সাতক্ষীরায় বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শুক্রবার (০৩ মে) সকালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবু আহমেদ।
সাংবাদিক শরিফুল্লাহ কায়সার সুমনের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বারী, সূর্যের আলোর সম্পাদক আব্দুল ওয়ারেস খান চৌধুরী, মো. আবুল কাশেম,আমিনা বিলকিস ময়না, আহসানুর রহমান রাজীব প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের সংবিধানে বাক স্বাধীনতার যে অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছেন সেই অধিকার আজও সেইভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। সাংবাদিকতা করতে যেয়ে প্রতি পদে পদে বিড়াম্বনায় পড়তে হচ্ছে।
বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশের করপরেট পুজি মুক্ত গণমাধ্যমের বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারতো। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে হচ্ছে তার উল্টোটা। ফলে বড়বড় সাংবাদিকদের অনেকে সেই পুজির দাসত্ব করতে বাধ্য হচ্ছে। যার প্রভাব আজ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে।
বক্তারা আরো বলেন, এখন দেশের বিভিন্নস্থান থেকে প্রতিদিনই নতুন নতুন সংবাদপত্র প্রকাশিত হচ্ছে। অসংখ্য টেলিভিশন লাইসেন্স পেয়েছে। এলাকায় এলাকায় অনলাইনের জন্ম হচ্ছে। কিন্তু গণমাধ্যম জনগনের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটাতে পারছে না।
জেলায় সাংবাদিকতার নানা বিড়ম্বনার কথা তুলে ধরে বক্তারা বলেন, সরকারি কর্মকর্তার কাছে যেয়ে আমরা প্রয়োজনীয় তথ্য পাইনা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনিয়ম অব্যবস্থাপনার তথ্য সংগ্রহে গেলে অনেক বড়ভাই সাংবাদিকরা ফিরে আসতে বলেন। সাংবাদিকদের মধ্যে বিভাজন করে সৃষ্টি করে দূর্নীতিবাজরা দাপটের সাথে দুর্নীতি করে যাচ্ছে।
বক্তরা যুব সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য বলেন, গণমাধ্যমের প্রধান সম্পদ হচ্ছে তার বিশ্বাসযোগ্যতা, যা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে অর্জন করতে হয়। বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশের গণমাধ্যম তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারাতে বসেছে। সাংবাদিকতা পেশার জন্য এটা হুমকি স্বরূপ। কাজেই হলুদ সাংবাদিকতা, অপসাংবাদিকতা কিংবা দায়িত্বহীন সাংবাদিকতা যেন কোনোভাবেই নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকদের স্পর্শ না করে সে ব্যাপারে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
বক্তারা আরো বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালন করার সময় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অসংখ্য সাংবাদিক হত্যার শিকার হচ্ছেন। কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)-এর তথ্যমতে, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে কমপক্ষে ৯৯ জন সাংবাদিক মারা গেছেন। এর মধ্যে ৭৭ জনই গাজায় ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে জীবন হারান।
বক্তারা পরিবেশ ও জলবায়ুগত বিপর্যয়ের মতো বিষয়গুলোর সঙ্গে মুক্ত সাংবাদিকতার সম্পর্কের দিকটি তুলে ধরে বলেন, মুক্ত সাংবাদিকতার পরিপূর্ণ চর্চা থাকলে পরিবেশ ও জলবায়ুগত অনেক বিষয়ে সাংবাদিকরা আরো ভূমিকা রাখতে পারবেন। এজন্য সহায়ক আইনি কাঠামো, নীতি ও প্রাতিষ্ঠানিক চর্চার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তারা।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, পরিবেশের বিষয়গুলো গণমাধ্যমে তুলে ধরা একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যের অভাব, পরিবেশ-বিরোধী কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্তদের চাপ বা হুমকি, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়গুলো এ ধরনের সাংবাদিকতার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। আবার এরকম বিশেষায়িত বিষয়বস্তুর ওপর সাংবাদিকদের প্রস্তুতির ঘাটতিও এ ধরনের রিপোর্টিংয়ের ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াতে পারে।
উল্লেখ্য, ১৯৯১ সালে ইউনেসকোর ২৬তম সাধারণ অধিবেশনের সুপারিশ মোতাবেক ১৯৯৩ সালে জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ৩ মে তারিখটিকে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে’ অর্থাৎ বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের স্বীকৃতি দেয়া হয়। অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে দিবসটি পালন করা হয়। বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে দেশের সাংবাদিকরা পেশাগত অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে থাকে।
সিনিয়র সাংবাদিক শরীফুল কায়সার সুমনের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন সাংবাদিক আবুল কাশেম, সেলিম রেজা মুকুল, কালিদাস রায়, গোলাম সরোয়ার, আমিনা বিলকিস ময়না, এখন টিভির আহসানুর রহমান রাজিব, আসাদুজ্জামান সরদার, হোসেন আলী, এসএম বিপ্লব হোসেন প্রমুখ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন, সাংবাদিক আমিরুজ্জামান বাবু, কাজী শহিদুল হক রাজু, রফিকুল ইসলাম শাওন, শহিদুল ইসলাম, আব্দুল আলিম, ফারুক রহমান, ডিএম কামরুল, শেখ তানজির আহমেদ, কৃষ্ণ মোহন ব্যানার্জি, গাজী ফরহাদ, আবু সাইদ, ফিরোজ হোসেন, আলি মুকতাদা হৃদয়, হাবিবুল হাসান, সেলিম হোসেন, মাজহারুল ইসলাম প্রমুখ।