
ভোলার তজুমদ্দিন মাতৃহীন একদিনের হরিণ সাবকটি পরম আদর যত্নে করে বড় করেণ বন কর্মী নুরুল্লাহ। এতদিন বন বিভাগের আউটসোর্সিং কর্মী নুরুল্লাহ আদরে বড় করা হরিণ সাবকটি নিয়ম অনুযায়ী গভীর বনে অবমুক্ত করতে হবে একথা ভাবলেই নুরুল্লাহর চোঁখে পানি চলে আসে।
হরিণ মানুষের কোলাহল ও নাগালের বাইরে থাকা প্রাণী। এটাই সবার জানা। তবে এর ব্যতিক্রম এক চিত্র দেখা গেছে ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলায়। বনকর্মী নুরুল্লহকে ছেড়ে কোথাও যায়না হরিণটি। গভীর মায়া মমতায় এ হরিণটিকে লালন পালন করছেন তিনি। দিনরাত এক সাথে কাটছে তাদের জীবন। হরিণটি নুরুল্লাহর সাথে ভাত, তরকারি খায় এবং রাতে ঘুমানো চলা ফেরা সবই চলে একসাথে।
হরিণ ছানাটি যেখানেই থাকুক নুরুল্লাহর ডাক শুনলেই ছুটে আসে তার কাছে। বন্ধু নুরুল্লাহ পাশে থাকলে কোন কিছুতেই ভয় পায় না এ প্রানীটি। নুরুল্লাহর সাথে ছুটে চলে হাট বাজার সর্বত্র। এ প্রাণীটির কাছে নুরুল্লাহ যেন আস্তা আর বিশ্বাসের যায়গা।
প্রায় তিন মাস আগে গভীর জঙ্গল থেকে ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ চর মোজাম্মেলের একটি খালের ব্রীজের নিকট মিঠা পানি খেতে আসে এক ঝাক হরিণ। তাদের মধ্যে একটি গর্ভবতী হরিণ ব্রীজের নিকটে এসে একটি বাচ্চা প্রসব করে। এ সময় মা হরিণটি লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে ভয়ে বাচ্চা রেখে অন্যান্য হরিণদের সাথে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে খবর পয়ে সেখান থেকে হরিণ সাবকটি উদ্ধার করে নুরুল্লাহ।
মাতৃহীন একদিনের এ হরিণ সাবকটি আদর যত্নে করে বড় করেণ বন কর্মী নুরুল্লাহ। মূমর্ষ অবস্থায় আনা সে হরিণ সাবকটির এখন তিন মাস বয়স। দুধ ও ঘাসের পাশাপাশি মানুষের খাবারে অভ্যস্থ হয়ে যায় এ প্রানীটি। ভাত, ভাতের মার, সাক, সব্জির পাশাপাশি পানি ও চা পান করে এ প্রাণীটি। ঘরের খাবারের পাশাপাশি পাশের বনে গিয়ে ঘাস ও লতাপাতা খায় সে। তবে সেটিও রুটিন মাপিক। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর নুরুল্লাহর ঘুমানের ঘরে চলে আসে হরিণটি।
হরিণ বন্যপ্রাণী হলেও সারাদিন নুরুল্লাহর কাছে থাকতে চায় সে। সারাদিন নুরুল্লাহর পেছনে পেছনে ছুটে চলাই যেন তার কাজ। হরিণটি জন্মের পর থেকে লোকলয়ে চলতে চলতে তার ভয় অনেকটা কমে গেছে। অন্যান্য লোকজন দেখলে কিছুটা ভয় পেলেও নুরুল্লাহর কাছে যেতে সে নিরাপদ মনে করে। নুরুল্লাহর সকল সংকেত ও ইশারা বুঝে হরিণটি।
লালন পালন করতে করতে হরিণটির মায়ার জালে আটকা পরে গেছে বন কর্মী নুরুল্লাহ। এখন বড় হয়েগেছে হরিণটি। নিয়ম অনুযায়ী গভীর বনে অবমুক্ত করতে হবে তাকে, একথা ভাবলেই নুরুল্লাহর চোঁখে পানি চলে আসে। কিন্তু এতদিনে যে মায়ার জালে অবদ্ধ হয়েছে হরিণটি সে আর বনে যেতে চাইবে না এমন বিশ্বাস নুরুল্লাহর। তারপরও সকল মায়া ত্যাগ করে এ হরিণটি বনে অবমুক্ত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে বন বিভাগ, একথা জানান, নুরুল্লাহ।
তরুণ নুরুল্লাহ বন বিভাগের আউট সোর্সিং পদে কর্মরত আছেন।
এ বিষয়ে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক জানান, হরিণটি জন্ম নেয়ার পর নুরুল্লাহর সহযোগীতা না পেলে হয়তো সে বাচঁতো না। নুরুল্লাহর আদর পেয়ে এখন হরিণটি বড় হয়েছে। তবে নিয়ম অনুসারে নিরাপদ স্থানে হরিণটিকে শিগ্রই অবমুক্ত করা হবে।