পাবনার ঈশ্বরদীতে মোজ্জাফ্ফর জাতের (দেশি) লিচু অনাবৃষ্টি ও প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে কালচে হয়ে ফেটে যাচ্ছে। আর মাত্র ৭-১০ দিনের মধ্যে ঈশ্বরদীর বাজারে উঠবে দেশি লিচু। স্থানীয়দের কাছে যা আঁটি লিচু হিসেবে পরিচিত। বিরূপ আবহাওয়ার কারণে লিচু পাকার হলুদ ও লালচে রং ধারণের সঙ্গে সঙ্গেই লিচুর উপরের আবরণ কালচে হয়ে ফেটে যাচ্ছে।
তীব্র তাপপ্রবাহ ও অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর প্রতিটি লিচু গাছের প্রায় ৪০-৫০ ভাগ গুঁটি ঝরে গেছে। এবার লিচু পাকার ঠিক এক সপ্তাহ আগে কালচে হয়ে ফেটে যাওয়ায় চাষিরা ব্যাপক লোকসানের আশঙ্কা করছেন।কৃষিবিদরা জানান, ঈশ্বরদী সুমিষ্ট ও রসালো লিচুর জন্য বিখ্যাত। এখানে চায়না, বোম্বে, মোফাজ্জরসহ দেশি জাতের বিভিন্ন লিচুর বাণিজ্যিকভাবে আবাদ হয়। লিচু ২৮-৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চাষাবাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন
তাপমাত্রা এরচেয়ে বেশি হলে লিচু ফলনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। প্রায় এক মাস ধরে ঈশ্বরদীতে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রা ৩৯-৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। ফলে লিচুর আকার ছোট হয়ে এবং সুমিষ্ট এ ফলের প্রাকৃতিক স্বাদ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ঈশ্বরদীর মিরকামারীর জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত লিচু চাষি আব্দুল জলিল বলেন, আমাদের বেশ কয়েক জাতের লিচু চাষ হয়। এরমধ্যে দেশি বা আঁটি জাতের লিচু সবার আগে বাজারে উঠে। প্রতি বছর মে মাসের ১০-১৫ তারিখের মধ্যে বাজারজাত হয়। এবার অনাবৃষ্টির কারণে লিচু আকারে ছোট হয়ে গেছে। লিচু যখন পাকার উপযোগী হয় তখন লিচুর চামড়া পাতলা হয়ে যায় লিচুর ভিতরের অংশ বড় হতে থাকে। লিচু যখন পাকার উপযোগী হয় তখন কোনো অবস্থাতে ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রার বেশি ধারণ করতে পারে না। আমাদের এখানে এখনতো তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। তাপপ্রবাহ এভাবে আর সাতদিন থাকলেই দেশি লিচু অবস্থা খারাপ হয়ে যাবে।
মানিকনগর গ্রামের লিচু চাষি আইয়ুব আলী পান্না বলেন, দেশি জাতের লিচু পাকার উপযোগী লালচে রং ধারণের সঙ্গে সঙ্গেই তা তীব্র রোদে পুড়ে কালো বর্ণ হয়ে যাচ্ছে। আর এক সপ্তাহ যদি এরকম তাপপ্রবাহ থাকে তাহলে দেশি জাতের লিচুর ব্যাপক ক্ষতি হবে। এটি আমরা বাজারজাত করতেই পারবো না। একই গ্রামের কৃষক বাদশা আলী কারিগর বলেন, খরার কারণে পাকার উপযোগী হওয়া মাত্র দেশি লিচু তীব্র তাপে পুড়ে কালচে হয়ে যাচ্ছে। আমরা এ অঞ্চলের সাধারণ চাষিরা লিচুর ওপর নির্ভরশীল। লিচুর ফলন খারাপ হলে আমাদের স্ত্রী-সন্তান নিয়ে চলাচল কষ্ট হয়ে যাবে।
সাহাপুর গ্রামের লিচু বাগান মালিক ও স্কুল শিক্ষক জিয়াউল ইসলাম জিয়া বলেন, তীব্র তাপদাহের কারণে দেশি জাতের লিচু পাকার ঠিক আগ মুহূর্তে লিচু-চামড়া পুড়ে কালচে হয়ে যাচ্ছে। দেশি লিচু পুড়ে যাওয়ায় চাষিরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। লিচু চাষে প্রত্যেকটা কৃষকরা সেচ, সার, কীটনাশকের পেছনে ব্যাপক খরচ করেন। পাশাপাশি চাষিদের ব্যাপক শারীরিক পরিশ্রম হয়। এতকিছুর পর যদি লিচু পাকার পূর্ব মুহূর্তে নষ্ট হয়ে যায় তাহলে কৃষকদের হাহাকার করা ছাড়া আর কিছুই থাকে না।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন বলেন, প্রায় এক মাস ধরে মাঝারি, তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজমান রয়েছে। তাপমাত্রা ৩৯-৪৩ ডিগ্রির মধ্যে উঠানামা করছে। এতে সূর্যের তীব্র প্রখরতায় মানুষের পাশাপাশি প্রকৃতিও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সলিমপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া বলেন, মোজাফ্ফর জাতের দেশি লিচু বেশি তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না। অতিরিক্ত তাপমাত্রায় এটি পুড়ে কালচে হয়ে যায়। শুধুমাত্র গাছের গোড়ায় পর্যাপ্ত সেচ ও গাছের ওপরে পানি ছিটানোর মাধ্যমে এটি কিছুটা রোধ করা যেতে পারে। এছাড়াও লিচুর কালচে রং রোধ করতে চাষিরা ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে পারে।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, বৃষ্টি না হলে লিচুর গুঁটির চামড়া পুড়ে যাবে। চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদীতে কোনো বৃষ্টি হয়নি। এজন্য গাছের গোড়ায় নিয়মিত সেচ চালু রাখতে হবে। সম্ভব হলে গাছের ওপর পানি ছিটিয়ে দিতে হবে। একই সঙ্গে লিচু পাকার মৌসুমে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির বেশি হলেই লিচু শুকিয়ে ঝরে পড়তে পারে। সেজন্য উঠান বৈঠকের মাধ্যমে চাষিদের লিচু গুঁটি ঝরা ও গুঁটির চামড়া পুড়ে যাওয়া রোধে নানা পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।