লাখো বাঙালি অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায়, ভাষণে কি বলবেন বঙ্গবন্ধু! ইতোমধ্যে রেসকোর্স ময়দান জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। এদিকে মহকুমা, গ্রামে-গঞ্জে দলে দলে রেডিও নিয়ে বসে ছিলেন স্বাধীনচেতা দেশপ্রেমিক লোকেরা। অবশেষে জনতার সামনে ৭ই মার্চের সেই অমর ভাষণটি দিলেন বঙ্গবন্ধু। ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ‘ সেই ভাষণে গোটা বাংলাদেশের মানুষ মুক্তির সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেই ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ১৯৭১, সেদিন কেমন ছিলো কক্সবাজার? সেসব বীরত্বগাঁথা শুনুন কক্সবাজারের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মুখেই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল হোসেন চৌধুরী সেদিনের স্মৃতি নিয়ে বলেন, আগে থেকেই পাকিস্তান বেতার বন্ধ করে দিয়েছে। ভাষণ প্রচার করা যাবে না। বিবিসি, ভয়েস অফ আমেরিকা, আকাশ বাণী কলকাতা থেকে শুনতে পেলাম ৭ই মার্চের ভাষণ। উত্থাল বাংলাদেশ অধীর আগ্রহে আছে জনতা। স্বাধীনতা ঘোষণা করা হবে, বাংলাদেশ স্বাধীন হবে এমন একটা ধারণা নিয়ে বসেছিলাম। তিনি আসলেন, ভাষণ দিলেন, ভাষণের শেষ কথা ছিল, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো, ইনশাআল্লাহ।’ এ সমস্ত কথার মধ্য দিয়ে আমরা জানতে পারলাম রক্ত দিয়ে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করতে হবে। আমার নেতৃত্বে এখানে ট্রেনিং ক্যাম্প শুরু করলাম। সেদিন তরুণ আওয়ামী লীগার, দেশ প্রেমিক লোকজন নিয়ে একটি বাহিনী গঠন করা হয়, যার নাম দেওয়া হয় ‘জয় বাংলা বাহিনী ৭১’।
বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার সেদিন কক্সবাজারবাসী ভাষণ শোনার সাথে সাথে বিশাল মিছিল নিয়ে বেরিয়ে পড়ার স্মৃতি মনে করে বলেন, বঙ্গবন্ধু রেসকোর্স ময়দানে ভাষণ দিবেন, তিনি কি ইঙ্গিত দিতে পারেন, সেটা নিয়ে আমাদের সিনিয়রদের মাঝে অনেক জল্পনা কল্পনা চলছিল। মাঝে মাঝে ঢাকার সাথে তৎকালীন পুরনো টেলিফোনে আমাদের নেতারা কথা বলতেন। তারা ইঙ্গিত পেয়ে গেছিলেন বঙ্গবন্ধু ৭ই মার্চ এমন একটি ভাষণ দিবেন যার মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতার কক্ষপথে প্রবেশ করব।
বঙ্গবন্ধু ভাষণে এতদিনের দোলাচল শেষ করে দিবেন এটি আমরা বুঝতে পেরেছি। ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ আমরা শুনি কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরির ময়দানে বসে। মাইক লাগিয়ে অনেককে শুনিয়েছি। আমরা শুনেছি রেডিওতে। আমরা প্রস্তুত ছিলাম। ভাষণ শোনার পরপরই হাজার তরুণ স্বাধীনতার স্লোগানে মিছিল নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। রাত ১০টা পর্যন্ত স্বাধীনতার স্লোগানে মিছিল হয় এ শহরে। কক্সবাজার শহরের মানুষকে সেদিনই বুঝাতে পেরেছিলাম ৭ই মার্চের ভাষণ মুক্তির ভাষণ, স্বাধীনতার ভাষণ। আমার ধারণা বাংলাদেশের কয়েক মহকুমা শহরের মধ্যে কক্সবাজার ছিলো অন্যতম সচেতন মহকুমা শহর। তার পরদিনই ৮ মার্চ থেকে এখানে ট্রেনিংই শুরু হয়ে গিয়েছিল।