জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটে এক নেত্রীকে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দিতে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতার বিরুদ্ধে। ওই নেত্রী শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের ‘মেয়ে বন্ধু’ (গার্লফ্রেন্ড) বলে পরিচিত।
রবিবার (১৯ মে) জাবির বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়োগকে কেন্দ্র করে বেশ আগে থেকেই প্রার্থীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করলেও সম্প্রতি তা বেড়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আছে, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের বান্ধবী আনিকা সুবাহ’র নাম। তিনি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি। আনিকা সুবাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ৪৫ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী। এছাড়াও আলোচনায় আছেন শতাব্দী সরকার নামে ৪৪ ব্যাচের আরেক ছাত্রলীগ নেত্রী।
ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন
প্রত্যক্ষদর্শীসূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার রাতে শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটন বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক শামীম রেজার সাথে ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) দোতলায় অতিথি কক্ষে মিটিং করেন। এর আগে গত ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী দিবসে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটির দিন সন্ধ্যায় উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলমের বাসভবনে শিক্ষক পদে আবেদনকারী আনিকা সুবাহকে নিয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লিটন সাক্ষাৎ করেন। ওই সাক্ষাতে লিটন তার গার্লফ্রেন্ডকে নিয়োগ দিতেও চাপ প্রয়োগের অভিযোগ ছিল। এরপর রবিবারের নিয়োগ বোর্ড ঘিরে গতকাল শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এক ছাত্রনেতা যিনি বর্তমানে আওয়ামীলীগ থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য- ক্যাম্পাসে আসেন এবং লিটনের সঙ্গে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করেন।
এছাড়াও গতকাল শনিবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে শোডাউন দিয়ে উপাচার্য বাসভবনে যান। এই শোডাউনে সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারীরা থাকলেও লিটন নিজে উপস্থিত ছিলেন না।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মী সূত্রে জানা যায়, লিটন গতকাল শনিবার মূলত কৌশলগত কারণে উপাচার্য অধ্যাপক মো নূরুল আলমের বাসভবনে উপস্থিত না থেকে তার অনুসারী এবং শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলকে দিয়ে উপাচার্যকে চাপ প্রয়োগ করতে তার বাসভবনে দেখা করেছেন। উপাচার্যের বাসভবনে যেসব নেতাকর্মীরা প্রবেশ করেছিলেন গোপনীয়তার স্বার্থে তাদের সবার ফোন বাইরে রেখে প্রবেশ করেন।
নেতাকর্মীদের সূত্রে আরও জানা যায়, বৈঠকে উপাচার্যের সঙ্গে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক বশির আহমেদ ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ এ মামুন উপস্থিত ছিলেন। এসময় অধ্যাপক বশির আহমেদ নেতাকর্মীদের জানান, দুজন প্রার্থীর (শতাব্দী সরকারসহ) একজনকে অবশ্যই নিয়োগ দেবেন, আরেকজনকে নিয়োগের চেষ্টা করবেন বলে আশ্বস্ত করেন। আজ রবিবার সকালে তাদের সাথে আরও একটি মিটিং করা হবে বলেও জানানো হয়। নেতাকর্মীরা বেড়িয়ে আসার সময় অধ্যাপক বশির আহমেদ এবং অধ্যাপক এ এ মামুন সহ আরো ২ জন অধ্যাপক নিজেদের মধ্যে মিটিংয়ে বসেন।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে উপাচার্য স্যারের সাথে দেখা হয়না। তাই আমরা সৌজন্যে সাক্ষাৎ করতে এসেছিলাম। তবে স্যার ব্যস্ত থাকায় আমাদের সাথে দেখা হয়নি। আগামীকালের নিয়োগ বোর্ড নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি’।
ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো যোগ্যরা যাতে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। আমি কোনো চাপ ফিল করছি না। আগামীকাল নিয়োগ বোর্ড আছে মেধাবীরা যাতে সিলেক্ট হয় সেই চেষ্টা করবো।’
এদিকে মিটিংয়ে আশ্বস্ত করার বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক বশির আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে নিয়োগ বোর্ডের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায় নি।