প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরও প্রথম রমজান থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী অংশে গাড়ি চালক, শ্রমিক ও পথচারীদের মাঝে তৈরিকৃত ইফতার বিতরণ করছেন ফেনী পৌরসভার মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী। এই আয়োজনে জেলাজুড়ে ব্যাপক
প্রশংসায় ভাসছেন তিনি।
বুধবার (১৩ মার্চ) ২য় রমজানে আসরের নামাজের পর থেকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে বাস, ট্রাক, মাইক্রো বাস, মিনি ট্রাক, সিএনজি ও পথচারীদের হাতে তৈরিকৃত ইফতার সামগ্রী তুলে দেন তিনি।
ইফতার সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম নিয়ে পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী বলেন, বিগত আট বছর যাবত আমার নিজ উদ্যোগে রোজাদারদের জন্য ইফতারের আয়োজন করছি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পরিবহন চালক শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে এই ইফতার সামগ্রী বিতরণ কারছি। একজন রোজাদারকে ইফতার দিতে পেরে নিজের মাঝে যে আনন্দ তৃপ্তি পাওয়া যায় যা অন্য কিছু করে পাওয়া যায় না।
মেয়র আরো বলেন, প্রথম রমজানে আমরা ৫শ প্যাকেট দিয়ে শুরু করেছি। রমজান যত বাড়ে ততই প্যাকেটের পরিমাণও বাড়ে। ৫শ থেকে শুরু হয়েছে কয়েকদিন পরে ১ হাজার এরপর ১৫শ প্যাকেট পর্যন্ত আমরা এখানে বিতরণ করি। যত বেশি চাহিদা হবে তত বেশি আমরা দিব। যাতে করে কোনো মানুষ খালি হাতে না যায়।
সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মেয়র বলেন, আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস দেখে সমাজের বিত্তবানরা যদি এগিয়ে আসে তাহলে সমাজের অসহায়, হতদরিদ্র, নিম্নআয়ের মানুষ উপকৃত হবে। তাহলে আমার ইফতার দেওয়া শতভাগ সফল হবে এবং বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলের মানুষ অনাহারে ও কষ্টে দিন কাটবে না।
ইফতার পরিবেশনে থাকা মাঈন উদ্দিন সুমন বলেন, মেয়র স্বপন মিয়াজীর নিজ অর্থায়নে প্রতিদিন ৫ শ থেকে ১ হাজার রোজাদারদের ইফতার দেন তিনি। ইফতারের প্রতিটি প্যাকেটে রয়েছে খেজুর, চনাবুট পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ, জিলাপি, মুড়ি, পানি। এছাড়াও প্রতি শুক্রবারে (স্পেশাল হিসেবে) গরুর মাংস দিয়ে বিরিয়ানি দেওয়া হয়। মানুষ অধীর আগ্রহ নিয়ে এখান থেকে ইফতার গ্রহণ করেন।
ফেনীর মহিপালে ইফতার সামগ্রী বিতরণ করে মানবিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে পৌর মেয়র। তার এই উদ্যোগ অনেক প্রশংসনীয়। তার এই মানবিকতা দেখে সমাজের বিত্তবানরাও এগিয়ে আসবে বলে মনে করেন ফেনী শহর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজুল ইসলাম হাজারী।
শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পরিবহন চালক শ্রমিক নয় আশপাশের মসজিদ,মাদ্রাসা ও সড়কে পথচারীদের মাঝেও তিনি তৈরিকৃত ইফতার তুলে দেন। এছাড়া প্রতিদিন অসহায়, হতদরিদ্র ও নিম্নআয়ের মানুষরা তার ব্যক্তিগত অফিসের সামনে বসে ইফতার করেন। ইফতারের পরে রোজাদারদের জন্য চা চক্রেরও আয়োজন করেন তিনি। আর এসব চা চক্র আয়োজন চলে রাত দশটা পর্যন্ত। ইফতার ও চা চক্রে অংশগ্রহন করতে পেরে খুশি হাজারো মানুষ।
শহরের সহদেবপুর থেকে ইফতার নিতে এসেছেরদন আবদুল করিম। তিনি বলেন, গত কয়েক বছর রমজানের ইফতার আমি এখান থেকে নিয়েছি। এই বছরও মেয়রের দেয়া ইফতার নিতে। আমার পরিবারের সবাইকে নিয়ে এই ইফতার করি।
ঔষধ কোম্পানির গাড়ী চালক আবদুল মোতালেব বলেন, কোম্পানির মাল বিক্রি করে প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে যাই। মাল বিক্রি শেষে ফেরার পথে মেয়াদের দেয়া ইফতার নিয়ে যাই। সারাদিন পরিশ্রম করে ইফতার তৈরি করা সম্ভব হয়না। ত্রিশ রমজানের মধ্যে প্রায়সব রমজানের ইফতারি এখান থেকে নিয়ে করি। এখন আর ইফতার নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না।
চট্টগ্রাম থেকে বাসে করে ঢাকা যাচ্ছিলেন কাসেম আলী। ফেনীতে এসে বাসের জানালা দিয়ে একটি ইফতারের প্যাকেট হতে পেয়ে অনেক খুশি তিনি অনেক উৎফুল্ল কন্ঠে চিৎকার করে মেয়র স্বপন মিয়াজীকে বলেন, ইফতার করা নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় ছিলাম কখন কোথায় করব ইফতার। এখন আর চিন্তা নেই নিরাপদে পরিবহনে বসেই ইফতার করতে পারব। তখন মেয়র প্রতি উত্তরে বলেন আপনাদের জন্যই এই ইফতার।
ট্রাক চালক জব্বার আলী বলেন, রাস্তায় দাঁড়িয়ে ইফতার করতে অনেক সমস্যা হয়। সময় ও ইফতার কোনটার মিল হয় না। সেজন্য অনেক সময় আমরা পানি দিয়ে ইফতার করি। কিন্তু গত কয়েক বছরে দেখছি মহিপালে আসলে ইফতারের প্যাকেট পাই। প্যাকেটের মধ্যে থাকা ইফতার দিয়ে ইফতার করি। ইফতার করা নিয়ে আর চিন্তা করতে হয় না।
এছাড়াও ফেনী পৌরসভার আয়োজনে পৌর চত্বরে প্রতিদিন ২শ পথচারী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের ইফতার আয়োজন করেন তিনি। এবং পৌরসভার বিভিন্ন জন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে বিনামূল্যে ১০ হাজার লিটার সুপেয় পানি ট্যাংক এর মাধ্যমে বিতরণ করা হয়।