পরিবেশ দিবসে দেশের ৫৩ টি স্থানে মিশন গ্রিন বাংলাদেশের বৃক্ষরোপণ

স্বাধীনতার ৫৩ বছর ও বিশ্ব পরিববেশ দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার জেলা ও উপজেলা শহরের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসা, এতিমখানা, মসজিদ এলাকাতে ৫৩টি বৃক্ষরোপন কর্মসূচীতে ৭০টির বেশি আয়োজন করেছে পরিবেশ নিয়ে কাজ করে চলা প্রতিষ্ঠান মিশন গ্রিন বাংলাদেশ।

জানা গেছে, বাংলাদেশের ৬৪ জেলাতে গাছ লাগানোর শতাধিক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে পরিবেশ দিবস উপলক্ষে একদিনে ৫৩টি কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে। দেশব্যাপী ছড়িয়ে থাকা মিশন গ্রিন বাংলাদেশের টিম মেম্বাররাও এই উদ্যোগের সাথে সহযোগী সংগঠনসমূহ এই বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী পালন করেন। এছাড়াও গণস্বাক্ষর কর্মসূচী ও অনলাইনেও বৃক্ষরোপণের প্রতিজ্ঞা কর্মসূচীরও আয়োজন করেছেন তারা। মিশন গ্রিন বাংলাদেশের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক থেকে যে কেউ এই কর্মসূচীতে অংশ নিতে পারবেন।

আয়োজকরা জানায়, দিনব্যাপী এই আয়োজনের অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলার ৫৩টি স্থানে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, এতিমখানা বা মসজিদ এলাকায় গাছ লাগানো হয় এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা, জলবায়ুর সমতা বজায় রাখা, জমির ক্ষয়রোধে গাছের ভূমিকা বিষয়ে সচেতনতামূলক মানববন্ধন ও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এছাড়া সকলের মধ্যে গাছ লাগানোর সচেতনতা বাড়ানোর জন্য ‘গাছ লাগানোর প্রতিজ্ঞা’ বিষয়ক সিগনেচার ক্যাম্পেইন অনুষ্ঠিত হয়, প্রতিটি আয়োজনে কিছু গাছ শিক্ষার্থীদের মাঝেও বিতরণ করা হয়।

আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলো হেলদি লিভিং, চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ, জেসিআই ঢাকা মেট্রো, আরডিআরসি ও ব্রান্ড অ্যান্ড ভিজ্যুয়াল। স্থানীয় পর্যায়ে গাজীপুরে স্পেশাল রেসপন্স টিমের কয়েকটি শাখাসহ আলোর দিশারী ফাউন্ডেশন, হাত বাড়াও ইয়ুথ ফাউন্ডেশন, সুরক্ষা ফ্যামিলি যুব ফাউন্ডেশন, অভিপ্রায় যুব সমাজকল্যাণ সংস্থা, ভাওয়াল মির্জাপুর তরুন সংঘ; নেত্রকোনায় ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ, অগ্রদূত মানবিক সংগঠন, স্বপ্নপুরী মানবকল্যাণ সংস্থা, দেলোয়ার একাদশ স্পোর্টিং ক্লাব, মানবতার দুর্গ সমাজ কল্যাণ সংগঠন, রক্তদানে আটপাড়া, নতুন আলো ব্লাড ফাউন্ডেশন, আমতলা ঘাসফুল সংগঠন, টিম অপরাজিতা; মুন্সিগঞ্জে ইয়্যুথ ম্যাপ গ্রুপ, রংপুরে স্বপ্ন ছুঁই ইয়্যুথ ফাউন্ডেশন, ঠাকুরগাঁও-য়ে স্টুডেন্ট ব্লাড ডোনেট অ্যাসোসিয়েশন; দিনাজপুরে সফলতা যুব উন্নয়ন সংস্থা, বীরগঞ্জ ডিবেটিং ক্লাব; পঞ্চগড়ে আশার আলো সমাজ সংস্থা; কক্সবাজার, নাটোর, নারায়নগঞ্জ, খুলনা, কুড়িগ্রাম, জয়পুরহাট, রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়ে ইয়্যুথ মুভমেন্ট; গোপালগঞ্জে প্রকৃতিবীক্ষণ ও i+1 ক্লাব; কক্সবাজারে হার্ট; সিলেট ও ময়মনসিংহে শতদ্রু ফাউন্ডেশন; জামালপুর জামালপুর ফিনান্সিয়াল হেল্প সেন্টার; ময়মনসিংহে স্বেচ্ছায় রক্তদানে ও চট্টগ্রামে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ আরও অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরষ্কারপ্রাপ্ত সংগঠন এই আয়োজনে সার্বিক সহায়তা প্রদান করে।

অনন্য এই আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে মিশন গ্রিন বাংলাদেশের আহ্বায়ক আহসান রনি বলেন, “দেশের মানুষদের মাঝে বৃক্ষরোপণের সচেতনতা বাড়াতে এবং বর্ষা মৌসুমে সঠিকভাবে যাতে বৃক্ষরোপণ ও পরিচর্যা করে এমন বিষয়গুলো জানাতেই এমন উৎসব সারা বাংলাদেশেই আয়োজন করার চেষ্টা করেছি আমরা। ৫৩টি বৃক্ষরোপন কর্মসূচীতে স্থানীয় সংগঠনগুলো এবং ভলান্টিয়ারদের অংশগ্রহন ও সহযোগিতা অতুলনীয় ছিলো। আমি এই আয়োজন করতে গিয়েই দেখেছি যদি তরুণদেরকে সঠিক কাজের জন্য অনুপ্রাণিত করা হয় তারা মন প্রাণ দিয়ে সফলতার সাথে কাজগুলো বাস্তবায়ন করে। ফান্ডের স্বল্পতার পরেও আমরা সফলভাবে সবার সহযোগিতায় এতো বিশাল আয়োজন করতে পেরেছি এটি আমাদের জন্য এক গর্বের বিষয়। সামনে পরিবেশ নিয়ে আরও বড় বড় আয়োজন নিয়ে আসবে মিশন গ্রিন বাংলাদেশ। ৬৪ জেলায় গাছ লাগানোর কার্যক্রম অব্যহত থাকবে।”

মিশন গ্রিন বাংলাদেশের প্রকল্প পরিচালক কৃষিবিদ আবুল বাশার মিরাজ বলেন, ‘পরিবেশ দূষণ থেকে বাঁচতে হলে তরুরাজির শ্যামল ছায়ায় প্রত্যাবর্তন করতে হবে। তাই বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীতা অপরিসীম। দেশের অর্থনীতি ও জনজীবনে স্বাচ্ছন্দ্য ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের প্রত্যেকের প্রতি বছর অন্তত দুটি করে বৃক্ষরোপণ করা দরকার। তাই এই সম্পদের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি পূরণের জন্য লাগামহীন বৃক্ষনিধন বন্ধ করা দরকার। পাশাপাশি বৃক্ষরোপণ জোরদার করার প্রতি আমাদের আরো সচেতন হওয়া উচিত। আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত পরিকল্পিতভাবে বৃক্ষরোপণে অংশগ্রহণ করা।’

আয়োজনের সহযোগী চেঞ্জ ইনিশিয়েটিভ-এর প্রধান নির্বাহী ও আন্তর্জাতিক পরিবেশ ও জলবায়ু নীতি ও অর্থায়ন বিশ্লেষক এম জাকির হোসেন খান বলেন, “১টা পূর্ণ গাছ প্রতিদিন ৪ জন মানুষের অক্সিজেন প্রদান করে, প্রায় ৬-৮ জন মানুষের কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণ করে। অথচ গত ২০১০ সাল থেকে গড়ে প্রায় ২.৫% বনভূমি হারাচ্ছি, শহরগুলো হিট আইল্যান্ডে পরিণত হচ্ছে। দেশব্যাপী বৃক্ষ রোপনকে ছাত্র ছাত্রীদের উৎসবে পরিণত করার মাধ্যমে রক্ষণাবেক্ষণ, পরিবেশ শিক্ষার বিস্তার, পরিবেশ সুরক্ষায় সবুজ উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। মিশন গ্রিন বাংলাদেশের সাথে যৌথভাবে চেইঞ্জ ইনিশিয়েটিভ ভবিষ্যতে সবুজ বাংলাদেশ সৃষ্টির এ প্রক্রিয়ায় যাত্রা অব্যাহত রাখবে।”

আয়োজন সহযোগী জেসিআই ঢাকা মেট্রো’র সভাপতি শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সবুজ বাংলাদেশ গড়তে হলে দেশের তরুণদের এগিয়ে আসতে হবে। বাংলাদেশকে সবুজ করে তোলার জন্য একত্রে কাজ করতে হবে। জেসিআই সারাদেশের তরুণদের নিয়ে সমাজের কল্যাণে কাজ করে চলেছে। মিশন গ্রিন বাংলাদেশের সার্বিক কার্যক্রম সমাজের ও পরিবেশের কল্যাণে এবং সারাদেশের এতো বিশাল আয়োজনে আমরা থাকতে পেরে আনন্দিত। আজ মিশন গ্রিন বাংলাদেশ পরিবেশ বিষয়ক একদিনের সবচেয়ে বড় আয়োজন করে দেখালো; টিমকে অভিনন্দন।”

আরডিআরসি এর প্রধান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, দেশে বছরে ১১ লক্ষের বেশি গাছ কাটা হচ্ছে।সারা দেশে প্রতিবাদের পাশাপাশি গাছ রক্ষার জন্য পরিবেশের কথা ভেবে সবাইকে অংশগ্রহণ করতে হবে। গাছ লাগাতে হবে। মিশন গ্রিন বাংলাদেশ এক্ষেত্রে একটি দারুণ প্রচেষ্টা। আজকে দেশব্যাপী গাছ লাগানোর আয়োজনে যুবকদের অংশগ্রহণ আমাদেরকে অনেক উৎসাহিত করেছে।

শেয়ার করুন:

Recommended For You