বরগুনার সাংবাদিক তালুকদার মাসউদ হত্যার ঘটনায় মামলার এক সপ্তাহেও কেনো আসামী গ্রেপ্তার না হওয়ায় ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছে নিহতের পরিবার।
মঙ্গলবার (১২ মার্চ) সকাল ৯ টা থেকে বরগুনা জেলা প্রশাসক কাযালয় সামনে সন্তানদের নিয়ে নিহত সাংবাদিক তালুকদার মাসউদের স্ত্রী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেণ। এসময় নিহতের পরিবার আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
তালুকদার মাসউদের স্ত্রী ও মামলার বাদী সাজেদা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের বাংলাদেশে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি থাকার পরেও আমার স্বামীর হত্যাকারিদের এখনো পর্যন্ত পুলিশ গ্রেপ্তার করতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘আমি খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ভোলায় কর্মরত বরগুনার তালতলী উপজেলার বিতর্কিত এক পুলিশ কর্মকর্তা ও বরগুনার চরকলোনী এলাকার বাসিন্দা, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে কর্মরত পুলিশের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা আসামীদের শেল্টার দিয়ে পালিয়ে থাকতে সহায়তা করছে।
সাজেদা অভিযোগ করে বলেন, আসামীরা যেসব গণমাধ্যমে এখনো কর্মরত সেই গণমাধ্যমগুলোও অপরাধ ধামাচাপা দেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। কারণ তারা আমাদের এই ঘটনা নিয়ে কোনো খবর প্রকাশ তো করেইনি, উল্টো এখনও তাদেরকে বহাল রেখে আমাদের ন্যায় বিচার পেতে অসহযোগীতা করছে। বরগুনার জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, ‘ আপনি আমাদের জেলার অভিভাবক। আমি বিনয়ের সাথে জানতে চাই- ‘আমার স্বামীর হত্যাকারিরা কার ছত্রছায়ায় আছে। আমার সন্তানরা আমাকে প্রশ্ন করে-‘ বাবা হত্যাকারিরা এখনো কিভাবে ফেসবুকে নানা উল্লাসের ছবি ছাড়ছে।’ আমাদের দেশেতো অনেক প্রযুক্তি আমার বাবার হত্যাকারিরা ধরা পরছে না কেনো?।
পুলিশ সুপারকে উদ্দেশ্যে করে নিহতের স্ত্রী বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসন কি এতোই দুর্বল যে একজন আসামিকে তারা গ্রেপ্তার করতে পারেনি। যেদিন আমি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, সেইদিন আমার কাছে ২০ লাখ টাকার দিয়ে সমঝোতার জন্য তারা লোক পাঠিয়ে ছিল। এখনো প্রতিদিন প্রেসক্লাবের লোকজন আমাকে টাকার বিনিময়ে সমঝোতার প্রস্তাব দেয় এবং সমঝোতায় না গেলে সমস্যায় ফেলে দেওয়ার হুমকি দেয়। আমি আমার সন্তানদের নিয়ে ভয়ে আছি। আপনি আসামীদের গ্রেপ্তার করে আমাদের সুরক্ষা দিন।’
দুপুর ১২ টার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( সদর সার্কেল ) আবদুল হালিম এসে তালুকদার মাসউদের স্ত্রী সন্তানদের খোঁজ খবর নেন এবং আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে নিহত তালুকদার মাসউদ পরিবার অবস্থান কর্মসুচি সমাপ্ত করে। এরপর তালুকদার মাসউদের স্ত্রী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রন্ত্রী বরাবরে বিচারের দাবিতে স্মারকলিপি পেশ করেন।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১ টার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাবে তালুকদার মাসউদকে বেধড়ক মারধর করা হয়। সেখানে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার তাঁর মৃত্যু হয়।
বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম বলেন, সাংবাদিক মাসউদ তালুকদার হত্যা মামলার আসামিদের ধরতে আমরা অভিযান চালাচ্ছি। আশা করি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো। জেলা প্রশাসক মোহা. রফিকুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিক মারা যাওয়ার ঘটনায় মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে তার পরিবারের অবস্থান কর্মসূ্চি পালন করতে দেখেছি। মামলার আসামিদের পুলিশ গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনবে।