দেশে ক্রমেই বাড়ছে বাতের কষ্টে ভোগা মানুষের সংখ্যা। শুরুতে সঠিক চিকিৎসা, নিয়মিত ওষুধ সেবনের পাশাপাশি নিয়মমাফিক জীবনযাপন করা গেলে বাতের যন্ত্রণা থেকে অনেকটা স্বস্তি পেতে পারেন রোগীরা। উদ্বেগের বিষয় হলো সঠিক সময়ে উপযুক্ত চিকিৎসা না নেওয়ায় এসব সমস্যায় ‘অল্প’ বয়সেই ‘বৃদ্ধ’ হচ্ছেন সাধারণ মানুষ, এমনকি এতে করে ঝুঁকিতে পড়ছে অসংখ্য রোগীর জীবন।
ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন
শনিবার (১১ মে) রাজধানীর বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন সেন্টারে বাত-ব্যথা রোগীদের সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানে চিকিৎসকরা এসব কথা বলেন। চিকিৎসকদের মতে, বাতের রোগীদের ওপর গবেষণা বাড়ানো গেলে আরও সুনির্দিষ্ট করে এ বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার সুযোগ তৈরি হতে পারে। যদিও দেশে বাত-ব্যথা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সংকট দিন দিন উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। বাত-ব্যথা রোগীদের জন্য কাজ করা সংগঠন প্রফেসর নজরুল রিউমাটোলজি ফাউন্ডেশন অ্যান্ড রিসার্চ (পিএনআরএফআর) ট্রাস্টের পক্ষ থেকে অষ্টমবারের মতো এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বাত-ব্যথা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পিএনআরএফআর ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান ও শমরিতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নীরা ফেরদৌস।
মূল প্রবন্ধের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে দেশভেদে ২৫-৫০ শতাংশ মানুষ বিভিন্ন গিরা/পেশির ব্যথায় ভুগছেন। নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি ভুগে থাকেন। গিরা-ব্যথার কারণে প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ কাজ করতে অক্ষম হয়ে যায়। ২০২২ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী, দেশে যে প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ ১১ কোটি। সেই হিসাবে প্রায় ৮০ লাখ মানুষ হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসে ভুগছেন (৭ দশমিক ৩ শতাংশ)। তথ্য অনুযায়ী, হাঁটুর অস্টিওআর্থ্রাইটিসে নারীরা বেশি ভুগছেন। পাশাপাশি শারীরিক স্থূলতা ও হাঁটুতে আগে আঘাত পাওয়া ব্যক্তিদের এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি। অন্যদিকে কোমর ব্যথা বাতের (লাম্বার স্পনডাইলাইটিস) প্রকোপও অনেক বেশি। বাত নিয়ে দেশের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ১৮.৬ শতাংশ (২ কোটি ৫ লাখ বেশি) এ সমস্যায় ভুগছেন।
অন্যদিকে, যৌবন বয়সের বাত রোগীদের স্পনডাইলো আর্থ্রাইটিসে আক্রান্তের হারও উদ্বেগজনক। গবেষণার প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেশের ১.২ শতাংশ (সাড়ে ১৩ লাখ) মানুষ এ সমস্যায় ভুগছেন। এর বাইরে যেকোনো ধরনের ব্যথায় ভোগা মানুষ নিজেকে নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে গাউট রোগের চিকিৎসা নেন। যেখানে ইউরিক অ্যাসিডসহ নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকেন। তবে তথ্য বলছে, গাউট সমস্যায় ভুগছেন দেশের মাত্র ০.৫ শতাংশ (সাড়ে ৫ লাখ) মানুষ।
তবে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা বেশি থাকে ৩৩ শতাংশ মানুষের। তবে তারা গাউটের রোগী নন। কিন্তু গাউটের ওষুধ সেবন করেন, যা একটা সময় শারীরিক অন্য জটিলতা তৈরি করতে পারে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিএনআরএফআরের চেয়ারম্যান, এশিয়া প্যাসিফিক লীগ অব অ্যাসোসিয়েশন ফর রিউমাটোলজি ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) মো. আখতার হোসেন, পথিকৃৎ ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলি, সাবেক সংসদ সদস্য ও বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা শিরীন আহমেদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, অধ্যাপক ডা. সুজন আল হাসান, পিএনআরএফআরের সেক্রেটারি জেনারেল ড. পিযুষ কান্তি বিশ্বাস প্রমুখ।