মালিকদের বিলাসিতা কমিয়ে শ্রমিকদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে, তাদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।”
বুধবার মে দিবস উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন সরকারপ্রধান। বক্তব্যের শুরুতে তিনি শ্রমিকের অধিকার আদায়ে মে দিবসে আত্মদানকারী শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনই আওয়ামী লীগের ‘লক্ষ্য’ মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “শোষিত মানুষের মুক্তির জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কাজ শুরু করেছিলেন এদেশে। দেশের মানুষের বৈষম্য তিনি দূর করতে চেয়েছিলেন। এই অঞ্চলের কোনো শিল্প কারখানা ছিল না। যুদ্ধের পর এই দেশ ছিল ধ্বংসপ্রাপ্ত।
ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন
“মা যেমন একজন রুগ্ন সন্তানকে লালন-পালন করে সুস্থ করেন, তেমনি একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত দেশ গড়ে তুলে শ্রমিকের কর্মসংস্থানসহ জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করেছিলেন। শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।” বঙ্গবন্ধুর সময়ই যে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা-আইএলও-এর সদস্যপদ পেয়েছিল, সে কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “কেউ যদি শ্রমিকদের ন্যায্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত করে, সে যেই হোক না কেন, যত বড়ই হোক না কেন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তি হলেও আমরা ছাড়ি না, ছাড়ব না। শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ করতে হবে, তাদের ভালো মন্দ দেখতে হবে।”
শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নির্বিঘ্ন করতে এবং সহজলভ্য করতে ট্যাক্স তুলে দিয়েছি, যাতে শিল্প কারখানা নিরাপদ হয়। আজ সারা বিশ্বের মধ্যে সেরা ১০টি গ্রিন শিল্প কারখানা বাংলাদেশে।” শ্রমিকদের দুঃসময়ে আওয়ামী লীগই সবসময় পাশে থেকেছে দাবি করে সরকারপ্রধান বলেন, “মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট। বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চ এমন কিছু নেই যাতে আগুন দেয় নাই। ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেকের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছি। বিনাখরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। শ্রমিকদের কল্যাণ দেখা আওয়ামী লীগের দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।” রপ্তানিমুখী গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারীদের সার্বিক কল্যাণে কেন্দ্রীয় কল্যাণ ফান্ড গঠনের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “জাতীয় শ্রমনীতি ২০১২ যুগোপযোগী করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের দেশের শ্রমিক-কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান যাতে ভালো থাকে, সেজন্য সকলের বেতন আমরা পাঁচ ভাগ বাড়িয়েছি। সেখানে শ্রমজীবী মানুষের জন্য আমরা এই হার ৮ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকায় উন্নীত করেছে। শুধু গার্মেন্ট শিল্প কারখানা নয়, ৪২টি সেক্টরে ন্যূনতম মজুরি পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।”
শ্রমিকদের প্রতি মালিকের এবং মালিকের প্রতি শ্রমিকদের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যে প্রতিষ্ঠান আপনাদের কাজের সুযোগ করে দিয়েছে, রুটি রুজির ব্যবস্থা করে দিয়েছে; সেই মালিকদের স্বার্থ রক্ষা করা শ্রমিকদের দায়িত্ব। অন্য দিকে শ্রমিকদের ভালো-মন্দ এবং তাদের সুবিধা দেখার দায়িত্ব মালিকদের। “যে প্রতিষ্ঠান আপনাদের কাজের সুযোগ করে দিয়েছে, রুটি রুজির ব্যবস্থা করে দিয়েছে, সেখানে আপনাদেরও যেমন দায়িত্ব আছে, সেই সাথে মালিকদেরও দায়িত্ব আছে যে শ্রমিকরা তাদের শ্রম দিয়ে, উৎপাদন বাড়িয়ে, জীবন জীবিকাকে উন্নত করা বা বিলাসবহুল জীবন যাপন করার সুযোগ করে দিচ্ছে। তারা বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের দিকে বিশেষ নজর দেবে, সেটাই আমি চাই। বিলাসিতা কিছুটা ছেড়ে দিয়ে শ্রমিকদের দেখবেন।”
মালিক-শ্রমিক সুসম্পর্কের মাধ্যমে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দেশটা আমাদের সকলের। এ দেশ যত উন্নত হবে, ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে। কারখানা মালিকরা নতুন নতুন বাজার পাবে, তারা লাভজনক হবে। আমাদের শ্রমিকরাও ভালো জীবন পাবে।” জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে সকলকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “শ্রমিকরা নিরাপদে, সুষ্ঠু পরিবেশে কাজ করবে। তাদের জীবনমানের উন্নয়ন হবে। কোনো বৈষম্য থাকে না। বৈষম্যহীন একটা সমাজ আমরা চাই। এভাবে শ্রম আর মাটি, মানুষদের নিয়েই আমরা এগিয়ে যাব, বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াব।”
শ্রমিকদের কল্যাণে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “১৯৯৬ এ আমি প্রথমেই গার্মেন্ট শ্রমিকদের খবর নিয়েছি, একজনকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, তাদের বেতন কত, মাত্র আটশ টাকা। আমরা ক্ষমতায় এসেই বেতন বাড়িয়েছি। আমরা যতবারই এসেছি, বেতন বাড়িয়েছি। আমাদের যে লক্ষ্য, শ্রমিকদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা এবং যারা বিদেশে যায়, তাদেরও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা আমরা এক এক করে করে যাচ্ছি।
“কারণ আমরা চাই আমরা দক্ষ জনশক্তি গড়ে উঠুক। শিক্ষা দীক্ষায় কারিগরি প্রশিক্ষণে আমাদের কেউ পিছিয়ে থাকবে না। সেটাই আমাদের লক্ষ। আর শ্রমিকের সব ধরনের সুযোগ সুবিধার জন্য সব ধরনের চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।” শ্রমিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি জানি, আমাদের দেশে কিছু ভাড়াটে লোক আমি বলব, কথায় কথায় তারা শ্রমিকদের নিয়ে রাস্তায় নামার চেষ্টা করে। (যে কারখানা) শ্রমিকদের ভাত কাপড়ের ব্যবস্থা করছে, কাজের ব্যবস্থা করছে, জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করছে, সেই কারখানা নিজেরা যদি ধ্বংস করতে চায়, ভাঙচুর করে আগুন দেয়, সেই ধরনের কাজ যদি করে, তাহলে ক্ষতি কার হচ্ছে।“নিজের ক্ষতি হচ্ছে পরিবারের ক্ষতি হচ্ছে। মালিকদেররও ক্ষতি হচ্ছে। মালিকদেরতো একটা ব্যবসা থাকে না, তারা অন্য ব্যবসা থেকে পুষিয়ে নিতে পারে। তাহলে ক্ষতি কার হচ্ছে? নিজেদের ক্ষতি হচ্ছে।”