প্রচারিত হতে যাচ্ছে একক নাটক ‘কবর’। নাটকটি রচনা ও পরিচালনা নিকুল কুমার মন্ডল । নাটকটিতে অভিনয় করেছেন, জাহের আলভি,শারমিন সাথি ও অহনা রহমান।
নাটকটি নিয়ে পরিচালক নিকুল কুমার মন্ডল বলেন, নাটকটি দেখে আপনারা হতাশ হবেন না। আশা করি নাটকটি সবার ভালো লাগবে। আপনারা যত বেশি দেখবেন নাটকটি দেখবেন আমরা তত বেশি কাজের অনুপ্রেরণা পাবো।
নাটক সূত্রে জানা যায়, শিহাব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলোসফির ওপর মাস্টার্স পড়ুয়া ছাত্র। ফাইনাল পরীক্ষা চলছে সিহাবের। সিহাব পরীক্ষা দেয়ার জন্য হলে যাচ্ছে। এমন সময় হলের দারোয়ান তাকে ডেকে বলে তার নামে একটি চিঠি এসেছে। সিহাবের হাতে সময় না থাকায় সে তাড়াহুড়ো করে সেই চিঠিটা নিয়ে পরীক্ষার হলের দিকে রওনা দেয়। রাস্তায় সে চিঠি পড়তে শুরু করে। চিঠিতে তার ভালোবাসার মানুষ রূপার বিয়ের কথা লেখা। আজ তার বিয়ে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তাকে রূপার কাছে যেতেই হবে। এ খবরে তার মাথায় বাজ ভেঙ্গে পড়ে।
এক দিকে ফাইনাল পরীক্ষা আর অপর দিকে তার ভালোবাসার মানুষের বিয়ে। সে ঠিক করে ফেলে যে সে আজকে যে ভাবেই হোক গ্রামে যাবেই আবার পরীক্ষায় ও বসতে হবে। সে ঠিক করে নেয় যে পাস মার্ক তুলেই হল থেকে বেড়িয়ে যাবে। যথারীতি সে পাস মার্ক তুলে বেরিয়ে যাবে হল থেকে তখন তার শিক্ষক তাকে বলে সে আর একটু লিখলেইতো লেটার মার্ক পেয়ে যাবে। তখন সিহাব বলে যে তার লেটার মার্কের প্রয়োজন নেই। কারণ তাকে গ্রামে যে করেই হোক যেতে হবে নইলে তার প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাবে। তারপর সে হল থেকে বেরিয়ে সোজা বাস স্টেন্ডে চলে যায়। সেখান থেকে সে তার গন্তব্যের জন্য বাসে উঠে যায়। মধ্যরাতে বাস তাকে নামিয়ে দেয়। যেখানে নামিয়ে দেয় , সেখান থেকে রূপার গ্রামে যেতে আরো অনেক পথ বাকি। গ্রামে এত রাতে গাড়ি তো দূরে থাক একটি কুকুরও দেখতে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। সে কোনো কিছু না পেয়ে মন থেকে একদম ভেঙ্গে পরে। সে বিভিন্ন স্টান্ডে যায় কিন্তু কোনো গাড়ি পায়না, ( বাস, সিএনজি, টেম্পু) এমন সময় এক লোক এসে হাজির হয় শিহাবের কাছে। শিহাব তাকে দেখে একটু হাফ ছেড়ে বাঁচে। তাকে জিজ্ঞেস করে এখন কোনো গাড়ি পাওয়া যাবে কিনা, ঐ গ্রামে যেতে। সে লোক তাকে বলে এখন কোনো গাড়িই পাওয়া যাবে না। সিহাব তাকে অনেক অনুনয় বিনয় করে। কিন্তু লাভ হয় না। লোকটি তাকে বলে যে ভোরের দিকে ঐ গ্রামে যাওয়ার জন্য গাড়ি পাওয়া যাবে। লোকটি তাকে রাতে থাকার ব্যবস্থা করে দিতে চাইলে শিহাব না করেনা তাকে। লোকটি শিহাবকে নিয়ে একটি হোটেলে যায়। হোটেলে গিয়ে লোকটি সিহাবকে বলে এখানে থাকতে তার কোনো সমস্যা হবে না। শিহাবকে রুমে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর শিহাবের রুমে জোনাকি আসে, তার সেবা করতে। নানা রকমের খাবার নিয়ে আসে শিহাবের জন্য। আর শিহাব জোনাকি কে দেখে ভয় পেয়ে যায়। জোনাকি রুমে এসেই দরজার সিটকিনি মেরে দেয়। যার জন্য শিহাব একটু ঘাবড়ে গিয়ে তাকে রুম থেকে রের হতে বলে। জোনাকি শিহাবকে বলে তাকে যদি রুম থেকে বের করে দেয়া হয়, তবে তার চাকরি চলে যাবে। এটাই তার কাজ। শিহাবের সেবা করার জন্য তাকে পাঠানো হয়েছে। শিহাব একটু ভয় নিয়েই ফ্রেশ হয়ে আসে। জোনাকি তাকে খাবার বেরে দেয়। শিহাব খেয়ে দেয়ে ওঠে। জোনাকি শিহাবকে বলে একটি কাথা দিতে। কারণ সে নিচে ঘুমাবে। মানবিক দিক বিবেচনা করে সিহাব নিচে ঘুমাতে চায়। আর জোনাকিকে উপরে ঘুমাতে বলে। এর মধ্যে তাদের একটা ভাব জমে যায়। জোনাকি শিহাবকে বলে বসে যে হোটেলে সবাই আসে ফুর্তি করতে। আর আপনি আমাকে বের করে দিতে চাচ্ছেন এর কারণ কি? তখন শিহাব বলে তার প্রেমিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। তার সেখানে পৌছানো প্রয়োজন। তবে কোনো গাড়ি না পাওয়ায় সে আজ রাতে এখানে থাকছে। তবে কোনো ফুর্তি করতে সে আসে নি। তখন জোনাকি বলে যে তাকে সে পৌঁছেদিতে পারবে। তার অনেক নাগর আছে ,যাদের গাড়ি আছে। একটা, শুধু একটা কল দিলেই শতশত নাগর এসে হাজির হয়ে যাবে এ বলে সে একজনকে কল করে .শিহাব তাকে জিজ্ঞেস করে সে এরকম একজন মেয়ে হয়ে হোটেলে কি করছে। তখন শিহাবকে জোনাকি সব খুলে বলে তার এক মামাতো ভাইয়ের সাথে তার সম্পর্ক ছিল। বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসে তার মামাতো ভাই। আর বের করে নিয়ে এসে তাকেই হোটেলে বিক্রি করে দেয়। বিক্রি হয়ে যাওয়ার পর সে গ্রামে মুখ দেখাতে পারবেনা বলে এখানে থেকে যায়। জোনাকি যাকে কল করেছিল সে তাৎক্ষণাৎ হোটেলে চলে আসে। .তার নাগর সরাসরি রুমে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে জোনাকি তাকে ইচ্ছামত গালিগালাজ করতে থাকে আর বলে তার জন্য একটি কাজ করে দিতে হবে। জোনাকির নাগর তাকে বলে জোনাকির জন্য সে সবই করতে পারে।
তারপর জোনাকি তাকে বলে শিহাবকে নিয়ে গ্রামে যেতে হবে এখনই, তারা আর হোটেলে বিলম্ব না করে বেরিয়ে পড়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে যেতে যেতে জোনাকির তার জীবনের অনেক গল্প বলতে থাকে গ্রামের রাস্তায় ঢুকতেই দেখা যায় একটি বিয়ের গাড়ি বহর যাচ্ছে আর সেই গাড়িতে মেহেদী আঁকা একটি হাত বের হয়ে আছে. সাথে সাথে শিহাব গাড়ি থামাতে বলে, শিহাব বিয়ের গাড়িবহর দেখে বুঝে গেছে তার ভালবাসার মানুষ এর বিয়ে হয়ে গেছে এবং সে চলে যাচ্ছে।গাড়ি থামাতে দেখে জোনাকি শিহাবকে বলে কেন এখানে গাড়ি থামানো হলো। শিহাব জোনাকিকে বলে সেখানে গিয়ে আর লাভ হবে না কারণ, এই বিয়ের গাড়ি বহরেই তার প্রেমিকা রুপা চলে যাচ্ছে। এ কথা শুনে জোনাকির মনে ভীষণ কষ্ট লাগে এবং জোনাকি চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে।জোনাকির এমন অবস্থা দেখে শিহাব নিজে হতভম্ব হয়ে যায় এবং তাদের মধ্যে মনের একটি মিল হয়ে যায়। যা শিহাব তাৎক্ষণাৎ বুঝতে পারেনি সেটি।জোনাকি এক দৃষ্টিতে শিহাবের দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকে এবং শিহাব তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। জোনাকি হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে, শিহাব বলে আমাকে একা থাকতে দাও, যাওয়ার সময় জোনাকি শিহাবকে তার ঠিকানা লিখে দেয়। যদি কখনো মনে হয় তার সাথে যেন দেখা করে এবং জোনাকি তাকে বলে সে তার অপেক্ষায় থাকবে।
বহুকাল পর জোনাকির কথা শিহাবের মনে পড়ে এবং হন্যে হয়ে পুরো বাড়ি এলোমেলো করে, সে জোনাকির দেয়া ঠিকানাটি খুঁজে বের করে এবং রওনা হয় জোনাকির বাড়ির দিকে। ঠিকানা অনুযায়ী শিহাব জোনাকির গ্রামে এসে হাজির হয় এবং জোনাকির খোঁজ করতে থাকে। গ্রামের লোকজন জোনাকিকে নিয়ে বাজে বাজে মন্তব্য করতে থাকে এবং শিহাব তাদেরকে ডেকে জিজ্ঞেস করে জোনাকির কি হয়েছে? জোনাকি কোথায়? তারা তাকে খুব বাজে ভাবে উত্তর দেয় জোনাকি ছিল পতিতা। আর পতিতাদের না মরে উপায় কি? হাজার হাজার জায়গায় ঘুরে বেড়াতো। একেক জন লোকের সাথে শুয়ে সময় কাটাতো। তাদের মৃত্যু হবে না তো কি হবে? তাদের কাছে জানতে চায় জোনাকিকে কোথায় কবর দেয়া হয়েছে।
গ্রামের লোকজন খুব খারাপ ভাবে তাকে বলে পতিতাদের কবর গোরস্থানে দেয়া হয় না, নদীর ওই পারে খালি জায়গা আছে সেখানে কবর দেয়া হয়েছে। শিহাব তাৎক্ষণাৎ নদীর পাড়ের দিকে যেতে থাকে। যেতে যেতে এক পর্যায়ে দেখে নদীর পাড়ে একটি কবর। সে কবরের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় এমন সময় পেছন থেকে সে অনুভব করে কেউ তাকে ডাকছে। আর সে তাকিয়ে দেখে জোনাকি দাঁড়িয়ে আছে। জোনাকি তাকে বলছে এই বুঝি তোমার আসার সময় হলো। অনেক দেরি করে ফেলেছো আসতে। আমি সেই কবে থেকে তোমার অপেক্ষায় ছিলাম আর গ্রামের মানুষের কথাবার্তা সইতে না পেরে এবং তোমার দেখা না পেয়ে আমি গলায় দড়ি দিয়েছি। তুমি আসতে বড্ড দেরি করে ফেলেছো। শিহাব অঝোরে কাঁদতে থাকে। কাঁদতে কাঁদতে সে নদীর পাড়ের দিকে হাঁটতে থাকে এবং এক পর্যায়ে সে নদীর মাঝখানে চলে যায়। আর কিছুক্ষণ পর শিহাবকে আমরা দেখতে পাই না। শিহাব নিজের ইচ্ছায় নদীর জলে ডুব দেয়।
নাটকটি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে প্রচারিত হবে বলেন নির্মাতা সূত্রে জানা যায়।