জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় আটক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে পুলিশ।
রোববার (১৭ মার্চ) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ড. খ. মহিদ উদ্দিন। ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাইরুজ অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে পুলিশ।
ডব্লিউ জি নিউজের সর্বশেষ খবর পেতে https://worldglobal24.com/latest/ অনুসরণ করুন
তিনি বলেন,ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্তরা নজরদারিতে ছিলেন। কুমিল্লার কোতোয়ালী থানায় একটি মামলা হওয়ার পর তাদের আটক করা হয়। তাদেরকে কুমিল্লা জেলা পুলিশের রোববার হস্তান্তর করা হয়েছে। মামলার তদন্তে এখন তারা বিশদভাবে খতিয়ে দেখবেন। তিনি আরও বলেন,প্রাথমিকভাবে তারা আমাদের ঘটনার খণ্ডিত অংশ জানিয়েছে। তদন্তের আগে পূর্ণাঙ্গ অংশ বলা সম্ভব না। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে এ ঘটনায় তাদের সংশ্লিষ্টতা আছে। তবে গভীরতা কতখানি বা তাদের কার দিকে কত দায় সেটি এখনই বলা যাচ্ছে না।
আরও পড়ুন বাবার পাশেই দাফন হবে জবি ছাত্রী অবন্তিকার
জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা : সহকারী প্রক্টর ও সহপাঠীকে সাময়িক বহিষ্কার
এর আগে, গতকাল (১৬ মার্চ) রাতে কুমিল্লা কোতোয়ালি মডেল থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম একটি মামলা দায়ের করেন। এজাহারে অবন্তিকার মা উল্লেখ করেছেন, ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকা (২৪) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ছিল। আমার মেয়ে মেধা তালিকা অনুসারে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে সিট পায়। অবন্তিকা আমাকে জানায়, তার ক্লাসমেট রায়হান সিদ্দিক আম্মান বিভিন্ন মাধ্যমে তাকে যৌন হয়রানিমূলক নিপীড়ন দেয় ও বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে জানানোর পরও তিনি আম্মানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো আম্মানের পক্ষ নিয়ে আমার মেয়েকে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেন। এজন্য আমার মেয়ে হোস্টেলে থাকাটা নিরাপদ মনে না করে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে ছাত্রীদের মেসে থাকা শুরু করে। ‘কিন্তু তাতেও অভিযুক্ত দুজন ক্ষান্ত হননি। তারা অবন্তিকার কয়েকজন ক্লাসমেটের মাধ্যমে তার চলা ফেরার প্রতি নজর রাখতে শুরু করে। তাদের মাধ্যমেও আমার মেয়েকে বিভিন্ন মাধ্যমে মানসিক নিপীড়ন দিতে থাকে।
ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
জবি শিক্ষার্থী অবন্তিকার আত্মহত্যা : তদন্ত কমিটির প্রথম সভা আজ
এরই মধ্যে গত ১৪ মার্চ অবন্তিকা কুমিল্লার বাসায় চলে আসে। অন্যমনস্ক অবন্তিকা আমাকে জানায়, যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেল ছেড়ে মেসে উঠেছিল সে সমস্যা আরও প্রকট হয়েছে। অর্থাৎ বিবাদী রায়হান সিদ্দিক আম্মান আগের চেয়ে আরও বেশি পরিমাণে আমার মেয়ের সঙ্গে যৌন হয়রানিমূলক কুরুচিপূর্ণ আচরণ করছে।’ তাহমিনা বেগম দাবি করেন, ‘সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম আম্মানের পক্ষ নিয়ে আমার মেয়েকে ৬ থেকে ৭ বার অফিসে ডেকে অপদস্থ করেন। মেয়ে কুমিল্লা চলে আসলেও তাকে খারাপ মেয়ে হিসেবে প্রচার করবে, যেন আমার মেয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। এসব কারণে আমার মেয়ে কুমিল্লা নগরীর বাঁগিচাগাও বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে।’
এদিকে জবির উপাচার্য ড. সাদেকা হালিম বলেছেন, অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন দেবে। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে কুমিল্লার বাগিচাগাওয়ের নিজ বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা। এর আগে তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে তাঁর মৃত্যুর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও তাঁর সহপাঠী আম্মানকে দায়ী করেন। অবন্তিকার মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই দায়ীদের বিচারের দাবিতে উত্তাল হয়ে ওঠে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
ডব্লিউ জি /এমএলএইচ