স্বাধীনতার ৫৪ বছর; দূর্নীতির গ্রাসে জাতির জীবন আজ দূর্বিষহ

আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ৫৪ বছর আগে এই দিন এসেছিল বলেই আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন ভূখণ্ড। 

৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর পাকিস্তানি শাসনের শুরুতেই ভাষার প্রশ্নে একাত্ম হয় বাঙালি।বায়ান্ন পেরিয়ে চুয়ান্ন, বাষট্টি, ছেষট্টির পথ বেয়ে আসে ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান।প্রবল গণ-অভ্যুত্থানে কেঁপে ওঠে তৎকালীন সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুবের মসনদ গণ-অভ্যুত্থানের বিরূপ প্রভাবে ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে মার্চ আইয়ুব খান রাষ্ট্রপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন ২৫শে মার্চ ইয়াহিয়া খান উক্ত পদে আসীন হন। তিনি ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৮শে মার্চ এক ঘোষণায় পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দেন।

৭০-এর ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে।৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের ১৬৯ আসনের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পায় ১৬৭টি আসন বাকি ২টি আসন পায় পিডিপি। ৭ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পর তৎকালীন সামরিক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান ’৭১-এর ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন।কিন্তু তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে ১লা মার্চ উক্ত অধিবেশনটি অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘোষণা করেন। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা বুঝতে পারে, আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও সরকার গঠন করতে দেয়া হবে না। এই সংবাদে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ২রা মার্চ ঢাকায় এবং ৩রা মার্চ সারাদেশে একযোগে হরতাল পালিত হয়।নির্বাচনের ফলাফলের ভিত্তিতে ক্ষমতা হস্তান্তরে সামরিক সরকারের গড়িমসি এবং পশ্চিম পাকিস্তানের প্রধান রাজনৈতিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির সরাসরি অসহযোগিতার কারণেই বঙ্গবন্ধু ৩রা মার্চ পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক বিশাল জনসভায় সমগ্র পূর্ব বাংলায় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ ভাষণটি দিয়েছিলেন। ১০ লক্ষাধিক লোকের সামনে পাকিস্তানি দস্যুদের কামান-বন্দুক-মেশিনগানের হুমকির মুখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে তার ভাষণে বাংলার “ঘরে ঘরে দুর্গ” গড়ে তোলার আহ্বান জানান। ভাষণের শেষে শেখ মুজিব বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” এই ভাষণটিই মূলত বাঙালিদের স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে।

গণহত্যার জন্যে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ তারিখটা বেছে নিয়েছিল কারণ সে বিশ্বাস করত এটা তার জন্যে একটি শুভদিন। দুই বছর আগে এই দিনে সে আইয়ুব খানের কাছ থেকে ক্ষমাতা পেয়ে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হয়েছিল। ২৫ মার্চ রাতে বাংলাদেশের ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম গণহত্যার আদেশ দিয়ে সে সন্ধাবেলা পশ্চিম পাকিস্তানে যাত্রা শুরু করেন তিনি। রাত সাড়ে এগারোটায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী অপারেশন সার্চলাইটের কাজ শুরু করে। শুরু হলো পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাযজ্ঞ, এই হত্যাযজ্ঞের যেন কোনো সাক্ষী না থাকে সেজন্যে সকল বিদেশী সাংবাদিককে দেশ থেকে বের করে দেয়া হয়েছিল। তারপরেও সাইমন ড্রিং নামে একজন অত্যন্ত দুঃসাহসী সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঢাকা শহরে লুকিয়ে এই ভয়াবহ গণহত্যার খবর ওয়াশিংটন পোস্টের মাধ্যমে সারা পৃথিবীকে জানিয়েছিলেন।

ঢাকা শহরের নিরীহ মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে পাকিস্তান মিলিটারি সব বাঙালি অফিসারকে হয় হত্যা না হয় গ্রেপ্তার করে নেয়, সাধারণ সৈন্যদের নিরস্ত্র করে রাখে। পিলখানায় ই.পি. আরদেরকেও নিরস্ত্র করা হয়েছিল, তারপরেও তাদের যেটুকু সামর্থ্য ছিল সেটি নিয়ে সারারাত যুদ্ধ করেছে। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে পুলিশদের নিরস্ত্র করা সম্ভব হয়নি এবং এই পুলিশবাহিনীই সবার আগে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সাথে সত্যিকার একটি যুদ্ধ শুরু করে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী অনেক ক্ষতি স্বীকার হয়ে পিছিয়ে গিয়ে ট্যাংক, মর্টার, ভারী অস্ত্র, মেশিনগান নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করে শেষ পর্যন্ত রাজারবাগ পুলিশ লাইনের নিয়ন্ত্রণ নেয়।

২৫ মার্চের বিভীষিকার কোনো শেষ নেই। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এসে ইকবাল হল (বর্তমান সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) আর জগন্নাথ হলের সব ছাত্রকে হত্যা করল। হত্যার আগে তাদের দিয়েই জগন্নাথ হলের সামনে একটি গর্ত করা হয়, যেখানে তাদের মৃতদেহকে মাটি চাপা দেয়া হয়। এই নিষ্ঠুর হত্যাকান্ডের দৃশ্যটি বুয়েটের প্রফেসর নূর উল্লাহ তাঁর বাসা থেকে যে ভিডিও করতে পেরেছিলেন, সেটি এখন ইন্টারনেটে মুক্তিযুদ্ধের আর্কাইভে সংরক্ষিত আছে, পৃথিবীর মানুষ চাইলেই নিজের চোখে সেটি দেখতে পারি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু ছাত্রদের নয় সাধারণ কর্মচারী এমনকি শিক্ষকদেরকেও তারা হত্যা করে। আশেপাশে যে বস্তিগুলো ছিল সেগুলো জ্বালিয়ে দিয়ে মেশিনগানের গুলিতে অসহায় মানুষগুলোকে হত্যা করে। এরপর তারা পুরানো ঢাকার হিন্দুপ্রধান এলাকাগুলো আক্রমণ করে, মন্দিরগুলো গুঁড়িয়ে দেয়, বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। যারা পালানোর চেষ্টা করেছে সবাইকে পাকিস্তান মিলিটারি গুলি করে হত্যা করেছে। ২৫ মার্চ ঢাকা শহর ছিল নরকের মতো, যেদিকে তাকানো যায় সেদিকে আগুন আর আগুন, গোলাগুলির শব্দ আর মানুষের আর্তচিৎকার।বাতাসে লাশের গন্ধ, বারুদে বারুদে আর ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আকাশ। আকাশে শকুনের উদ্যত থাবা, নিচে বিপন্ন মানুষের বিলাপ।

২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে আটকের আগেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশকে ‘স্বাধীন’ ঘোষণা করে দেশবাসীর উদ্দেশে একটি তারবার্তা পাঠান। ইপিআরের ওয়ারলেস বার্তায় প্রচার করা হয় তার স্বাধীনতার ঘোষণা।

বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণায় বলেছিলেন,
“ইহাই হয়তো আমাদের শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছে, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি দিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।”

বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশ স্বাধীন করার শপথ গ্রহণ করে বাংলার দামাল ছেলেরা।শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধ। দেশকে হানাদার মুক্ত করতে মরণপণ লড়াইয়ে অংশ নেয় ছাত্র,শ্রমিক, কৃষক,পেশাজীবী,-শিল্পীসহ সব শ্রেণির মানুষ।দীর্ঘ ৯ মাসের এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর আসে সেই কাঙ্ক্ষিত বিজয়।পরাজয় মেনে নিয়ে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীরা। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পৃথিবীর বুকে জন্ম হলো ‘বাংলাদেশ’ নামে স্বাধীন রাষ্ট্রের।

পাকিস্তানের কারাগারে ২৯০ দিন থাকার পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে প্রত্যাবর্তন করেন। স্বাধীন ও সার্বভৌম যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তোলার দায়িত্ব নিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সকল প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে যখন একটি শোষণ-বঞ্চনামুক্ত অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ‘সোনার বাংলা’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে তাঁকে পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যসহ নির্মমভাবে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার পর থেমে যায় বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা। শুরু হয় হত্যা, আর ষড়যন্ত্রের রাজনীতি।

দীর্ঘ ২১ বছর পর মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালে ভোটে জয়ী হয়।প্রথমবারের মতো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর টানা ৪র্থ মেয়াদে দেশ পরিচালনা করছে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।আওয়ামী লীগর অন্যতম নির্বাচনি অঙ্গীকার ছিল যুদ্ধাপরাধের বিচার ৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪০বছর পর যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় ৷ স্বাধীনতার ৪০ পর অনুষ্ঠিত হওয়া যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের মাধ্যমে বিচারহীনতার সংস্কৃতি আলোর মুখ দেখতে পায়৷এরপর ট্রাইব্যুনাল থেকে গত এক যুগে ৪৪টি মামলার রায় হয়েছে। এসব মামলায় দণ্ডিত আসামি ১০৬ জন।সাজাপ্রাপ্ত ৫৪ আসামি এখনো পলাতক।ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে শীর্ষ পর্যায়ের সাত আসামির দণ্ড কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আর আমৃত্যু কারাদণ্ড ভোগ করা অবস্থায় মারা গেছেন জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা আবদুল কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান ও মীর কাসেম আলী। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসি কার্যকর হয়েছে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর।

আওয়ামী লীগ সভা নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নয়নের যে স্বপ্ন দেশের মানুষকে দেখিয়ে ছিলেন,সেইস্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তরিত হয়েছে।স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটছে বাংলাদেশের। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে মহাকাশ বিজয়, সাবমেরিন যুগে প্রবেশ, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, পদ্মা রেল সেতু নির্মাণ, মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি একদিনে ১০০ সেতুর উদ্বোধন, ১০০ মহাসড়ক-সড়ক উদ্বোধন,এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, মাথাপিছু আয় ২ লাখ ৭৩ হাজার ৩৬০ টাকা উন্নীতসহ যুগান্তকারী সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।যার কৃতিত্ব বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

তবে স্বাধীনতার ৫৪ তম বছরে এসে এতো উন্নয়ন অগ্রযাত্রার পরে কিছু কথা না বললেই নয়। দূর্নীতির করাল গ্রাসে জাতির জীবন আজ দূর্বিষহ।বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, অর্থপাচার চলমান। বেকারত্বের হার বেড়েছে, দেশে শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর প্রায় ৪৭ ভাগ বেকার।দেশে জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। নারী-পুরুষে বৈষম্য, আঞ্চলিক বৈষম্য। মানুষের আয় যেভাবে বাড়ছে, তার তুলনায় ব্যয় বাড়ছে তীব্রগতিতে। ব্যয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আয় বাড়ছে না। অনেককে সঞ্চয় ভেঙে দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে হচ্ছে। নিম্নবিত্তের মানুষ সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পেলেও বাড়তি ব্যয়ের চাপে পিষ্ট মধ্যবিত্তরা। জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে তাদের নাভিশ্বাস অবস্থা। শাকসবজি থেকে শুরু করে সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম লাগামহীন। দেশে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি যেমন বেড়েছে তেমন ভাবে মাথাপিছু ঋণও বেড়েছে। দারিদ্র্য কমলেও আয় বৈষম্য বেড়েছে লাগামহীনভাবে। দারিদ্র্য কমে যাওয়া যেমন সুসংবাদ, আয় বৈষম্য বেড়ে যাওয়া কিন্তু একইভাবে দুঃসংবাদ।

নারী শিক্ষা ও নারী ক্ষমতায়নে সরকার জোর দিলেও কমাতে পারেনি নারী নির্যাতন।প্রতিনিয়ত ঘরে-বাইরে নানাভাবে নির্যাতিত-নিগৃহীত হচ্ছে নারী।বর্তমানে পরিবারের সদস্য,বন্ধু,প্রেমিক,শিক্ষক,কর্মস্থলের সহকর্মী ও গৃহকর্তা-কর্ত্রী, কারো কাছেই যেন নিরাপদ নয় নারী-শিশু। নারী ও শিশু নির্যাতনের কঠিন আইন বাংলাদেশে বিদ্যমান। কিন্তু সেগুলোর যথাযথ প্রয়োগ নেই। বিচারের দীর্ঘসূত্রতা, আইনের শাসনের অকার্যকারিতা, প্রভাবশালীদের হস্তক্ষেপ প্রভৃতি কারণে আজও নারী ও শিশু ধর্ষণ বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না।বন্ধ হয়ে গেছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা।এখন”সাদা কে সাদা,কালো কে কালো”বলতে ভয় পায় কবি,সাহিত্যিক,সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টানা ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকার পরেও ,দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ও বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলছে সমাজের চিহ্নিত কীট উগ্র মৌলবাদীরা।পুলিশ প্রশাসন তাদের চালিয়ে দিচ্ছে দুর্বৃত্ত বলে।মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে অস্ত্র ধরা জামায়াতে ইসলামী এখনো চোখ রাঙাচ্ছে রাজপথে নেমে। দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলা হয়।নির্যাতিত-নিগৃহীত হয় বাউল, কবি, সাধক, পল্লিকবি, স্বভাবকবিরা । দেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতা ও অপকর্ম আজও চলমান। স্বাধীনতা বিরোধীরা এখনও নানা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে দেশে ও বিদেশে।

স্বাধীনতা দিবসের এই দিনে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আসুন আমরা ঐক্যবদ্ধ হই সাম্প্রদায়িকতা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, নৈরাজ্য, ষড়যন্ত্র,দুর্নীতি, নারী নির্যাতন ও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে।

লেখক; রাকিবুল ইসলাম                   

সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিককর্মী।               

শেয়ার করুন:

Recommended For You