বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা শুনে গর্বে বুক ভরে যায় : প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা শুনে গর্বে বুক ভরে যায় : প্রধানমন্ত্রী

বিশ্বনেতারা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের ভূয়সী প্রশংসা করেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা শুনে আমার গর্বে বুক ভরে যায়।

বুধবার (২৯ মে) আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস ২০২৪ এবং বিশ্ব শান্তি রক্ষায় শাহাদাত বরণকারী ও আহত সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার পররাষ্ট্রনীতি, বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার অঙ্গীকার ও আমাদের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুসরণ করে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ব্লু হেলমেট পরিবারের সদস্য হয়েছে। শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখায় বৈশ্বিক পরিসরে বাংলাদেশ আজ একটি দায়িত্বশীল ও নির্ভরযোগ্য নাম। আমরা সর্বজন স্বীকৃত ও বিশ্বের বুকে রোল মডেল। অর্জনের পেছনে রয়েছে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ বাহিনী, টেকসই, পরিশ্রমী, নিবেদিত প্রাণ সদস্যদের মহান আত্মত্যাগ ও অমূল্য অবদান।

ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন  

তিনি বলেন, আমরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের ৩৬ বছর উদযাপন করছি। বাংলাদেশে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ। অত্যন্ত সুনাম ও গৌরবের সঙ্গে কাজ করে চলেছেন আমাদের শান্তিরক্ষীরা। যে সব দেশে আমাদের শান্তিরক্ষী বাহিনী কাজ করছে সেগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধান বা মন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা হলে তারা প্রত্যেকেই আমাদের শান্তিরক্ষীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। আর এই প্রশংসা শুনে সত্যিই আমার গর্বে বুক ভরে যায়। জাতির পিতা আদর্শ অনুসরণ করে আমরা বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছি।

শান্তিরক্ষা মিশন ছাড়াও অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের সক্রিয় অবদানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি ১৯৯৭ সালের জাতিসংঘের ‘কালচার অব পিস’ অর্থাৎ ‘শান্তির সংস্কৃতি’ এই প্রস্তাব উত্থাপন করি যা ১৯৯৯ সালে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সেই থেকে প্রতিবছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের ফ্লাগশিপ রেজুলেশন কালচার অব পিস সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়ে আসছে। পরে ২০০০ সালকে জাতিসংঘ ইন্টারন্যাশনাল এয়ার অব কালচার অব পিস হিসাবে ঘোষণা করে। এ বছরও জাতিসংঘে বাংলাদেশের উত্থাপিত কালচার অব পিস অর্থাৎ শান্তি সংস্কৃতি প্রস্তাবটি সর্ব সম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে যার মাধ্যমে শান্তি সংস্কৃতি প্রস্তাবের ২৫তম বর্ষ উদযাপন হতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ বর্তমানে অন্যতম বৃহৎ নারী শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ পর্যন্ত বাংলাদেশের তিন হাজার ৩৮ জন নারী সফলভাবে জাতিসংঘ মিশন সম্পন্ন করেছেন। এখন সবচেয়ে বেশি দাবি আসছে নারী শান্তিরক্ষীদের পাঠানোর। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল নিজেই আমাকে বলেছেন যে আমরা যেন আরো বেশি করে নারী শান্তিরক্ষী পাঠাই।

আরও পড়ুন:  রিমাল তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধ দ্রুত মেরামতের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর 

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্ব শান্তি নিশ্চিত করা এখন অতীতের চেয়ে অনেক বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রযুক্তির সাম্প্রতিক প্রসার ও অগ্রযাত্রার সাথে সাথে মানুষের নতুন নতুন হুমকি। ফলে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনগুলোতে শান্তিরক্ষীদের বহুমাত্রিক জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হচ্ছে। শান্তিরক্ষা মিশনগুলো উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সমৃদ্ধ করার প্রয়োজনীয়তা এখন বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা যাতে বিশ্বের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং এবং বিপদজনক অঞ্চলগুলোতে শ্রেষ্ঠ পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পারে সেজন্য সময় উপযোগী প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বর্তমানে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের ৬০৯২ জন শান্তিরক্ষী নিয়োজিত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ৪৯৩ জন বাংলাদেশি নারী শান্তিরক্ষী, আমরা নারী শান্তিরক্ষীদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। আমাদের শান্তিরক্ষীরা এ পর্যন্ত ৬৩টি জাতিসংঘ মিশন সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে ১৩টি মিশনে বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা নিয়োজিত রয়েছে এবং দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে‌। পেশাদারত্ব, দক্ষতা, নিষ্ঠা ও বিশ্ব শান্তি রক্ষায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় তিনি কর্তব্যরত শান্তিরক্ষীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

এ পর্যন্ত শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সর্বমোট ১৬৮ জন শান্তিরক্ষী শহীদ হয়েছেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা শান্তি মিশনে গিয়ে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের পতাকা সমুন্নত করেছেন, আমি সেই শহীদদের পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানাই।

 

শেয়ার করুন:

Recommended For You