নওগাঁর আত্রাই উপজেলার হাটকালুপাড়া দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও সভাপতি বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্য, অনিয়ম, দুর্নীতি ও প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে।
প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় স্বেচ্ছাচারিতা করে ৩টি পদে নিয়োগের নামে প্রায় ৪৫ লাখ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য এবং চাকুরি দেওয়ার নামে বিপুল পরিমান টাকা নিয়ে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অনিয়ম নিয়ে প্রতিবাদ করায় চাকরি প্রত্যাশী ভুক্তভোগিদের হয়রানি করারও অভিযোগও পাওয়া গেছে।
অভিযোগ সূত্র ও সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, চলতি মাসের ( ৩০ মার্চ) শনিবার নিরাপত্তা কমী, আয়া এবং পরিচ্ছন্নতা কর্মী পদে নিয়োগ পরিক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মোট অংশগ্রহণ করেন ১৪জন পরীক্ষার্থী। যে ৩জন নিয়োগ পেয়েছেন তাদের কাছে থেকে মোট ৪৫লাখ টাকার নিয়োগ বানিজ্য করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া চাকুরী পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বেশ কয়েকজনের কাছে মোটা অংঙ্কের টাকা নিয়েও নিয়োগ না দিয়ে টাকা ফেরত দিতে টালবাহলা করছেন মাদ্রাসা সুপার আবুল হোসেন ও সভাপতি আজাদ হোসেন কবিরাজ।
স্থানীয় হাটকালুপাড়ার আকরাম হোসেন বলেন, আমি মাদ্রাসায় নিরাপত্তাকর্মী পদে আবেদন করেছিলাম। তারপর মাদ্রাসা সুপার আবুল হোসেন ও সভাপতি আজাদ হোসেন কবিরাজ আমাকে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ১০লাখ নেয়। কিন্তু নিয়োগ পরিক্ষা দেওয়ার পর জানতে পারি উক্ত পদে অতিরিক্ত টাকা নিয়ে অন্য একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন। পরবর্তীতে টাকা ফেরত চাইতে গেলে, তারা আমাকে নানাভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। আমি এর সুষ্ঠ সমাধানের দাবি জানাচ্ছি।
শামিমা খাতুন নামের ভুক্তভোগি বলেন, আয়া পদে নিয়োগের জন্য প্রথমে ১লাখ ৯৫হাজার এবং পরবর্তীতে আরও ২লাখ টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু আরও বেশি টাকার বিনিময়ে অন্য একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। টাকা ফেরত চাইতে গেলে আমার পরিবারের মা-বাবাসহ অন্য সদস্যদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন তারা।
ডব্লিউজি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ অনুসরণ করুন
আলমগীর হোসেন নামের আরেক ভুক্তভোগি বলেন, আমি নিরাপত্তাকর্মী পদের জন্য ৩লাখ টাকা দেই সভাপতি ও মাদ্রাসা সুপারের কাছে। পরে জানতে পারি বেশি টাকার বিনিময়ে তারা এই পদে অন্য একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন। বর্তমানে আমার টাকাও ফেরতে দিচ্ছেনা। নিরুপায় অবস্থায় রয়েছি। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় নানা ভাবে ভয় দেখাচ্ছেন আমাকে।
ভুক্তভোগি শামিমার বাবা ইসমাইল আমীন বলেন, এই মাদ্রাসায় আমার কিছু জমিও দান করা আছে। তবুও আমার মেয়ের নিয়োগের জন্য তারা ৩লাখ ৯৫হাজার নিয়েছে। দুঃখের ও পরিতাপের বিষয়- তবুও আমার মেয়ের নিয়োগ হয়নি। তিনটি পদে যাদের নিয়োগ হয়েছে তাদের কাছে থেকে প্রায় ৪৫লাখ টাকার নিয়োগ বানিজ্য করেছে।
স্থানীয় নিজাম উদ্দীন নামের বাসিন্দা বলেন, আকরাম হোসেনের নিরাপত্তাকর্মী পদে নিয়োগের জন্য পরীক্ষার কয়েকদিন আগে রাতের বেলা ১০লাখ টাকা দিয়েছিলেন সভাপতি ও মাদ্রাসা সুপারের কাছে । আমি নিজেই সেসময় সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু তার নিয়োগ হয়নি, টাকাও ফেরত পায়নি। চরম প্রতারণা করেছেন সভাপতি ও মাদ্রাসা সুপার।
অভিযোগ অস্বীকার করে মাদ্রাসার সভাপতি আজাদ হোসেন কবিরাজ বলেন, নিয়ম মাফিক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ছে। যারা যোগ্য তারাই নিয়োগ পেয়েছে। কোন ধরনের প্রতারণা ও দূর্নীতি করা হয়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে মাদ্রাসায় গিয়ে সুপার আবুল হোসেনকে না পাওয়ায় মুঠোফোনে কথা হলে তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, যারা অভিযোগ করছে তারা মিথ্যা কথা বলছে। আমরা কোন ধরনের প্রতারণা ও নিয়োগ বানিজ্য করিনি বলেই এই প্রতিবেদকের ফোনের সংযোগ কেটে দেয়।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ মামুনুর রশীদ বলেন, নিয়োগ বানিজ্য বা প্রতারণার বিষয়ে আমার জানা নেই। কেউ কোন অভিযোগও করেনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।