চালের বস্তায় জাত ও দাম লিখতে গড়িমসি

চালের বাজার সহনশীল ও দাম যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে বস্তায় ধানের জাত ও মূল্য লেখার যে নির্দেশনা খাদ্য মন্ত্রণালয় দিয়েছিল তা এখনো কার্যকর হয়নি। নির্ধারিত সময় পার হওয়ার দুদিন পর মিল মালিক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন ধান ওঠার আগে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এর জন্য আরও অন্তত এক মাস সময় চাইছেন তারা। মন্ত্রণালয়ে এর জন্য আবেদনও করেছেন।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) সরজমিন ঘুরে ও রাইস মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা কার্যকর করা তাদের পক্ষে এখনো সম্ভব হয়নি। আরও এক মাসের মতো সময় লাগবে এই নির্দেশনা কার্যকর করতে। মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশনার ব্যত্যয় ঘটলে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। নির্দেশনায় বলা হয়, চালের বস্তায় ধানের জাত ও মিল গেইটের মূল্য লিখতে হবে। সেই সঙ্গে লিখতে হবে উৎপাদনের তারিখ ও প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের নাম। উল্লেখ করতে হবে প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের অবস্থানও (জেলা ও উপজেলা)। ওজনের তথ্যও থাকতে হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পরিপত্র বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, “চালকল মালিকরা সময় চেয়ে আবেদন করেছেন। মন্ত্রীর সঙ্গেও কথা হয়েছে। সময় কিছুদিন বাড়ানো হতে পারে। তবে এখনই কনফার্ম করতে পারছি না।” ২১ ফেব্রুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসমাইল হোসেনের স্বাক্ষর করা নির্দেশনায় বলা হয়, সম্প্রতি দেশের চাল উৎপাদনকারী কয়েকটি জেলায় পরিদর্শন করে নিশ্চিত হওয়া গেছে বাজারে একই জাতের ধান থেকে উৎপাদিত চাল ভিন্ন ভিন্ন নামে ও দামে বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম অযৌক্তিক পর্যায়ে গেলে বা হঠাৎ বৃদ্ধি পেলে মিলার, পাইকারি বিক্রেতা, খুচরা বিক্রেতা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। এতে ভোক্তারা ন্যায্যমূল্যে পছন্দমতো জাতের ধানের চাল কিনতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ অবস্থার উত্তরণের লক্ষ্যে চালের বাজারমূল্য সহনশীল ও যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে ধানের নামেই যাতে চাল বাজারজাতকরণ করা হয় তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে এবং এ সংক্রান্ত কার্যক্রম মনিটরিংয়ের সুবিধার্থে নির্দেশনায় কয়েকটি বিষয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে- চালের উৎপাদনকারী মিল মালিকদের গুদাম থেকে বাণিজ্যিক কাজে চাল সরবরাহের প্রাক্কালে চালের বস্তার ওপর উৎপাদনকারী মিলের নাম, জেলা ও উপজেলার নাম, উৎপাদনের তারিখ, মিল গেইট মূল্য এবং ধান/চালের জাত উল্লেখ করতে হবে। বস্তার ওপর এসব তথ্য হাতে লেখা যাবে না।

চাল উৎপাদনকারী মিল মালিকের সরবরাহ করা সব ধরনের চালের বস্তা ও প্যাকেটে ওজন (৫০/২৫/১০/৫/১) উল্লেখ থাকতে হবে। করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা প্রতিপালন করতে হবে। এক্ষেত্রে মিল গেইট দামের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠান চাইলে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য উল্লেখ করতে পারবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুদ, স্থানান্তর, পরিবহন, সরবরাহ, বিতরণ, বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) আইন, ২০২৩-এর ধারা ৬ ও ধারা ৭ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আইনটির ধারা ৬-এর অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত করার সুযোগ রয়েছে। আর ধারা ৭-এর শাস্তি হিসেবে রয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পরিপত্রের আলোকে সব জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক, খাদ্য পরিদর্শকরা পরিদর্শনকালে এ বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।

 

শেয়ার করুন:

Recommended For You