বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পরিবারের ৬ জনেরই মৃত্যু, বাঁচানো গেল না সোনিয়াকেও

মৌলভীবাজারে বসত ঘরের চালে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পরায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আহত শিশু সোনিয়া সুলতানাও (৮) মারা গেছে। তার আগে একই ঘটনায় তার মা-বাবা ও তিন ভাই-বোন মারা যায়।

বুধবার (২৭ মার্চ) ভোর ৪টার দিকে সোনিয়ার মৃত্যু হয়। সে স্থানীয় গোয়ালবাড়ী উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। সোনিয়ার বাবা-মা ও তিন ভাইবোনেরও বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যু হয়। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে একমাত্র সেই বেঁচে ছিল। এর আগে মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) ভোরে বসতঘরের উপর ঝড় ও বজ্রপাতে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে টিনের পুরো ঘরটি বিদ্যুতায়িত হয়ে পাঁচজনের মৃত্যু হয়। নিহতরা হলেন- ফয়জুর রহমান, তার স্ত্রী শিরি বেগম , মেয়ে সামিয়া , সাবিনা এবং একমাত্র ছেলে সায়েম উদ্দিন । স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাঁদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় আহত শিশু সোনিয়া আক্তার গুরুতর আহত অবস্থায় সিলেট এমএজি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন মঙ্গলবার দিবাগত রাত প্রায় সাড়ে তিন টার দিকে মারা গেছে।

ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ অনুসরণ করুন

সোনিয়ার মামা আব্দুল আজিজ জানান, সোনিয়াকে প্রথমে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার শরীরের ২৫ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। উন্নত চিকিৎসার জন্য মঙ্গলবার রাতে তাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। সেখানে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরই সে মারা যায়। তার লাশ নিয়ে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি।

পূর্বজুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রুয়েল উদ্দিন জানান, নিহত ফয়জুর রহমান একজন বাক প্রতিবন্ধী লোক ছিলেন। তিনি সহ তার পরিবারের পাঁচ জন ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন। পল্লী বিদ্যুতের অবহেলার কারণে ঘটনাটি ঘটেছে। পল্লী বিদ্যুতের আরও ঝুঁকিপূর্ণ লাইন মানুষের বাড়ীর উপর থেকে না সড়ানো হলে এ ধরনের আরো ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পল্লি বিদ্যুৎ মৌলভীবাজার কার্যালয়ের মহাব্যবস্থাপক এ বি এম মিজানুর রহমান বলেন, ছয় জন নিহতদের ঘটনায় আমরা শোকাহত।

আরও পড়ুন শরীরে কনুই লাগাকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষ, আহত ১২

 

জুড়ী থানার ওসি এসএম মইন উদ্দিন জানান, পুলিশ জানিয়েছে, আতঙ্কিত পরিবারের সদস্যরা ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করলে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। সংবাদ পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিভিয়ে লাশ উদ্ধার করে। মৌলভীবাজারের পল্লি বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক এবিএম মিজানুর রহমান বলেন, বিদ্যুতের লাইন বসানোর পর তারের নিচে ঘর করেছিলেন ফয়জুর। তখন আমরা নিষেধ করেছিলাম কিন্তু উনার ঘর করার মতো কোনো জমি ছিল না।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ মনজুর রহমান বিপিএম, পিপিএম (বার) বলেন, এটা একটি মর্মান্তিক ঘটনা। এ ঘটনায় পুরো জেলায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পাঁচজন নিহতের ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হবে। ৬ জনের মৃত্যুর কারণে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। ওই তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আব্দুস সালাম চৌধুরীকে। সদস্য হিসেবে রযেছেন মো. ফজলুল করিম, নির্বাহী প্রকৌশলী, পিডিবি এবং দিপংকর ঘোষ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল)।

গঠিত তদন্ত কমিটি সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবেন। ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম দুর্ঘটনায় মৃত পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মহাব্যবস্থাপক।

 

শেয়ার করুন:

Recommended For You