী করনের জন্য দেয়া হয়েছিল। ১০৪ জনের কৃতকার্য তালিকায় ইউসুপের নাম না থাকলেও ওয়েটিং লিস্টে তার নাম আছে বলে টাকার নেওয়া জনৈক ব্যক্তিরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিল। এভাবে গত দেড়মাস অতিবাহিত হলেও চাকরি তো দুরের কথা আসল টাকাও ইউসুপ রানা ফেরত পায়নি বলেও পরিবারের লোকজন জানান। দিনে দিনে ঋনের বোঝা বাড়তেই থাকে। ফলে নানা মুখি ঝামেলার বিষয় নিয়ে গত দু তিন দিন ধরে তার বাড়িতে পারিবারিক কলহের সৃষ্টি অশান্তি সহ বড় রকমের ঝামেলা হয়।
ঘুষের টাকা ফেরৎ না পাওয়ায় পারিবারিক অশান্তি ও নানান মানষিক যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে ইউসুপ রানা শনিবার (২৯ জুন) সকালের দিকে সবার অজান্তে বাড়ির পাশে মাঠে গিয়ে ঘাসমারা বিষ পান করে।
পরিবারের লোকজন ও স্থানীয়রা টেরপেয়ে দ্রুত তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হলে রবিবার (৩০ জুন) ভোরে রাজশাহী মেডিকেলে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে সে মারা যায়।
এ বিষয় বেগমপুর ইউপি সদস্য আলিকদর ও প্রতিবেশী জসিম বলেন মৃত ইউসুফ রানা কেরু চিনি কলে মৌসুমীর কর্মচারী ছিলেন চাকুরী স্থায়ীকরণের জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে মোটা অংকের টাকা দেয়। এসব টাকা উদ্ধার করতে না পেরে বাড়িতে অশান্তির কারণে সে বিশ পানে আত্মহত্যা করে।
কেরুর মহা ব্যাবস্হাপক (কারখানা) সুমন কুমার জানান, ইউসুপ রানা বলে আমি কাউকে চিনিনা। চাকরির বিষয়ে আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন আমি একটি মিটিংয়ে আছি ব্যস্ত আছি পরে কথা বলব।
এ বিষয়ে কেরু এন্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি।
দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বিপ্লব কুমার সাহা জানান, কেরুর কর্মচারি ইউসুপ রানার বিষয়ে রাজশাহী মেডিকেল থেকে আমাদের একটি ম্যাসেজ দিয়েছিল, মৃত্যুটি স্বাভাবিক নয়, আমরা একটি মামলা করে ফরওয়াডিং করে রাজশাহী পাঠিয়ে দিয়েছি এবং প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়ার কথা বলা হয়েছে।