ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বৃষ্টির সাথে বইছে ঝড়ো হওয়া। মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে লক্ষ্মীপুর রায়পুর উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। উপজেলার ছৈয়াল বাজার, মিয়ারহাট, চরকাচিয়া, চরঘাঁসিয়া, হাজিমারাসহ আশপাশের নিচু বসতিগুলোর চারপাশে পানি উঠেছে।
ঢালু বসত ভিটা ও ফসলি জমিতে ঢুকে পড়েছে পানি। প্রচন্ড বেগে বইছে বাতাস। সকাল দশটা নাগাদ এসব এলাকার ফসলি জমি ও কিছু গাছপালা ভেঙে পড়ার খবর পাওয়া গেছে। সনু মিয়া নামে এক কৃষককের বেশ কয়কটি কলা গাছ ভেঙে পড়েছে। মেঘনা তীরের এসব গ্রাম ও এলাকায় পানি উঠেছে প্রায় গড়ে ১.২১ থেকে দেড় মিটার পর্যন্ত। চরকাচিয়া, চরখাসিয়া, চরজালিয়া নামের তিনটি গ্রামে প্রায় ৫শতাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন দক্ষিণ চরবংশী ইউপির চেয়ারম্যান আবু জাফর মিন্টু।
সোমবার (২৭ মে) সকাল থেকে বিভিন্ন পানিবন্দি এলাকায় গিয়ে শুকনা খাবার বিতরণ করছেন রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান খান ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাহেদ আরমান।
সনু মিয়া নামে এক কৃষক বলেন, কলা গাছ দিয়ে বসত বাড়ির চারপাশের সৌন্দর্য বাড়িয়েছি। বাতাসের বেগের কারণে এমন হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রে যাবো না। গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি দেখবে কে। সরকারি খাবার যাদের দরকার তারা নিক।
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে ঘুর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। উপজেলার দক্ষিণ চরবংশী ইউপির মিয়ারহাট আশ্রয়ণ প্রকল্পে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ায় পানি বন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৪৫ টি পরিবার। বর্ষার সময় এই আশ্রয়ণ প্রকল্পটি হরহামেশাই হয় প্লাবিত। নিচু এই প্রকল্পটি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এখানকার বাসিন্দারা।
খাবার পেয়ে রেহানা বেগম (৫৫) নামে এক নারী বলেন, আল্লাহ হেগোরে বাঁচিয়া রাহুক। চাইরো দিকে পানি আইয়া পড়ছে। কেমনে দিন কাটবো চিন্তায় আছিলাম। অনে চিন্তা কিছুটা কাটছে।
উপজেলা প্রশাসন সুত্র জানায়, প্রায় ২২ টি আশ্রয় কেন্দ্রে তিন শতাধিকেরও বেশি মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সাথে গবাদিপশু আনা হয়েছে। মেডিক্যাল টিম ও হট লাইন চালু রয়েছে।
উত্তর চর বংশী ইউপির চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, চরঘাঁসিয়ার চান্দার খালের পশ্চিমপাড় প্লাবিত হয়েছে। নিচু এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে কাজ করে যাচ্ছি। মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। অধিকাংশ মানুষকে আমরা আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে পারিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইমরান খান বলেন, পানিবন্দি হয়ে পড়ার খবর পেয়েছি। আমাদের মেডিক্যাল টিম সজাগ রয়েছে। ২২ টি সেল্টার হাউজ প্রস্তুত আছে। দেড় শতাধিকেরও বেশি মানুষ এখন পর্যন্ত আশ্রয় নিয়েছেন। গবাদিপশু এসেছে সাড়ে তিন শতাধিকের মতো। শুকনা খাবারের ভারি ব্যাগ পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। কোনো হতাহতের ঘটনা এখন পর্যন্ত ঘটেনি। আমার ব্যক্তিগত ও হটলাইন নম্বর সার্বক্ষণিক খোলা রয়েছে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য মান্যবর ডিসি মহোদয়ের দিকনির্দেশনায় আমরা রায়পুর উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছি ইনশাআল্লাহ।