বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মোংলা বন্দরের সভাকক্ষে ২৫ মে, ২০২৪ খ্রি. তারিখের বেলা ১১:৩০ ঘটিকায় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান এর সভাপতিত্বে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ মোকাবেলার প্রস্তুতি বিষয়ক জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড়, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস (ইপিজেড), এনএসআই, ডিজিএফআই প্রতিনিধিসহ মোংলা বন্দরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগন সরাসরি ও জুমের মাধ্যমে উপস্থিত ছিলেন। ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর কারণে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ যে সকল জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে তা নিম্নরূপ-
১) ক। সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ সকল ব্যক্তিবর্গ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন। এখন স্থানীয় সতর্ক সংকেত ০৩ পর্যন্ত বন্দরের কার্যক্রম সচল রাখা হয়েছে। তবে ৪ নং সতর্ক সংকেত এর পর থেকে মোংলা বন্দরের সকল প্রকার অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রাখা হবে।
খ। এই মূহুর্তে মোংলা বন্দরের হারবাড়িয়ায় ০৪ টি জাহাজ, বেসক্রিক এরিয়ায় ০১ টি ও জেটিতে ০২ টি জাহাজসহ মোট ০৬ টি বিদেশি জাহাজ রয়েছে। বাণিজ্যিক সকল জাহাজসমূহকে জেটির পার্শ্ব ত্যাগ করে চ্যানেলের বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করে নোঙ্গর করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
গ। মোংলা বন্দরের নিজস্ব জলযানসমূহকে ২ টায়ারে বিদ্যমান বার্থসমূহে নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ঘ। বন্দরের জেটি এলাকার অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার ও অন্যান্য কার্গোসমূহকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব হতে রক্ষা করতে সিঙ্গেল টায়ারে সুশৃঙ্খলভাবে সাজিয়ে বেধে রাখা হয়েছে।
ঙ। কার্গো হ্যান্ডলিং ইকুইপমেন্টগুলোকে ইকুইপমেন্ট ইয়ার্ডে সঠিকভাবে বেধে রাখা হয়েছে। যাতে ঘুর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
২) মোংলা বন্দরের আবাসিক এলাকাগুলোতে বসবাসরতদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি ও জরুরি সেবার জন্য আলাদা আলাদা উপ-নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
৩) মবকের অভ্যন্তরে অন্যান্য এলাকায় বসবাসরত সকল ব্যক্তিবর্গকে মোংলা বন্দরের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তরের বিষয়ে সাইক্লোন সেন্টার (ধারণ ক্ষমতা ১০০০ জনের) হিসাবে ব্যবহারের জন্য প্রস্তত করা হয়েছে।
৪) ঘূর্ণিঝড়ের সংকেতের পূর্বাভাসের সময়ে সকল ব্যক্তিবর্গকে মাইকিং করে সতর্ক অবস্থায় নিরাপদে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে, এবং ঘরের দরজা-জানালা শক্ত করে বেধে রাখার জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
৫) ঘূর্ণিঝড় শুরুর পূর্ব হতে শেষ অবধি এ সংক্রান্ত সকল তথ্য হালনাগাদ ও সমন্বয় সাধনের জন্য মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষে একটি কন্ট্রোলরুম স্থাপন করা হয়েছে। সেখান থেকে সকল কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
কন্ট্রোল রুমের ফোন: +৮৮০২-৪৭৭৭৫৩৮৩৫ ও ০১৪০৪-৪১১৮৫৬, ০১৩২৯-৬৯৯০৩৯
৬) ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি ও বন্দরের কার্যক্রম চালু করতে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাদি স্বাভাবিক করণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
ক। মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।
খ। বিদ্যুৎ সরবরাহ
গ। টেলিফোন যোগাযোগ
ঘ। রাস্তাঘাট/ঝড়ের সাথে সাথে পরিষ্কার করতে হবে।
ঙ। মুরিং/বার্থ
চ। পানি ও পানিয় সরবরাহ
ছ। নিরাপত্তা বিভাগ কর্তৃক রেসকিউ টিম গঠন
ঝ। জলাবদ্ধতা নিরসন।
৭) ঘূর্ণিঝড়ে কোন জাহাজ/জলযান মবক চ্যানেলে ক্ষতিগ্রস্থ/ডুবে গেলে তা দ্রুত অপসারণের জন্য কয়েকটি স্যালভেজ প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করা আছে। প্রয়োজনে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের উদ্ধার জলযানের সহযোগিতা গ্রহণ করা হবে।
৮) ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন সময়ে মুরিং বয়ায় থাকা জলযানগুলিকে মবকের টাগ বোট সহযোগিতা করবে।
ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এর জন্য প্রস্তুতি হিসেবে নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও সংশ্লিষ্ট বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। বন্দর চ্যানেলকে নিরাপদে রাখার জন্য দেশি কার্গো ও লাইটারেজ গুলোকে চ্যানেলের বাইরে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। বর্তমানে মোংলা বন্দরের অবস্থানরত ০৬ টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজকে নিরাপদ ও সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে। বন্দরে আমদানিকৃত গাড়ি নিরাপদে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে ও আমদানিকারকগনের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। এছাড়া বন্দর জেটিতে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের জাহাজগুলো নিরাপদ অবস্থানে রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।