পুণ্যস্নান ও নানান ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শনিবার(৬এপ্রিল) অনুষ্ঠিত হল উপকূলীয় সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সোনার মোড় নামক স্থানে ইতিহাস খ্যাত যমুনা ও ইছামতি নদীর সংযোগ স্থলে ঐতিহ্যবাহী ১৩৩তম বারুণীর উৎসব।
বারুণীর উৎসব উপলক্ষে খুব সকাল থেকে জেলার শ্যামনগর, কালিগঞ্জ, আশাশুনি সহ অন্যান্য উপজেলা থেকে পুণ্যার্থীরা মৃত যমুনাকুলে এসে উৎসবে অংশ গ্রহণ করেন। এ সময় দেখা যায় যাদেও মানত ছিল তাদের অনেকে গঙ্গা দেবীর মূতি নিয়ে মন্ডপ স্থলে পুন্যোর আশায় আসেন।বহু ভক্ত বৃন্দ বা পুণ্যার্থীরা মৃত প্রায় যমুনা কুলে স্নান করেন বা স্নান করার উদ্দেশ্য নিয়ে আসেন।
উৎসবের পুরোহিত দিলীপ চক্রবর্তী জানান, চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণ ত্রয়োদশ তিথিতে বারুণী উৎসবে বিভিন্ন এলাকার ব্রাক্ষèণ সমাজের অনেক ব্যক্তি এসে পুজা অর্চনা করেণ বা করে থাকেন। বিভিন্ন পুণ্যার্থীগণ মাসিক, বাৎসরিক, শ্রাদ্ধকার্য ব্রাক্ষèণদের মাধ্যমে সমাপ্ত করে থাকেন। এছাড়া গোকিস্তি সহ অন্যান্য ধর্মীয় কার্য সম্পাদন করেন।
বারুণী উৎসব আয়োজক কমিটির প্রধান বরুণ কুমার ঘোষ বলেন এ বছর ১৩৩তম বারুণীর উৎসব চলছে। তিনি উৎসব স্থলে পুজা অর্চনার জন্য পাকা বেদী বা পাকা মন্দির নির্মান, যমুনা নদী পুনঃখনন, যমুনার ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করার ব্যাপারে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট সুদৃষ্টি কামনা করেন।
পুণ্যার্থী শিক্ষিকা লিপিকা রায়, গৃহবধু সুচন্দনা মন্ডল, সন্নাসী ভরত চন্দ্র, রাধা পদ মন্ডল সহ অনেকে জোর দাবী দিয়ে বলেন হিন্দু ধর্মের বড় উৎসবের একটি বারুণী উৎসব। এই উৎসবের প্রধান অংশ পুণ্যা ¯œান। কিন্ত মৃত প্রায় যমুনা নদীতে স্থানীয়রা ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরাট করা সহ র্দুঘন্ধ বাহির হওয়ায় বারুণীর উৎসবে বসার পরিবেশ ও ¯œান করার পরিবেশ নাই। এ ব্যাপারে পুণ্যার্থীরা প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেছেন।
জানা যায়, বারুণীর উৎসবকে কেন্দ্র করে শত শত লোক যমুনায় পুণ্য ¯œান করেন। কিন্ত এবার যমুনা নদীর পরিবেশ ভাল না থাকায় অনেকের ¯স্নান করার ইচ্ছা থাকলেও করতে পারেননি। পুণ্যার্থীরা যমুনা নদীর কুলে ¯œান করার পর নারীদের কাপড় পরিধানের জন্য একটি ঘর নির্মান, বিশ্রামাগার নির্মানেরও দাবী জানান।
পুরোহিত দিলীপ চক্রবর্তী ,বিবেকানন্দ মুখ্যার্জী বলেন ঐতিহ্যবাহী বারুণীর উৎসব আয়োজক ঘোষ পরিবার। এ ব্যাপারে আয়োজক কমিটির প্রধান বরুণ ঘোষ বলেন তার ঠাকুর দাদা স্বর্গীয় সনাতন ঘোষ বারুণীর উৎসব শুরু করেন। এর পর তার পিতা দিব্য চরণ ঘোষ বারুণীর পুজা অর্চনা করেছেন। বর্তমানে তার ছেলে বরুণ ঘোষ বারুণীর উৎসব চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বারুণীর মেলায় অতীতের ন্যায় মৃৎ ,বাঁশ, বেত, তালপাতা, লোহা, মাটির তৈরী শিল্প কর্ম সহ বিভিন্ন প্রকার হস্তশিল্প জাত দ্রব্যের সমাগম ঘটে। তবে অতীতের ন্যায় বাইচকোপ, পুতুল নাচ, যাত্রা সহ অন্যান্য বিনোদন মুলক উৎসব এখন পালিত হয়না। মেলায় আগত ৫০ বছর বয়সী রবীন্দ্র নাথ, কিনু চরণ বলেন এ মেলা আগে মাস ব্যাপী চলত নয় পনের দিন ব্যাপী চলত। মেলাকে কেন্দ্র করে যাত্রা, পুতুল নাচ, সিনেমা এসব চলত। মেলাটি শুধু হিন্দু ধর্মা লম্বীদের নয় সকল ধর্মের মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে আসেন।
শ্যামনগর বারুণীর মেলা উপলক্ষে সাতক্ষীরা-৪ আসনের এমপি পরিদর্শন করেন এবং পুর্ণাথীদের সাথে মতবিনিময় করেন। তিনি মতবিনিময়কালে যমুনা নদীর অবস্থা দেখে তাৎক্ষণিকভাবে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের সাথে কথা বলেন এবং তাকে দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শ্যামনগর ভারপ্রাপ্ত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রভাষক সাঈদ উজ সাঈদ, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান খালেদা আইয়ুব ডলি, ঈশ^রীপুর ইউপি চেয়ারম্যান এ্যাড, জি এম শোকর আলী প্রমুখ।
তবে মেলায় আগত পুণ্যার্থীবৃন্দ দাবী করেন উৎসব সংলগ্ন স্থানে স্বাস্থ্য সম্মত স্যানটিারী ল্যাট্রিন স্থাপনের। লোকজ সংস্কৃতির অংশ হিসাবে নানান আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে আসছে শতাধিক বছরের ঐতিহ্যবাহী এ গ্রামীণ মেলা ও উৎসব।