বরগুনায় রাস্তা নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম সারোয়ার টুকুর শ্যালকের বিরুদ্ধে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নের বরগুনা সদর উপজেলার কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের জাকিরতবক থেকে সিকদার বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ শুরু হয়। ঠিকাদার চুক্তিপত্রে উল্ল্যেখিত শর্ত অনুযায়ী নির্মাণকাজ না করায় গত সোমবার দুপুরে সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ করে দেন সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান।
ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ গুগল নিউজ অনুসরণ করুন
সদর উপজেলা সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় গ্রামীণ মাটির রাস্তা সমূহ টেকসই করার লক্ষ্যে হেরিংবোন (এইচবিবি) করন এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করা হয়। রাস্তা নির্মাণে প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৬ লক্ষ ৬২ হাজার ৭০০ টাকা। কাজটি পেয়েছেন সাংসদ গোলাম সারোয়ার টুকুর শ্যালকের “ইকবাল কন্সট্রাকশন” নামের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিম্ন মানের ইট-বালি ব্যবহার করে রাস্তাটি তৈরি করা হচ্ছে। স্থানীয়রা কাজ শুরু থেকে অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেও সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকুর শ্যালক হওয়ায় ভয়ে কেউ কোন প্রতিবাদ করার সাহস করছে না। স্থানীয়রা জানান, ৮” ইঞ্চি বালু দেওয়ার কথা থাকলেও অনেক জায়গায় মাটির উপর ইট বিছানো হচ্ছে। রাস্তার পাশে পুকুর থাকা সত্ত্বেও গাইড ওয়াল তৈরি করা হয়নি। এতে রাস্তা ভেঙে পুকুরে বিলিন হবে। একাধিক জায়গায় পাইপ কালভার্ট প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও দেওয়া হয়নি পাইপ কিংবা কালভার্ট। কোথাও ব্যাবহার করা হয়নি (আরসিসি) ড্রেন । নতুন মাটি দিয়ে রাস্তা তৈরি করায় অনেক জায়গায় ড্রামশিট ব্যবহার করা দরকার থাকলেও ব্যবহার করা হয়নি। স্থানীয়রা আরো বলেন, মার্চের ২৩ তারিখ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত অর্ধেক কাজও বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এছাড়াও রাস্তার বেডলাইন তৈরি করেছে বেকু দিয়ে, কিন্তু শিকড় উপড়ে ফেলা হয়নি। বালু ঠিকমত দেয়নি, এমনকি বালু পানি দিয়ে ভেজানোও হয়নি। এমন ভাবে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে, যাতে বৃষ্টি এলেই রাস্তা দুই পাশে ভেঙে পড়ে যাবে।
এবিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য কবির মিয়া বলেন, “কাজ শুরু থেকে অনিয়ম করছে এই ঠিকাদার। রাস্তাটি ঠিকমত খনন না করেই পুকুর থেকে (বোমা) ড্রেজার দিয়ে বালু তুলে রাস্তায় দিতে চায়, আমাদের বাধার মুখে সেটা করতে পারেনি। তবে এমন ইট ব্যবহার করছে যার উপর দিয়ে একটা গাড়ি গেলে ভেঙে যাবে। এত টাকার রাস্তা এভাবে কাজ করে আমি কোথাও দেখিনি, কোথাও কিছু বলতে গেলে সবাই বলে সংসদ সদস্যর শ্যালক। আমরা চাই আমাদের রাস্তার কাজটি ঠিকমত করে দেওয়া হোক।
এদিকে নিন্ম মানের ইট ক্রয়ের কথা জানিয়েছেন ইটভাটার মালিক ফরিদ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “আমার ইটের ভাটা থেকে যেই ইট কিনেছে আমি সেই ইট পাঠিয়েছি। আমার কাছ থেকে ছয় হাজার টাকা দামের ইট কিনেছে, এখন আমি কি ১১ হাজার টাকা দামের ইট দেব?”
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধাকারী ও সাংসদ টুকুর শ্যালক ইকবাল রিফাত বলেন, “কাজ শুরু করতে লেট হয়েছে, তাই এখনো শেষ করতে পারিনি।” নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি আরো বলেন, “আমাকে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) যেভাবে করতে বলেছেন আমি সেভাবেই করছি।”
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার সুযোগ নেই, আমি বিষয়টি শুনেছি এবং কাজ বন্ধ করে দিতে বলেছি। কাজটি যেহেতু আমাদের মাননীয় সংসদ সদস্য মহোদয়ের শ্যালক করছেন, আমি তাকেও জানিয়েছি তিনিও বলেছেন নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ করার সুযোগ নেই।
এদিকে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এই প্রতিবেদকে নানান ভাবে নিউজ না করতে হুমকি প্রদান করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্টরা।