বরগুনায় এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানকে কাজ পেতে ২৫ লাখ টাকা ঘুস দিয়েও কাজ পায়নি এক ঠিকাদার অতিরিক্ত টাকা নিয়ে অন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার অভিযোগ করছেন সে ঠিকাদার। কাজ না পেয়ে ওই ঠিকাদার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ অনুসরণ করুন
গত সোমবার সকালে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর থেকে একটি টিম বরগুনা এলজিইডি’র অফিসে তদন্ত করতে আসে। জানা যায়, এর আগে গত ৫ মার্চ স্থানীয় সরকারের প্রধান প্রকৌশলী অধিদপ্তর বরাবর ইবাদত কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী শহিদুল হক ইকবাল একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে উল্লেখ আছে, কাজ পেতে সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানকে ২৫ লাখ টাকা উৎকোচ দিয়েছিলেন ইবাদত কনস্ট্রাকশনের স্বত্ত্বাধিকারী শহিদুল হক ইকবাল। উৎকোচ নিয়েও তিনি ঠিকাদার ইকবালকে কাজ না দিয়ে অন্য ঠিকাদারকে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে কাজটি দিয়েছেন। পরে টাকা ফেরত চাইলে সহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান নানা তালবাহানা শুরু করেন। বাধ্য হয়ে লিখিত অভিযোগ করেন শহিদুল হক ইকবাল।
আরও পড়ুন চাকরি দিতে ইবি উপাচার্যকে ১০ লক্ষ টাকার অফার, থানায় জিডি
এলজিইডি অফিস ও ঠিকাদার সূত্রে জানা যায়, ইবাদত কনস্ট্রাকশনের সত্ত্বাধিকারী শহিদুল হক ইকবাল তিনি ১ম শ্রেণির একজন ঠিকাদার। বর্তমানে ইজিপি সিস্টেমে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ করতে হলে ঠিকাদারি লাইসেন্সে পয়েন্ট বেশি থাকতে হবে। তার লাইসেন্সে পয়েন্ট কম থাকায় ঠিকাদার শহিদুল হক ইকবাল মেসার্স বরেন্দ্র কনস্ট্রাকশন লি. লাইসেন্সের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় আম্পান ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লি সড়ক অবকাঠামো পুনর্বাসন শীর্ষক প্রকল্পের কাজে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ওই কাজ চলমান থাকা অবস্থায় আরও তিনটি কাজের মোট একাউন্টের ২% টাকা প্রদান সাপেক্ষে টেন্ডার অনুমোদন ও ওয়ার্ক অর্ডারসহ সবকিছুই করে দিতে সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের সঙ্গে ঠিকাদার ইকবালের সঙ্গে মৌখিক চুক্তি হয়। চুক্তি মোতাবেক গত ফেব্রুয়ারি মাসে সহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানকে ২৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান অন্য ঠিকাদারের কাছ থেকে বেশি কমিশন নিয়ে তাদের নামে একটি কাজ হস্তান্তর করেন। বাকি দুটি কাজও অন্যান্য ঠিকাদারের নামে হস্তান্তর করার পায়তারা চালাচ্ছেন।
শহিদুল হক ইকবাল জানান, আমি দীর্ঘদিন এলজিইডি কাজের সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে আমার অনেক সাইড চলে। আমাকে একটি কাজ পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে বরগুনা এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান প্রায় ২৫ লাখ টাকা ঘুস নেন। কিন্তু আমাকে কাজ না দিয়ে অন্য এক ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। আমার পাওনা টাকা চাইতে গেলে সে নানা ভয়ভীতি দেখান। পরে আমি বাধ্য হয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি। আমি এই প্রতারকের বিচার চাই।
বরগুনা এলজিইডির সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। এ বিষয়ে তদন্ত টিমের প্রধান ও বরিশাল আঞ্চলিক এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার নুরউস সামস বলেন, বরগুনা এলজিইডি সহকারী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে এক ঠিকাদার দুর্নীতি ও অনিয়মের একটি অভিযোগ করেছেন। সেখানে আমাকে প্রধান করে একটি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করেছি। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
বরগুনা এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী সুপ্রিয় মুখার্জী বলেন, এ বিষয়ে একটি স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর বরাবর লিখিত অভিযোগ হয়েছে। সেই অভিযোগের আলোকে একটি তদন্ত টিম কাজ করছেন। তিনি আরও জানান, মূলত অভিযোগ যারা করেছেন তারা বরগুনার কোনো ঠিকাদার না অন্য জেলার। তাছাড়া অভিযোগ যখন করছেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। পরে আমরা বিস্তারিত বলতে পারব।