আমরা না খেয়ে দিন কাটাবো আর ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরে নিয়ে যাবে

আমরা না খেয়ে দিন কাটাবো আর ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরে নিয়ে যাবে

বরগুনা সদর উপজেলার গোরাপদ্মমা এলাকার বাসিন্দা দুলাল হাওলাদার (৪০) সেই ছেলেবেলা থেকেই সাগরে গিয়ে মাছ ধরেন। তার ৬ সদস্যের পরিবারে দৈনিক অন্তত ৩ কেজি চালের দরকার হয়। সে হিসেবে মাসে তার চাল লাগে ৯০ কেজির মতো।

কেবল ৩ বেলা কোনোভাবে খাওয়ার জন্য চালের পাশাপাশি ডাল, শাকসবজি ও পেঁয়াজ-তেলসহ অন্যান্য তরকারি জিনিসেরও দরকার হয়। সীমিত আয় দিয়ে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে স্বাভাবিক সময়েও এগুলোও জোগাড় করতে হিমশিম খেয়ে যান দুলাল। তাই বাধ্য হয়ে ধার-দেনা করে কোনোভাবে সংসার চালাতে হয় তাকে। মাছ ধরা ও এ সংক্রান্ত কাজ ছাড়া অন্যকিছু শেখা হয়নি দুলালের। তাই তার কাছে কাজ বন্ধ মানে আয়ও বন্ধ। বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও ইলিশসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছের সুষ্ঠু প্রজনন নিশ্চিত করতে বঙ্গোপসাগর ও নদী মোহনায় মৎস্য আহরনে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শুরু হবে আগামী ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত চলবে অবরোধ। এই ৬৫ দিন কর্মহীন হয়ে যাচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চল বরগুনা হাজারো জেলে। কর্মহীন হয়ে যাওয়ার চিন্তায় জেলে পল্লী অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে।

ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন   

শনিবার (১৮ মে) উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, জেলে পল্লীতে জেলে পরিবার গুলোতে কর্মহীন হয়ে যাওয়ার চিন্তা বিরাজ করছে। অভাব অনটনে কাটবে এই ৬৫ দিন, সেই চিন্তায় আঁধারে আচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে তাদের সকল উৎসাহ উদ্দীপনা ও কর্মচাঞ্চল্য।

বরগুনা মৎস্য কর্মকর্তার তথ্য অনুসারে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে বরগুনা সদর – ৮ হাজার ৯২২ জন,আমতলী – ৭ হাজার ৮৫৪ জন, বামনা. ৯০১ জন, বেতাগী – ৪ হাজার ১৩৪ জন, পাথরঘাটা- ১৪ হাজার ১৭৬ জন বরগুনা জেলায় মোট ২৭ হাজার ২৫০ জন। ৫৬৪২ বরগুনার জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি। এদের মধ্যে সমুদ্রগামীসহ সকল জেলেরা ৬৫ দিনের জন্য কর্মহীন হয়ে পড়বে। অবরোধের ৬৫ দিনের জন্য ২৭ হাজার ২৫০ জন প্রথম পর্যায়ে ৪২ দিনে সরকারি সহায়তা পাবে ৫৬ কেজি চাল।

জেলে দুলাল বলেন, নিষেধাজ্ঞার ৬৫ দিনে আমরা ৮৬ কেজি চাল পেয়ে থাকি। এই ৮৬ কেজি চাল দিয়ে সংসার চলে না। সামনের ৬৫ দিনের কথা চিন্তা করলে এখন থেকে চোখের সামনে সবকিছু অন্ধকার দেখি। আর চিন্তা করি এই অন্ধকারের ৬৫ দিন কবে যে কাটবে। এই সময়ের এক একটি দিন মনে হবে মাসের সমান। বর্তমান সময়ে নদীতে ও সাগরে তেমন মাছও নেই যে পুঁজি করে কিছু টাকা রাখবো। ধার দেনা করে জীবন চলে। আর অন্য কোন কাজের ব্যবস্থা নেই যে ৬৫ দিন কাজ করে খাব।

তিনি আরো বলেন, আমরা এ সময় না খেয়ে কষ্টে দিন কাটাবো কিন্তু ভারতীয় ট্রলার ঠিকই এই সময়ে তারা মাছ ধরবে। বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞায় আমাদের এলাকার জেলেদের কষ্টে কাটবে । ভারত-বাংলাদেশ একই সময়ে সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হোক। জেলেদের এই ৬৫ দিনের জন্য বিকল্প কোন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দেয়ার দাবি জানাই সরকারের কাছে।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার জানান, মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করবে সরকার। নিবন্ধিত জেলেদের এই ৬৫ দিনের জন্য ৮৬ কেজি চাল দেয়া হবে। নিবন্ধনের বাইরে থাকা জেলেদের তালিকা করার জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তালিকার কাজ চলছে। এ ছাড়া সরকারিভাবে অন্য কোন সহায়তা বৃদ্ধি করলে তা আমরা জেলেদের কাছে পৌঁছে দেবো।

শেয়ার করুন:

Recommended For You