চুয়াডাঙ্গা জেলার ও দেশের সর্ববৃহত চিনি শিল্প প্রতিষ্ঠান দর্শনা কেরু এন্ড কোম্পানি (দর্শনা চিনিকল) চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের মাধ্য ১০৪ জন মৌসুমি শ্রমিককে স্থয়ীকরণ করেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। ফলে মোটা অংকের টাকার এই নিয়োগ বানিজ্য এখন জেলার সর্বত্র আলোচনার কেন্দ্রবৃন্দুতে রয়েছে।
এ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে জন্ম নিয়েছে নানা বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে মৌসুমি শ্রমিক থেকে স্থায়ী করণ করতে প্রতিটি স্থায়ী নিয়োগের জন্য লাখ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে কেরু এন্ড কোম্পানী হিসাব, কৃষি ও কারখানা বিভাগের ১০৯ টি স্থায়ী শূন্য পদ পূরণের জন্য আন্ত:বিবাগীয় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি মোতাবের ১০৯ পদে কেরুর ৫৫১ জন মৌসুমি শ্রমিক আবেদ করেন। এর মধ্যে ২৮ জনের আবেদন যাচাই বাছায়ে বাতিল হয়। বাতিল শেষে মোট বৈধ আবেদনের সংখ্যা দাড়ায় ৫২৩ টি। এসব বৈধ আবেদনকারীদের গত ১৩ মে লিখিত পরীক্ষা ও ১৪ মে মৌখিক পরীক্ষা শেষ হয়।
ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন
অপরদিকে, গত ১৫ মে ৩৬, ০৪, ০০০০, ০০০. ১৮. ০০১. ২৫-১২৪ নাম্বার স্বারকে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের সচিব চৌধুরী রুহুল আমিন কায়সার স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে জানান, অনিবার্য কারণবশতঃ বিএসএফআইসি’র (বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন) অধীন সকল চিনিকল/প্রতিষ্ঠানে চলমান মৌসুমি জনবল থেকে জনবল স্থায়ীকরন সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম এতদ্বারা নির্দেশক্রমে স্থগিত করা হলো। মৌসুমি জনবল থেকে জনবল স্থায়ীকরন সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম স্থগিত করে মিল ব্যবস্থাপনাকে সংস্থার চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) মহোদয়কে অতিসত্ত্বর পত্র দ্বারা অবগত করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন এই অফিস আদেশকে পাসকাটিয়ে কেরু এন্ড কোম্পানির ব্যবস্থপনা পরিচালক মোশারফ হোসেন ১৫ মে ১০৯ পদের মধ্যে ৫ টি পদ খালি রেখে ১০৪ টি শূন্য পদে ১০৪ জন মৌসুমি শ্রমিককে স্থায়ীত্ব করনের নিয়োগ দিয়ে কর্মস্থলে যোগদান করান কেরু কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। অথচ করপোরেশনেন এ নির্দেশনা পাওয়ার পর রাষ্টায়াত্ব সব চিনিকল স্থায়ী জনবল নিয়োগ বন্ধ রাখলেও বন্ধ রাখেনি দর্শনা চিনিকল কর্তৃপক্ষ।
এদিকে স্থায়ীকরণে মুক্তিযোদ্ধা কোঠা না রাখায় কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছে কারখানার মৌসুমী মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের পক্ষে বাবুল আক্তার। কেরু শ্রমিক ও কর্মচারী এবং অফিস সূত্র জানা গেছে, গত ২ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে কেরুতে ১০৯ জন মৌসুমী শ্রমিক স্থায়ীকরণ করা হবে মর্মে একটি বিজ্ঞপ্তি কেরুর নিজস্ব নোটিশ বোর্ডে টাঙ্গানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশের পর জনপ্রতি দুই থেকে তিনশো টাকা করে ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে ৫৫১ জন আবেদন করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শ্রমিক বলেন, ভাই এখানে টাকার খেলা। যে বেশি হিট (টাকা) দিতে পেরেছে তারই চাকরি স্থায়ী করণ হয়েছে। এখন কিছু বলতে গেছে মৌসুমের যে কাজটা আছে সেটাও হারাবো।
এ বিষয়ে কেরুর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেনের কথা বলার জন্য তার মোবাইলে বারবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে সরেজমিনে তার কার্যালয়ে গিয়ে ঘটনার সত্যতা নিয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি ক্যামেরার সামনে বা অডিও রেকর্ড করার কোন অনুমনি দেননি, কোন কথা বলেননি।
এ দিকে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান জনাব শেখ সোয়াইবুল আলম (গ্রেড-১) জানান, শুধু কেরু নয় ১৫ মে রাষ্টায়াত্ব সকল চিনি কলের জনবল স্থায়ীকরণ কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপরও কিভাবে জনবল নিয়োগ দেয়া হলো তা আমার জানা নাই।